বিপর্যয় কাটিয়ে মুশফিকের ব্যাটে ভর করে ২৩৮ রান করেছিল বাংলাদেশ। প্রেমাদাসার ব্যাটিং স্বর্গে যেটা ছোট রানই। তবু বোলারদের দিক থেকে দারুণ কিছুর জন্য তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। সফরকারীদের সেই আশায় বালি ছিটিয়ে দেয় লঙ্কানদের উড়ন্ত শুরু। যে গতি শেষ পর্যন্ত ধরে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করার ম্যাচ ৭ উইকেটে জিতে নেয় স্বাগতিকরা।
প্রথম ম্যাচের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলা তো দূরের কথা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারল না বাংলাদেশ। যার ফলে তিন ম্যাচের সিরিজ এক ম্যাচ বাকি থাকতেই হেসেখেলে নিজেদের করে নেয় লঙ্কানরা। ৪৪ মাস পর ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ জিতল তারা।
লো-স্কোরিং ম্যাচ জেতার জন্য শুরুতে যেটা করতে হত তা করতে ব্যর্থ বাংলাদেশ। নিখুঁত লাইন-লেন্থের সঙ্গে উইকেট-টেকিং বোলিং। প্রথম ১০ ওভারে তেমন কোনো বল চোখেই পড়ল না। বরং বোলারদের দিশাহীন বোলিংয়ের সঙ্গে হতাশার সাইজ আরও চওড়া হয় বিশ্রী, কদর্য ও দায়িত্বহীন ফিল্ডিংয়ে। ফিল্ডারদের ‘গণহারে’ ক্যাচ মিস বোলারদের মনোবল ভেঙে দেয়ার সঙ্গে সময়ের আগেই ম্যাচটা তুলে দেয় প্রতিপক্ষের হাতে।
শুরুতে যেখানে রান আটকে রেখে উইকেট দরকার ছিল, সেখানে প্রথম উইকেটের দেখা পেতে লাগল ১১ ওভার। প্রায় সাত গড়ে রান তুলে স্কোরবোর্ডে শ্রীলঙ্কা জমা করে ফেলে ৭১ রান। এসময় দিমুথ করুনারত্নে ফেরেন সাজঘরে।
মেহেদী হাসান মিরাজের বলে বোল্ড হন লঙ্কান অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে করেন ১৫ রান। এ বাঁহাতির বিদায়ে ওপেনিং জুটি ভাঙে ৭১ রানে।
অনেকদিন ধরেই অবশ্য শুরুতে কার্যকর হতে পারছেন না মোস্তাফিজুর রহমান। বিশ্বকাপে ২০ উইকেট পেলেও ইনিংসের অন্তত ৩১ ওভার শেষ হওয়ার আগে কোনো উইকেট নিতে পারেননি। আজও নিলেন সেই ২০ ওভার পর। সিরিজের প্রথম ম্যাচেও দেখা গেছে একই চিত্র।
বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিংয়ের ব্যর্থ তো ছিলই, সঙ্গে যোগ হয় লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের দুর্দান্ত ব্যাটিং। বিশেষ করে আবিস্কা ফার্নান্ডো যেভাবে ব্যাট করেন তাতে বাংলাদেশের বোলারদের মনে হয়েছে অলিগলির বোলার।
দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পেতে লাগল আরও ১০ ওভার। অর্থাৎ একাধিক সুযোগ পাওয়ার পর ২১তম ওভারে ফার্নান্ডো যখন ফিরলেন তখন তার নামের পাশে ৮২ রান। সেঞ্চুরি না পেলেও হয়তো আক্ষেপ নেই তার। কারণ, দলের জন্য যেটা কাজ সেটা তিনিই শতভাগ ঠিকঠাকভাবেই করে যান। যদিও তাইজুলের এক ওভারেই দুবার ‘জীবন’ পান তিনি।
মোস্তাফিজের কার্টার বল পুল করতে গিয়ে মিস-টাইমিং। মিডঅনে দাঁড়িয়ে এবার অবশ্য ‘রস গোল্লার’ মতো সহজ ক্যাচটা হাতছাড়া করেননি তামিম। তবে মোস্তাফিজ যতক্ষণে ফার্নান্ডোকে ফেরালেন তখক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ৪৩ বলে হাফসেঞ্চুরি তোলার পর ৭৬ বলে নয়টি চার ও বিশাল দুই ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান লঙ্কান ওপেনার।
ফার্নান্ডো বেশ চালিয়ে খেলায় এদিন কিছুটা স্বভাব-বিরুদ্ধ ব্যাটিং করেন কুশাল পেরেরা। ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে সতীর্থকে সাহায্য করতে থাকেন প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান। তবে ফার্নান্ডো আউট হলে নিজের আগ্রাসী মেজাজে ফিরতে ফিরতেই সাজঘরে যেতে হয় পেরেরাকে।
মোস্তাফিজের কিছুটা নিচু বল কভার দিয়ে চালিয়ে খেলেছিলেন, কিন্তু এই দফায় সৌম্য সরকারের বিশ্বস্ত হাত ফাঁকি দিতে পারেননি। আউট হওয়ার আগে অবশ্য ৩৪ বলে তিন চারে ৩০ রান করে যান পেরেরা।
ফার্নান্ডো-পেরেরা ফেরার পর কিছুটা প্রাণ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু সেটা বেশি সময় স্থায়ী হতে দেননি শ্রীলঙ্কার দুই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ও কুশাল মেন্ডিস। দুজনের ধৈর্যশীল, হিসেবি এবং আগ্রাসন মেশানো ব্যাটিং ম্যাচের কাছেই ঘেষতে দেয়নি বাংলাদেশকে।
আগের ম্যাচে ৪৮ রান করেছিলেন ম্যাথুজ। দ্বিতীয় ম্যাচে আর বঞ্চিত হননি তিনি। ৫৭ বলে সাতটি চারে অপরাজিত থাকেন ৫২ রানে। আর আগের ম্যাচে ৪৩ করা মেন্ডিস অপরাজিত থাকেন ৭৪ বলে ৪১ রান করে। শ্রীলঙ্কা ম্যাচ জেতে ৩২ বল হাতে রেখে।
শ্রীলঙ্কার মাটিতে এর আগে কখনোই সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এবারও হল না। সিরিজের তৃতীয় তথা শেষ নিয়মরক্ষার ম্যাচ হবে ৩১ জুলাই, একই ভেন্যুতে।