শিরোনাম দেখে কেউ ভুল বুঝবেন না প্লিজ, কথাটা বুঝুন, একজন ন্যূনতম মানবিক মানুষ হিসেবে মোটেও তামাশা করছি না কিংবা সন্দেহ পোষণ করছি না বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ নন। তবে সেই (বেগম জিয়ার জেল গমন) থেকে এখন পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার আইনি বিষয়, রাজনীতির বিষয়, শারীরিক বিষয় নিয়ে বেগম জিয়ার যারা শুভাকাঙ্ক্ষী তারা যৌক্তিক আলাপ আলোচনার চেয়ে অযৌক্তিক হাস্যকর সমালোচনাই করেছে বেশি। আরেকটু ভালোভাবে বললে যা দাঁড়ায় সেটা হলো রাখাল বালককে বাঘে খেয়ে ফেলার মত গল্প আর কি।
রাজনৈতিকভাবে, আদর্শিক বা মতাদর্শিকভাবে, কোন কিছুতেই বেগম খালেদা জিয়ার সমর্থক নই, এমনকি উনি বা উনার দল যদি ভালো কথাও বলে সেটার সমর্থনও করি না, কিন্তু তারপরও আমার চাওয়াটা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রথমে। কারণ প্রথমত উনি একজন নারী, দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী, একটি বড় দলের প্রধান। উনি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছেন, মামলা মোকাদ্দমা হয়েছে, আইন আদালতে প্রমাণিত হয়েছে তাই উনার সাজা হয়েছে।
একজন রাজনীতিবিদের কারাগারে যাওয়াটা হচ্ছে ফেলে আশা জীবনের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে নতুন করে নিজেকে তৈরি করার বিষয়। এমন অবস্থায় ওনি যদি সত্যিকারের অসুস্থ হয়ে হয়ে থাকেন, তাহলে প্রথম অগ্রাধিকার হলো ওনার চিকিৎসা, যা সরকারি খরচে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা করবে কারাকর্তৃপক্ষ। সেটা আগারগাঁও, কুমারগাঁও হোক, যেখানেই হোক, দরকার হলো তার চিকিৎসা। এখন সেই চিকিৎসা নিতে চাওয়ার বিষয়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া যদি ডিমান্ড নোট করে দেয় আগারগাঁও… নো ওয়ে, কুমারগাঁও নো ওয়ে… উনি যাবেন ফুলনগর…। তাহলে স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন এসে দরজায় দাঁড়িয়ে ঠক ঠক করে নক করে আসলেই কী খালেদা জিয়া অসুস্থ? নাকি অসুস্থতার ভান ধরে মিডিয়া সিমপ্যাথী আদায় করে লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন?
যেখানে এতিমখানার টাকা দুর্নীতির মামলার রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বেগম জিয়ার কারাগারে গমন পরবর্তী সময়ে উনার নিজের দলের নীতি নির্ধারণী নেতা, আইনজীবীরা সভা সমাবেশে বক্তব্য-বিবৃতিতে প্রকাশ্যেই বলাবলি করছিলেন, বেগম খালেদা জিয়ার একদিন জেলে থাকা মানে ১০ লাখ অটো ভোট বাড়বে ধানের শীষের।
যেখানে বিএনপির মুখপাত্র রিজভী আহমেদ প্রতিদিন নিয়ম করে লাঞ্চের আগে ও ডিনারের আগে মিডিয়া ডেকে বা মিডিয়ায় গিয়ে অভিযোগের পর অভিযোগ করছেন ‘‘খালেদার মাথায় উকুন হয়ে গেছে, খালেদা জিয়াকে পোকা মাকড়ে কাটছে, খালেদা জিয়ার ঘরে মশারী নাই, আরো নানান অভিযোগ।”
সেখানে (রিজভীর অভিযোগ অনুসারে) ৫ জুন মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার পর এখনো অর্থাৎ এই লেখা যখন আপনি পড়ছেন তখনো খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া যায়নি। তারপরও খালেদা জিয়া দিব্যি বেঁচে আছেন, তার মানেটা কী দাঁড়ায়? হয় খালেদা জিয়া গরমে সামান্য অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন যা পরে চকলেট খেয়েই সুস্থ হয়ে গেছেন…না হয় আসলে বেগম খালেদা জিয়ার শরীরে কোন অসুখই হয়নি। অসুখ যা হয়েছে তা হলো বিএনপি নেতা রিজভীর মুখে। ভাবতে থাকুন…।
