বাংলা ব্যান্ডে লাগাতার চলছে ভাঙন। একের পর এক ভাঙনের সুর চলছেই। বছরের শুরুতেই তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় ব্যান্ড দল ‘চিরকুট’ থেকে বেরিয়ে গিয়ে আলোচনা তৈরি করেছিলেন পিন্টু ঘোষ। আর বছর শেষে বাংলা ব্যান্ডে ঘটে গেল বড়সর কয়েকটি ভাঙন। শিরোনামহীন থেকে ভোকাল তানজীর তুহীন চলে যাওয়ার পর এবার ভাঙনের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে দেশের পুরনো ব্যান্ড দল ‘মাইলস’-এও।
ক’দিন আগেই ‘মাইলস’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হামিন আহমেদ তার ছোট ভাই ও বেইজ গিটারিস্ট শাফিন আহমেদের প্রতি অভিযোগ তুলে জানিয়েছিলেন, ব্যান্ডের সঙ্গে এত বছর সম্পৃক্ত থাকার পরও বিনা কারণে ‘মাইলস’-এর কোনো কাজের সঙ্গে থাকছেন না শাফিন। গত কয়েক মাসে দেশে, বিদেশের শোগুলোতিও শাফিন অনুপস্থিত। তিনি কেন এমন করছেন, তার ঠিকঠাক ব্যাখ্যাও ব্যান্ডকে জানাচ্ছেন না বলে সংবাদ মাধ্যমে জানান হামিন। এছাড়াও শাফিনের বিরুদ্ধে আরো বেশকিছু অভিযোগ তুলেন তিনি।
বড় ভাই ও ‘মাইলস’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হামিন আহমেদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটায় রাজধানীর মহাখালির পর্যটন রেস্টুরেন্টে একটি সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করেন শাফিন আহমেদ। সেখানে হামিনের সকল অভিযোগ খণ্ডন করে তিনি। শুধু তাই না, হামিন আহমেদ ও ব্যান্ডের অন্য সদস্যদের দিকে পাল্টা অভিযোগ তুলেন তিনি। মাইলসে নিজের অবদানের কথা তুলে ধরে হামিন আহমেদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গত কয়েক মাস ধরে প্রাপ্য রয়্যালিটি আটকে দিচ্ছে মাইলসের অন্য সদস্যরা। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে আরো নানা অভিযোগ করে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেন শাফিন।
‘যাদের সুরকে পুঁজি করে শাফিন আহমেদ আজকে শাফিন আহমেদ হয়েছেন’-সম্প্রতি হামিন আহমেদের এমন কথায় বেজায় চটেছেন শাফিন। সংবাদ সম্মেলনে কথাটিকে কোড করে শাফিন বলেন, এমন কথা আমার কাছে অদ্ভুত ঠেকেছে। হামিন আহমেদ কী নিজের মা-বাবার কথা ভুলে যাচ্ছেন? আজকে শাফিন আহমেদ এই অবস্থানে আসার জন্য আমি সর্বপ্রথম আল্লাহপাকের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি চির ঋণী আমার মা ফিরোজা বেগম ও বাবা কমল দাশগুপ্তের কাছে। যে তাদের অসাধারণ প্রতিভা ও নিষ্ঠার কিছুটা ছিঁটেফোটা হয়তো পেয়েও থাকতে পারি। আর আমাকে যারা ভালোবেসেছেন, আমার ভক্তদের কাছেও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাই বলছি, কারো সুরকে পুঁজি করে আমি শাফিন আহমেদ হইনি, দুঃখের সাথে বলছি এমন প্রশ্ন তুলেছেন আমার ভাই হামিন আহমেদ। তাকে বলছি, আমার রক্তে ধাবমান সংগীতের নেশায় আজকে আমাকে শাফিন আহমেদ বানিয়েছে।
