দীর্ঘ সময় ধরে মিডিয়া অঙ্গনে আছেন মেহের আফরোজ শাওন। নতুন কুঁড়ি দিয়ে শুরু হলেও নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নাটক আর সিনেমা দিয়ে দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন তিনি।
ছোট পর্দায় শাওন যেমন ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের নায়িকা, তেমনি বড় পর্দায়ও তার নায়িকা শাওন। জনপ্রিয় উপন্যাস ‘শ্রাবণ মেঘের দিনে’ তার অভিষেক বড় পর্দায়। এরপর হুমায়ূন আহমেদের একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। নানান প্রতিভার অধিকারী এ অভিনেত্রী এবার নিজের নাম যুক্ত করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাণে।
শাওনের প্রথম চলচ্চিত্র হুমায়ূন আহমেদের সাড়া জাগানো রোমান্টিক উপন্যাস ‘কৃষ্ণপক্ষ’ নিয়ে। মাহিয়া মাহি ও রিয়াজের রোমান্টিক রসায়নের ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিটি আজ মুক্তি পাচ্ছে দেশের বিভিন্ন হলে।
ছবি মুক্তির আগ মুহূর্তে মেহের আফরোজ শাওন চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন ‘কৃষ্ণপক্ষ’ নিয়ে তার অনেক অজানা কথা, ছবিটি ঘিরে প্রত্যাশা আর পরবর্তি সিনেমার পরিকল্পনা সম্পর্কে।
চ্যানেল আই অনলাইন: আজ হুমায়ূন আহমেদের ‘কৃষ্ণপক্ষ’ মুক্তি পাচ্ছে, কেমন লাগছে?
শাওন: এখন খুব ভয় লাগছে। হুমায়ূন আহমেদের সেরা উপন্যাস নিয়ে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিটি নির্মাণ করেছি। উপন্যাসে পাঠক যেভাবে চরিত্রগুলো দেখেছে, যেভাবে কল্পনা করেছে সেভাবে আমি রূপ দিতে পেরেছি কিনা তা নিয়ে ভীষণ টেনশনে আছি। কারণ হুমায়ূন আহমেদের পাঠকদের আমি নিরাশ করতে চাই না
চ্যানেল আই অনলাইন: ‘কৃষ্ণপক্ষ’ মুক্তির দিনটি কিভাবে কাটাবেন?
শাওন: আসলে কথাগুলো নিজের মধ্যে রাখতে চেয়েছিলাম। ‘কৃষ্ণপক্ষ’ মুক্তি পাওয়ার ঠিক সেইদিন ভোররাতে নুহাশ পল্লীতে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। তাকে বলে এসেছি তার ‘কৃষ্ণপক্ষ’ মুক্তি পাচ্ছে। তাছাড়া ছবিটি কিভাবে দর্শক গ্রহণ করছে সেটি দেখতে বিভিন্ন হলে যাবো। আমার সঙ্গে রিয়াজ ও মাহি থাকবে
চ্যানেল আই অনলাইন: প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ ,পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদের কৃষ্ণপক্ষ’ প্রত্যাশার জায়গা কতুটুকু?
শাওন: প্রত্যাশার জায়গা বলার আগে কিছু বলতে চাই। আমি যেসময়ে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করছি সেসময়টি চলচ্চিত্রের জন্য খুব খারাপ সময়। হল মালিকরা বলছে, হলে দর্শক নেই বলে হল বন্ধ করে দিবো। আর দর্শকরা বলছে, হলের পরিবেশ ভালো নেই তাই হলে যাচ্ছি না। এভাবে যদি একে অন্যের দোষ দিয়ে বেড়ায় তাহলে পরিচালকদের ছবি নির্মাণ করার জায়গাটুকু নষ্ট হয়ে যাবে।
একজন নির্মাতা হিসেবে দর্শকদের প্রতি আমার প্রত্যাশা ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিটি তারা হলে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখবে।
কিন্তু বেশিরভাগ দর্শকদের মধ্যে আমি একটি জিনিস বেশি লক্ষ্য করি তারা অপেক্ষায় বসে থাকেন ছবিটি কবে টিভিতে মুক্তি পাবে, বা ইউটিউবে কবে আসবে। আসলে ১৪ ইঞ্চি মনিটরের জন্য একজন নির্মাতা ছবি নির্মাণ করেন না, তিনি নির্মাণ করেন বড় পর্দার জন্য। তাই সব দর্শকদের বলবো হলে গিয়ে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিটি দেখবেন।
চ্যানেল আই অনলাইন: ‘কৃষ্ণপক্ষ’ কোন ধারার সিনেমা?
