চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

হাঁকডাক দিলেও ধূম্রজালেই এরশাদ

সরকারের সঙ্গে থাকা না থাকা নিয়ে ধূম্রজালই রাখতে চান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। একদিকে তিনি সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন, আবার এটাও বলেছেন যে এজন্য তিন বছর সময় আছে। একদিকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদ ছাড়তে চান, অন্যদিকে তিনি এটাও বলছেন যে প্রধানমন্ত্রী তাকে সম্মানিত করায় তার (প্রধানমন্ত্রীর) সঙ্গে আলোচনা ছাড়া ওই পদ ছাড়া ঠিক হবে না। 

এরকম অবস্থায় ৩১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। চ্যানেল আইকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাতকারে এইচ এম এরশাদ জরুরি বৈঠকের খবর জানিয়ে বলেছেন, ওইদিনই দলের মধ্যে আনা সকল পরিবর্তন সম্পর্কে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের অবহিত করা হবে।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের অনির্ধ‍ারিত একটি বৈঠকের পরপরই দলীয় প্রেসিডিয়ামের জরুরি সভা আহ্বান করেন এরশাদ।

সবসময়ই দলীয় সমস্যায় জর্জরিত জাতীয় পার্টিতে সাম্প্রতিক সমস্যার শুরু হঠাৎই জিয়াউদ্দিন বাবলুকে সরিয়ে রুহুল আমিন হাওলাদারকে আবারও মহাসচিব এবং জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করার ঘোষণায়। ওই ঘোষণার পর জাতীয় পার্টির ভেতরের কোন্দল আরো প্রকাশ্য হয়ে পড়ে।

এরশাদের ঘোষণার পরপরই দলের একটি অংশ রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হিসেবে ঘোষণা করে। পরদিন জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল এরশাদের উপস্থিতিতেই এরশাদকে তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। কিন্তু, অনঢ় থাকেন এরশাদ। পরে এক পর্যায়ে বিবৃতি দিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহবান জানান জাতীয় পার্টি সংসদীয় দলের সভাপতি ও বিরে‍াধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। কিন্তু, সবসময় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য সুপরিচিত এরশাদ এক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্তে অটুট থাকেন।

রওশন এরশাদ যখন বলছেন, প্রেসিডিয়ামকে না জানিয়ে ওই পরিবর্তন দলীয় গঠনতন্ত্রের লংঘন তখন পাল্টা বিবৃতিতে এরশাদ দাবি করেন, চেয়ারম্যানকে দেয়া ক্ষমতাবলেই তিনি পরিবর্তন এনেছেন এবং তা আর পরিবর্তন হবে না।

এরমধ্যে রওশন এরশাদ বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে সাংবাদিকদের বলেন, তার দল সরকার থেকে বেরিয়ে আসছে না, তবে দলে নতুন নেতৃত্ব আসতেই পারে।

এমন প্রেক্ষাপটে এরশাদ জরুরি প্রেসিডিয়াম সভা আহ্বান করে চ্যানেল আইকে বলেছেন, ৩১ জানুয়ারি রবিবার বেলা ১১ টায় আমরা আমাদের প্রেসিডিয়াম সভা করবো। সেই সভাতেই অবহিত করবো আমাদের পরিবর্তনের কথা। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, প্রেসিডিয়ামের কাছে আমাকে কোনো অনুমতি নিতে হবে না, আমি শুধু অবহিত করবো তাদের। বর্ধিত সভা কবে হবে সেটা নিয়েও আলোচনা হবে। তারপরে কাউন্সিল মিটিং কবে হবে সেটা নিয়েও আলোচনা হবে।

কিন্তু, অনেক দিন ধরেই যে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে সরকারের সঙ্গে আর না থাকার কথা বলছেন সেই বিষয়গুলো কি এই বৈঠকে আলোচনা হবে?

উত্তরে চ্যানেল আইয়ের কাছে জাতীয় পার্টিকে সত্যিকারের বিরোধীদলে পরিণত করার কথা বলেছেন জাপা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আসলে বিরোধীদলের ভূমিকা আমি পালন করতে পারছি না। কারণ আমি সরকারে সম্পৃক্ত আছি এবং আরো তিনজন সরকারে সম্পৃক্ত আছে। যতোদিন আমরা বেরিয়ে আসতে না পারবো ততোদিন সঠিক বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করতে পারবো না।

কিন্তু, সাবেক প্রেসিডেন্ট সঙ্গে একথাও বললেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন, সম্মানিত করেছেন তাই উনার সঙ্গে আলোচনা না করে আমার পদত্যাগ করা ঠিক হবে না।

সরকারের মেয়াদও আরো তিন বছর আছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনেক সময় আছে।

এ কারণে সরকারে থাকার পক্ষে রওশনের সঙ্গে বিরোধ নয়, বরং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদও তার সঙ্গেই থাকবেন বলে আশা করছেন এরশাদ।

তিনি বলেন, এই পার্টির চেয়্যারম্যান, পার্টির প্রতিষ্ঠাতা আমি। ৩০ বছর ধরে দল পরিচালনা করছি, আমার পাশে কেউ ছিলো না। আমি জেলে ছিলাম, আমার স্ত্রী কিছু দায়-দায়িত্ব পালন করেছে নিঃসন্দেহে। আমি পার্টির সব দায়-দায়িত্ব বহন করেছি, নির্বাচনের খরচ বহন করেছি। এখন আমার দায়িত্ব পার্টিকে আবার সংগঠিত করা, আগামীতে আরো ভালো জায়গায় যাওয়া।

এরশাদ দাবি করেছেন, তার আনা পরিবর্তনে জাতীয় পার্টিতে নতুন জাগরণ এসেছে। আগামী নির্বাচনে এই জাগরণকেই কাজে লাগাবে জাতীয় পার্টি।