বন্যাকবলিত হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের নেয়া কৃষি ঋণ আদায় আপাতত স্থগিত রাখতে দেশের সব ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে নতুন করে ঋণ পেতে যেন তারা কোনো হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বলেছে, হাওরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কৃষি ঋণ আদায় স্থগিতকরণ, সহজ কিস্তি আদায়সহ ডাউন পেমেন্ট এর শর্ত শিথিলপূর্বক ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ সুবিধা প্রদান করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মনোজ কান্তি বৈরাগী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশের হাওরাঞ্চল তথা সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি এবং ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় ধানসহ কৃষিজাত ফসল প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়ায় এসব অঞ্চলের কৃষকগণ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের প্রধান ফসল বোরো ধান ও অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা অতিশয় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। কাঁচা-পাকা ধান পানিতে পঁচে পানিদূষণ জনিত কারণে মৎস্য সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এমতাবস্থায়, হাওরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তা আশু- বাস্তবায়ন করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা:
১. ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলসমূহে কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠে কৃষি উৎপাদন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে রোপা আমনসহ অন্যান্য ফসল ও মৎস্য খাতে প্রকৃত চাহিদা ও বাস্তবতার নিরিখে নতুন ঋণ বিতরণ এবং রবিশস্য ও আমদানির বিকল্প ফসলে (ডাল, তৈলবীজ, মসলা ও ভুট্টা) রেয়াতি হার সুদে ঋণ প্রদান জোরদার করতে হবে।
২. পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কৃষি ঋণ আদায় স্থগিতকরণ, সহজ কিস্তি আদায়ের মাধ্যমে ঋণ নিয়মিতকরণ/ ডাউন পেমেন্ট এর শর্ত শিথিলপূর্বক ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ সুবিধা প্রদান করতে হবে।
৩. নতুন করে কোন সার্টিফিকেট মামলা না করে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে অনাদায়ী ঋণসমূহে ব্যালেন্স কনফার্মেশন সার্টিফিকেট, টোকেন মানি প্রভৃতির মাধ্যমে ঋণ তামাদি হওয়া প্রতিবিধানে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দায়েরকৃত সার্টিফিকেট মামলা গুলোর কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রেখে সোলেনামার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তিকরণ করতে হবে।
৪. বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকগণ যাতে প্রকৃত চাহিদা মোতাবেক যথাসময়ে নতুন ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন এবং ঋণ পেতে কোনোরূপ হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারকি করতে হবে।
৫. ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের বসতবাড়ির আঙিনায় হাঁস-মুরগী ও গবাদী পশু পালন, গো-খাদ্য উৎপাদন ও ক্রয় ইত্যাদি খাতে ঋণ প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এ বিষয়ে গৃহীত কার্যক্রমের অগ্রগতি সংযোজিত ছকে আগামী ২৫/০৬/২০১৭ তারিখের মধ্যে অত্র বিভাগকে অবহিত করতে হবে। আর এ নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।