এবার অন্য প্রসঙ্গে কিছু কথা বলতে হচ্ছে। যদিও কারাবিধি আইনের ফাঁক ফোকর সম্মন্ধে আমার পাণ্ডিত্যের সীমাবদ্ধতা প্রচুর। তারপরও এইটুকু অন্তত বুঝি, সাবেক সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের সময়ে গ্রেপ্তারকৃত শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়া সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কারাবাসের সাথে বর্তমানে দুর্নীতির মামলার রায়ে সাজাপ্রাপ্ত বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের অনেক ব্যবধান আছে। ঐ সময়ে যেহেতু মামলার প্রাথমিক তদন্তের আগেই আসামী গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সেহেতু ঐসময়ের হাজতবাস, এসি, ভাত রেধে খাওয়া, হাই কমোডের সুযোগ-সুবিধা, স্কয়ার হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নেওয়া বা পাওয়ার সাথে আজকের সাজাপ্রাপ্ত বেগম জিয়ার ইউনাইটেড হাসপাতাল সুবিধা পাওয়ার অনেক তফাৎ আছে।
এর লাইন আপ হচ্ছে মামলা আদালতে শুনানির আগেই হাজতবাস আর বিচার শেষে রায় খাটতে হাজতবাস। কারা বিধি-বিধান উপেক্ষা করার কোন ওয়ে নাই, অবশ্যই মনে রাখতে হবে ভিভিআইপি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, এইসব পরিচয় ছাড়া দুই চোখ, দুই নাক, চুলগুলো উচু উচু এমন আরো অসংখ্য মানুষ সাজাপ্রাপ্ত হয়েই হাজতবাস করছে। এমন পরিস্থিতিতে সকল বন্দীর জন্য এক নিয়ম পালন হলে সেখানে শুধু ভিভিআইপির কারণে বেগম খালেদার ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ পছন্দের ডাক্তার বা হাসপাতাল সুবিধার জন্য কারাবিধি পরিবর্তন হতে পারে না।
তাছাড়া কিছুদিন আগেও যেখানে বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন, সন্তুষ্ট হয়েছেন কিনা সেটা গুরত্বপূর্ণ নয়। তবে অসন্তষ্ট যে হন নাই, সেটাও ভাবতে হবে, কারণ বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের ঠিক কোন আচার আচরণে উনি সেদিন বিরক্ত হয়েছিলেন, এমন কোন লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ কোথাও নেই। তাহলে কেন? কোন কারণে বা বেগম খালেদা জিয়ার অনাগ্রহের কারণে দেশসেরা এই হাসপাতালটিকে আজকে বিতর্কিত হতে হচ্ছে? কার স্বার্থে? কেন? অবশ্যই এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে।
ইউনাইটেড হাসপাতালে বেগম জিয়ার চিকিৎসা হবে কি না সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইউনাইটেড হাসপাতালেই হতে হবে, এটা কেন? কী আছে ইউনাইটেড হাসপাতালে? খালেদা জিয়াকে সুস্থ করার মেশিন নাকি সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দেওয়ার মেশিন? উত্তর খুঁজুন…।
প্রাসঙ্গিক একটু পেছনে ফিরে যেতে হচ্ছে, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার শিরোমণি গোলাম আজমের কথা মনে আছে? রাজাকার মুজাহিদ? রাজাকার নিজামী? তারা সকলে যদি বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে কারাবন্দী থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে, তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার সমস্যা কোথায়? নাকি শুধু সাবেক পিজি বঙ্গবন্ধু নামে রূপান্তরিত হয়েছে এই কারণে? আর বঙ্গবন্ধুর নামের উপরেই যদি ওনার এতো রাগ থেকে থাকে, তাহলে ওনি বা ওনার দল কেন এখনো বাংলাদেশে বসবাস করছে? চলে যাচ্ছে না কেন তাদের দেশে, যারা এদের মতোই বঙ্গবন্ধুর নাম শুনতে পারে না।
আর তাই এই লেখার মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম বেগম খালেদা জিয়া সত্যিকারেই অসুস্থ, এখন তার চিকিৎসা সেবা লাগবে, উনি বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে কোন কারণ উল্লেখ না করে চিকিৎসা সেবা নিবেন না, তা হবে না। অবশ্যই উনাকে বলতে হবে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের সমস্যাটা কিসে? নামের কারণে নাকি অন্য কারণে। আরেকটা কথা হচ্ছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর লুকিয়ে থাকা এজেন্ট বাংলাদেশে জীবিত রেখে, খরচ কে দিবে বা না দিবে সেটা গুরত্বপূর্ণ নয়, ইউনাইটেড হাসপাতাল বা খালেদা পছন্দের কোন হাসপাতালে যেন খালেদার চিকিৎসা না হয়। আর এটা যদি খালেদা জিয়া আদায় করে নিতে পারে, তাহলে সেটা সরকারের জন্য খুব খারাপ হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)