চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

হাওরে বাড়ছে বোটস্কুলের চাহিদা

দুর্গম হাওর অঞ্চলে শিশুশিক্ষা বিস্তারে নৌকাভিত্তিক আরও স্কুল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ, শিশু শিক্ষার্থী এবং সরকারি কর্মকর্তারা।

হাওর অঞ্চলে শিশুশিক্ষা বিস্তারে নৌকাভিত্তিক স্কুলের প্রভাব এবং এক্ষেত্রে বহুমাত্রিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের বিল, হাওর ও বন্যাপ্রবণ এলাকার ১৬টি জেলায় ব্র্যাকের শিক্ষাতরী কার্যক্রমের মাধ্যমে ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে ১৪ হাজার ৫০০ জনের বেশি শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে ৯৯ শতাংশই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেঙ্গল ইন-এ ব্র্যাক পরিচালিত গবেষণাটির প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মো. জাকির হোসেন। দুর্গম এলাকায় শিক্ষা পৌঁছে দিতে ব্র্যাকের উদ্ভাবনী বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন: শিক্ষা সরকারের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার। আমরা ইতিমধ্যে অনেকগুলো মাইলফলক অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। ঝরে পড়ার হার কমাতে সক্ষম হয়েছি আমরা। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের রূপকল্প অর্জনে প্রয়োজনীয় মানসম্পন্ন মানবসম্পদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়ে গেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়: স্থানীয়রা বাড়ির কাছে আরও এরকম বোটস্কুল চান। পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণ ও পাঠসূচির আধুনিকায়নে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশও করেছেন তারা। এছাড়া বোটস্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের মিনি লাইব্রেরিতে আরো বেশি সংখ্যক ও বিভিন্ন বিষয়ের বইও চেয়েছে।

এ বিষয়ে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন: বৈষম্য কমিয়ে আনার পাশাপাশি যাদের সহায়তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের কাছে আমাদের যেতে হবে। অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে এবং কাজের সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে সরকারের সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে। নতুন প্রজন্ম আমাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে আমাদের সবাইকে।

‘ফ্লোটিং দ্য লাইট অব এডুকেশন ইন হাওর: ইনোভেটিভ সল্যুশনস টু রিমুভ ব্যারিয়ারস টু এডুকেশন’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গবেষণাটির উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলে যেসব এলাকায় শিক্ষাতরী চালু আছে, সেখানকার বাসিন্দাদের আর্থসামাজিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা যা সন্তানদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। পাশাপাশি শিশু শিক্ষার্থীদের উপর বোটস্কুলগুলোর প্রভাব, প্রকল্পটির স্বাধীন মূল্যায়ন এবং এর প্রসারে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জসমূহ নিরূপণ করাও গবেষণাটির উদ্দেশ্য।

বর্তমানে যেসব জেলায় শিক্ষাতরী প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে সেগুলো হলো: পিরোজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি, কুমিল্লা, গোপালগঞ্জ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, মুনশীগঞ্জ, নেত্রকোনা, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ। এসবের মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম ও সুবিধাবঞ্চিত এলাকা হাওর অঞ্চলে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

গবেষণাকর্মটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন। তার সহযোগী ছিলেন একই ইনস্টিটিউটের প্রভাষক মোহাম্মদ আফওয়া ইসলাম ও মোসাব্বের আলী চিশতি।

বোটস্কুল প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে কাতারভিত্তিক সংস্থা এডুকেশন অ্যাবোভ অল ফাউন্ডেশন-এর এডুকেট এ চাইল্ড কর্মসূচি, যুক্তরাজ্য সরকার ও অস্ট্রেলিয়া সরকারের সহায়তায়।

‘শিক্ষার্থী যদি স্কুলে যেতে না পারে তাহলে স্কুলই তার দোরগোড়ায় চলে আসবে’ এই সরল দর্শন থেকে শিক্ষাতরী প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রকল্পটি ২০১৭ সালে শিক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা হান্ড্রেড পরিচালিত জরিপে বিশ্বের ১০০টি উদ্ভাবনমূলক শিক্ষা প্রকল্পের মধ্যে স্থান পেয়েছে।