‘মাইলস’-এর শুরু ইংরেজি গান দিয়ে। কিন্তু হামিন আহমেদ ইংরেজি গান ছেড়ে বাংলা গান গাইতে রাজি ছিলেন না। বাংলা গানের পরিকল্পনা করেছিলেন মানাম আহমেদ ও তিনি নিজে। এ নিয়েও সংবাদ মাধ্যমে হামিন অসত্য বলেছেন অভিযোগ তুলে শাফিন বলেন, মাইলসের বাংলা গান গাওয়ার সিদ্ধান্ত নাকি ছিলো তিনজনের পরিকল্পনা! এটা সত্য নয়। নব্বইয়েল শুরুর দিকে, আমি তখন লন্ডন থেকে এসেছি। গ্রীনরুডে আমরা ব্যাডমিন্টন খেলি, হঠাৎ মানাম আমাকে ডেকে নিয়ে বললো যে তারা বাংলা গানও করতে চায়। কিন্তু হামিন রাজি নয়। তাকে যেন আমি রাজি করাই। অর্থ্যাৎ, হামিন আহমেদ বাংলা গান করতে আগ্রহীই ছিলেন না। কিন্তু আমার সিদ্ধান্তের কারণে মাইলস শেষ পর্যন্ত বাংলা করে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৯১ সালে আমরা ‘প্রতিশ্রুতি’ নামের অ্যালবাম দিয়ে প্রথম বাংলা গানে আসি। যার বেশ কয়েকটি গান মানুষের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে নেয়।
‘ঢাকায় শো করেছি, কানাডায় শো করেছি শাফিন আহমেদকে বারবার বলেও পাওয়া যায়নি। তিনি আমাদের সঙ্গে গান করতে রাজি নয়’-সাম্প্রতিক সময়ে হামিন আহমেদের করা এমন অভিযোগও খণ্ডন করেছেন শাফিন। বলেন, আমাদের মধ্যে চলমান সৃষ্ট জটিলতা আলোচনা করে সমাধান করার চেষ্ঠা করেছিলাম। আমি প্রস্তাব রেখেছিলাম আলোচনা করতে। কিন্তু কেউ আসেননি, এতটুকু চেষ্টাও ব্যান্ডের কেউ করেননি আমার সঙ্গে বসে কথা বলার। ২৪ সেপ্টেম্বর আমি হামিনকে ইমেইল করে জানিয়েছি যে আমাদের মধ্যে তৈরি হওয়া সমস্যাগুলো সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমি কোনো অ্যাক্টিভিটি বা ব্যান্ডের শো’তে অংশ নিতে পারবো না। এরমধ্যে আর্থিক বিষয়ের কিছু প্রশ্ন ছিল। যার সদুত্তর আমি কারো কাছ থেকেই পাইনি। এরপর তারা অক্টোবরের ৭ তারিখে ঢাকায় শো করে। কিন্তু এরমধ্যে আমার সঙ্গে কেউ কথা বলার চেষ্টাও করেনি। এরপর অক্টোবরের ১২ তারিখে আমি ফেসবুকে আমার ফ্যান পেইজে জানিয়েছি যে কানাডার শো’র প্রমোশনে আমার যে ছবিটি ব্যবহার করা হচ্ছে এটা ঠিক নয়। আমি এই শোতে অংশ নিচ্ছি না। কানাডায় শো ছিল ২১ অক্টোবরে। আমার সাথে কোনো সমঝোতা না করে অন্য একটি ছেলেকে নিয়ে তারা সেখানে একটা ফ্লপ শো করে আসে। অথচ মাইলস কোনো ফ্লপ শো করে না। ওখানে শাফিন আহমেদ ছিলেন না বলেই মাত্র ২০০জনের উপস্থিতি ছিল। এগুলো বুঝতে হবে, গায়ের জোরে মিউজিক হয় না। অবদানকে স্বীকার করতে হবে। আমার প্রশ্ন হল, কোনটা হামিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলো? আমার সাথে বসে সমঝোতা করা, নাকি এমন একটার পর একটা ফ্লপ শো করা? তিনি এখন অভিযোগ আনছেন, আমি চুপ করে ছিলাম। বরং একের পর এক আমি ইমেইল দিয়ে গেছি, কিন্তু তিনি আমাকে কোনো সমাধানের পথে না গিয়ে চুপ করে থেকেছেন। আর মাইলস-এর নাম ব্যবহার করে ফ্লপ শো করে এসেছেন।
সলো ক্যারিয়ার নিয়ে মাইলস-এর অন্য সদস্যদের করা অভিযোগেরও সমালোচনা করেন শাফিন। বরং হামিনসহ অন্যান্যদের সলো ক্যারিয়ারের দিকে বেশী আগ্রহের কথা তুলে ধরেন তিনি। নাটকে অভিনয় করা থেকে শুরু করে ১৯৯৪ সালে বাংলা সিনেমার মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবেও হামিন কাজ করেছে বলে উল্লেখ করেন শাফিন। মানামের ক্ষেত্রেও এরকম উদাহারণ টানেন তিনি। সেই জায়গায় তখনও কোনো মিশ্র অ্যালবামেও কাজ করেননি জানান শাফিন। মাইলস যদি নাও থাকতো, তবুও সংগীত জগতে তিনি শাইন করতেন বলে মন্তব্য করেন শাফিন।