চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘হায়েনা এক্সপ্রেস মানবসভ্যতার আত্মহত্যার গল্প’

মুখোমুখি প্রবর রিপন:

১৯ মার্চ সিডি আকারে আসছে ‘সোনার বাংলা সার্কাস’-এর প্রথম অ্যালবাম ‘হায়েনা এক্সপ্রেস’

হায়েনা! নাম শুনলেই মাংসাশি এক প্রাণীর ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠে অজান্তেই! বিভিন্ন প্রাণীভিত্তিক টিভি চ্যানেলে যারা নিয়মিত ঘোরাঘুরি করেন, তারা মাত্রই জানেন হায়েনার যুথবদ্ধতা! তাদের হিংস্রতাও অজানা থাকার কথা নয় তাদের! কিন্তু হঠাৎ করে যখন ‘হায়েনা এক্সপ্রেস’ নামটি কেউ উচ্চারণ করেন, তখন কেমন ইমেজ মাথায় আসে?

সম্প্রতি ইউটিউবে প্রকাশ পেয়েছে ‘সোনার বাংলা সার্কাস’ ব্যান্ড দলের প্রথম অ্যালবাম। যে অ্যালবামটির নাম ‘হায়েনা এক্সপ্রেস’! যেখানে আছে মোট ৯টি গান। বলা হচ্ছে, এই গানগুলোর মধ্য দিয়ে শ্রোতারা এই গ্রহে মানবজাতির জীবনযাত্রার বিভিন্ন মানসিক পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ধারণা পাবেন।

অনলাইনে প্রকাশের পর আসছে ১৯ মার্চ সিডি আকারে অ্যালবামেও আসছে গানগুলো। মানুষের হাতে ‘হায়েনা এক্সপ্রেস’-এর বার্তা পৌঁছে দিতে কাজ করছে ‘সোনার বাংলা সার্কাস’। এসব বিষয় নিয়েই দলটির পক্ষে প্রবর রিপন কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে:

কেমন আছেন?
ভালো আছি, কিন্তু একটু ব্যস্ততার মধ্যে আছি।

কেন?
সোনার বাংলা সার্কাসের প্রথম অ্যালবাম ‘হায়েনা এক্সপ্রেস’-এর অনলাইন রিলিজ হয়ে গেছে। আসছে ১৯ মার্চ রাত ৮ টায় টিএসসি মিলনায়তনে ‘হায়েনা এক্সপ্রেস’-এর অ্যালবাম লঞ্চিং। হার্ডকপি পোস্টার সিডি এগুলো গোছানোর কাজ চলছে। আপাতত এগুলো নিয়ে ব্যস্ত আছি।

বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম যেখানে মেগাবাইট খরচ করে প্রায় ফ্রিতে গান শুনাচ্ছে, দেখাচ্ছে। সেই সময়ে সিডিতে গানের অ্যালবাম প্রকাশের দুঃসাহস কেন করলেন?
আমি কবিতা লিখি। এখন ধরুন, একটা কবিতার বই কতো কপি আর বিক্রি হয়? বড়জোর ৫০০ থেকে ১০০০! কিন্তু ফেসবুকে একটা কবিতা দিলে হয়তো মুহূর্তে পাঁচ হাজার মানুষ সেটা পড়ে ফেলেন, বা দেখেন। কিন্তু যারা কবিতা লিখেন তারা কি শুধু ফেসবুকে কবিতা দিয়ে থামছেন? কবিতার বই তো বের করছেন নিয়মিত, নাকি? তো এই যে একটা একটা কবিতা লিখে যে পরিশ্রম করলেন এবং সেটাকে বইয়ে রূপান্তরের অনুভূতি, সেটা তো অন্যরকম! এখন তো সিঙ্গেলের যুগ। সবাই একটা গান বের করেন। আমরা কিন্তু পুরো নয়টা গান বের করেছি, পুরো অ্যালবাম। এই অ্যালবামটা দিয়ে মূলত আমরা একটা পূর্ণাঙ্গ গল্প বলতে চেয়েছি। প্রথম গান থেকে শেষ গান পর্যন্ত। এটি মূলত মানবসভ্যতার আত্মহত্যার গল্প। আমরা হয়তো এগুলো একটা একটা করে প্রকাশ করতে পারতাম, কিন্তু তাতে পরিপূর্ণ ফিল পাওয়া যেত না।

সিডিতে গান প্রকাশের ভাবনায় আর কোনো তাড়না?
গত দুই বছর ধরে আমি গানগুলো করেছি, একটা অ্যালবাম যদি না করি তাহলে সেই পরিশ্রম বৃথা গেল না? সেই কবিতার বই এর মতন! আর কাকতালীয় ব্যাপার হলো আমরা যখন ইউটিউবে হায়েনা এক্সপ্রেস-এর গানগুলো ছেড়েছি, প্রচুর মানুষ আমাদেরকে জিজ্ঞেস করছেন ‘আমরা এই অ্যালবামের সিডি কোথায় পাবো’?