শাওন: সর্ম্পূণ বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমা বলতে আমরা যেগুলোকে বুঝি হুমায়ূন আহমেদ ছবি নিয়ে সেই নির্মাণের চেষ্টাও করেননি। আমি এই সিনেমাকে হুমায়ূন আহমেদের সিনেমা বলবো। আমাদের প্রচলিত সিনেমায় যে ধারাগুলো রয়েছে তার বাইরে হুমায়ূন আহমেদের সিনেমার একটা ধারা রয়েছে সেই ধারা নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ হয়েছে। আসলে হুমায়ূন আহমেদের গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমাকে বাণিজ্যিক কিংবা অফ ট্র্যাক সিনেমার ট্যাগ দেয়ার কোনো উপায় নেই।
চ্যানেল আই অনলাইন: কোন শ্রেণীর দর্শকরা কৃষ্ণপক্ষ ছবিটি দেখবেন?
শাওন: প্রথমত হুমায়ূন আহমেদ ভক্তরা এ সিনেমাটি দেখতে যাবে। কারণ হুমায়ূন আহমেদ আমাদের মাঝ থেকে চলে যাওয়ার পর এটি তার প্রথম সিনেমা। শাওনের ভক্তরাও সিনেমাটি দেখতে আসবেন। মাহির ভক্তরা রয়েছে যারা দীর্ঘদিন মাহির কোনো ছবি দেখননি। আর একদল আসবেন রিয়াজের ভক্তরা। আরেকটি দল আসবেন শাওন কেমন নির্মাণ করে এমনটি ভেবে, অন্যদল আসবেন শাওনকে একটু গালাগালি করা যাবে তাই।
চ্যানেল আই অনলাইন: মাহিকে নেওয়া কি এটিই কারণ?
শাওন: একদম নয়। হুমায়ূন আহমেদ যখনি কোনো কাজ করতেন সবমসয় চরিত্রগুলো নিয়ে এক্সপেরিমেন্টাল করতেন। সেই ধারাবাহিকতায় মাহিকে নেওয়া। আর অরুর সঙ্গে যে মায়াবী একটি চেহারার দরকার ছিলো তার সবকটি গুন আমি মাহির মধ্যে পেয়েছি তাই অরু মাহি হয়েছে। তাছাড়া বাণিজ্যিক ধারার নায়িকাদের শুধু একমাধ্যমে চলচ্চিত্র করা উচিত নয়।
সাহিত্য ভিত্তিক ছবি করলে কমাশির্য়াল ছবিগুলো আরো বেশি নিখুঁত হয়। আমি মনে করি ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিটি মাহিকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।
চ্যানেল আই অনলাইন: হুমায়ূন আহমেদ ‘কৃষ্ণপক্ষ’ নির্মাণ করলে কাকে অরু চরিত্র দিতেন?
শাওন: (হেসে) ২০১৬ এসেও হুমায়ূন আহমেদ ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিটি নির্মাণ করলে আমাকেই সে অরুরে চরিত্রটি করতে দিতেন। কিন্তু আমি জানি এই চরিত্রটি আমার সঙ্গে যেতো না। তবুও হুমায়ূন আহমেদ আমাকে দিয়েই করাতেন।
চ্যানেল আই অনলাইন: হুমায়ূন আহমেদের নায়িকা কেনো আপনিই হতেন?
শাওন: হুমায়ূন আহমেদের সব পছন্দের নায়িকা চরিত্রগুলো আমি করেছি। বহুবার অনেককে আমি নিয়ে যেতাম ওনার চরিত্রগুলোতে অভিনয় করতে কিন্তু রাজি করাতে পারিনি। হুমায়ূন আহমেদ বলতেন, চরিত্রগুলো তুমি ছাড়া মানানসই হবে না। কারণ চরিত্রগুলোতে যে মায়া দরকার সেগুলো তুমি দিতে পারবে, আর আমার চরিত্রগুলোর সুবিচার তুমিই করতে পারবে।
চ্যানেল আই অনলাইন: তাহলে আপনি কেনো অরু চরিত্রটি করলেন না?
শাওন: ওই যে বললাম অরুর সঙ্গে আমাকে যায় না। বয়সের ছাপ নিয়ে তো অরু হওয়া যায় না। তাছাড়া আমি যেকোনো একটি কাজ ভালো করতে চেয়েছি। যেহেতু ‘কৃষ্ণপক্ষ’ নির্মাণ করেছি সেহেতু নায়িকা হওয়ার চিন্তা মাথায় আসেনি।
চ্যানেল আই অনলাইন: নতুন কোনো ছবি নিয়ে চিন্তা করছেন?
শাওন: হ্যাঁ মাথায় তিন-চারটি কাজ ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখা যাক কবে শুরু করতে পারি। তবে এখনি কোনো কিছু বলতে চাইছি না।
চ্যানেল আই অনলাইন: সেগুলো কি হুমায়ূন আহমেদ নিয়েই?
শাওন: অবশ্যই। হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য ভান্ডারে এমন কিছু রয়েছে তা দিয়েই আমি পূর্ণ। তাই নিজের চিন্তার করার সাহস দেখছি না।
চ্যানেল আই অনলাইন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে?
শাওন: চ্যানেল আই ও চ্যানেল আই অনলাইনকেও ধন্যবাদ।