এটাতো বিরাট ব্যাপার?
হ্যাঁ। অন্তত একশো থেকে দুইশো মানুষ আমাদেরকে এরকম জিজ্ঞেস করেছেন। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, গান শোনা যখন একেবারে অ্যাভেইলেবল হয়ে গেছে, সহজ হয়ে গেছে বা বিভিন্ন প্লাটফর্মে ফ্রিতে শুনতে পেয়েছেন। মানুষ তাতে মেতেছেন বটে, কিন্তু যারা শ্রোতা হিসেবে সমঝদার তারা কিন্তু আবার সিডির কাছে ফিরে আসছেন। গান শোনার একটা অয়ে আছে। ফ্রি কোনো প্লাটফর্মে এমপি-৩ একটা গান শোনেন, তাতে কিন্তু গানের কোয়ালিটি অনেক পড়ে যায়। সেই গানই যখন সিডিতে শুনবেন, দেখবেন পুরো কোয়ালিটি টা পাচ্ছেন! তো সারা পৃথিবীতে গত ২-১ বছরের মধ্যে এলপি-সিডি বিক্রি হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। যাদের কান ভাল তারা ওইসব প্লাটফর্মে গান শুনে আর ফিল পাচ্ছেন না। তো এসব বিবেচনা করে আমরা পুরো একটা অ্যালবাম সিডিতে শ্রোতার হাতে পৌঁছে দেয়ার প্ল্যান করলাম।

পুরনো দল ছেড়ে নতুন দল, কেমন লাগছে?     
আমার আল্টিমেট জায়গা হলো ‘সোনার বাংলা সার্কাস’। এরকম একটা ব্যান্ড ই চাচ্ছিলাম বহুদিন ধরে। থিয়েট্রিক্যালভাবে, খুবই এক্সপ্রেসিভ ভাবে যারা বাজাতে পারেন।

‘সোনার বাংলা সার্কাস’-ব্যান্ডের নাম হিসেবে এই নাম নেয়ার হেতু কী?
এটি মূলত একটি গানের সার্কাস দল। এই দলের পেছনের গল্প বলতে গেলে, এই নামে একটা সার্কাস দল ছিল (এখনো আছে)। আমার গ্রামের বাড়িতে যেত, সার্কাস দেখাতে। সেই ছোটবেলায়! তখন আমার মনে হতো যদি এই সার্কাস দলের সাথে হারিয়ে যেতাম! মনোসরণি ভেঙে যাওয়ার পর যখন নতুন দলটা করতে চাইলাম, যেখানে বিভিন্ন দেশের মানুষ আছেন। তো তখন আমার মনে হল, এরকম সার্কাসের মত একটা দল করে ওদের সাথে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে বেড়াবো! সেই ভাবনা থেকেই এই ব্যান্ডের নাম ‘সোনার বাংলা সার্কাস’ রাখা।

কারা আছেন এই দলে?
গিটারিস্ট শ্বেত পান্ডুরাঙ্গা ব্লুমবার্গ, ড্রামার দেওয়ান এনামুল হাসান রাজু, বেজ গিটারিস্ট শাকিল হক, কিবোর্ডিস্ট সাদ চৌধুরী আর ভোকালে আমি প্রবর রিপন।

প্রথম অ্যালবামের নাম ‘হায়েনা এক্সপ্রেস’। এমন নাম কেন?
মানুষ প্রজাতি। বনের হায়েনার সাথে এর কোনো যোগ নেই। বনের হায়েনা শুধু হায়েনা, মানুষ শুধু মানুষ। ‘হায়েনা এক্সপ্রেস’ হলো হায়েনা মানুষের গল্প। হায়েনার একটা স্বভাব আছে না, দলবদ্ধভাবে কোন কিছুকে আক্রমণ করে খুবই বিভৎসভাবে খেয়ে ফেলে! তো মানুষ পৃথিবীকে এরকম ভাবে খেতে বসেছে। পুরো পৃথিবীর সমস্ত মানুষগুলো এখন, অতি লোভে অতি ভুগে পৃথিবীকে ধ্বংস করতে বসছে। যার ফলশ্রুতি গ্লোবাল ওয়ার্মিং, সমুদ্রের বরফ গলছে, নানা কৃত্রিম দুর্যোগ। পৃথিবীকে ধ্বংস করতে বসছে মানুষ। সেটা কিসের উপরে, গতি, চাকা! সেটাই হায়েনা এক্সপ্রেস।

অনলাইনে প্রকাশিত ‘হায়েনা এক্সপ্রেস’: