চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘হলের খাবার হলো ছবি, সেটাই যদি না থাকে তাহলে হল চলবে কীভাবে?’

ধস দিয়েই বছর শুরু সিনেমার

কথায় বলে, সকাল দেখলে বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। সিনেমা ব্যবসায়ীদের ভাষায়, সকাল দেখা হয়ে গেছে। তারা মনে করছেন, বছরটা যেন সকালের মতো না হয়!

২০১৯ সালের প্রথম মাস ‘খুব খারাপ’ গেল। হতাশা আর সংশয় প্রকাশ করে চলচ্চিত্রে বিনিয়োগকারী ও সিনেমা হলের মালিকরা বলছেন, বছরের প্রথমেই সিনেমার ব্যবসায় ধস লেগেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। লোকসান গুনতে গুনতে একেবারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

গত কয়েক বছর সিনেমার জন্য মোটেও ভালো যায়নি। গত বছর টেনেটুনে ৪০ টির মতো ছবি মুক্তি পেয়েছিল। যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। এরমধ্যে ৪-৫টি ছবি লগ্নিকৃত টাকা ওঠে! অনেক আশার বাতি জ্বালিয়ে চলতি বছর শুরু হলেও জানুয়ারিতে মুক্তি পেয়েছে মাত্র একটি দেশের ছবি (আই অ্যাম দ্য রাজ) ও একটি আমদানির করা কলকাতার ছবি (বিসর্জন)। মানহীন ছবি ‘আই অ্যাম দ্য রাজ’ গ্রহণ করেনি দর্শক, বরং বিরক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে, কলকাতার ছবি ‘বিসর্জন’ সিনেপ্লেক্সের দর্শক বাদে বাইরের হলগুলোতে মোটেও ভালো চলেনি।

চলচ্চিত্র প্রদর্শন সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ একথা বলেন। রবিবার বিকেলে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে নওশাদ বলেন, সিনেমার জন্য এ মাসটা ‘খুবই খারাপ’ অবস্থা পার করছে। কেউ যদি হল বন্ধ করে দেয় তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রদর্শক সমিতির চাহিদা অনুযায়ী প্রতিমাসে কমপক্ষে ‘দুটি’ করে ছবি মুক্তি পাওয়া উচিত, ওই ছবি দুটো অবশ্যই মানসম্মত হতে হবে। সময় উপযোগী হতে হবে। কিন্তু ‘আই অ্যাম দ্য রাজ’ নামে যে ছবিটা মুক্তি পেয়েছে সেটা কোনো জাতের ছবিই না। আমি নিজেই এটা নিয়ে বিরক্ত। এগুলো কে দেখবে?

চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সভাপতি ও ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক নওশাদ বলেন, বিপিএল খেলা চলছে, বাণিজ্য মেলা চলছে; সবকিছু মিলিয়ে সিনেমা হল একেবারেই ফাঁকা। আমাদের অবস্থা খুব শোচনীয়। এই অবস্থায় আর কতদূর যেতে পারবো তার কোনো ঠিক নেই। কিছু মানুষ ছবি বানানো বাদ দিয়ে হলের পরিবেশ ভালো না বলে চিল্লাচিল্লি করেন। কিন্তু তাদের বোঝা উচিত ছবি ভালো হলে দর্শক হলে আসে। ভাইজান এলো রে, দেবী, পোড়ামন ২, আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক, শিকারী দেখতে দর্শক হলে এসেছিল। সেসময় কি হলের পরিবেশন ভালো ছিল? তারপরও তো দর্শক এসেছিল ছবি দেখতে।

তিনি বলেন, ”এ বছর অনেক সিনেমা বন্ধ হয়ে যাবে। আমার কাছে অনেক জায়গা থেকে কল আসছে। দেশের বড় বড় হলের মালিকরা বলছেন, তারা হল বন্ধ করে দেবেন। ভালো ছবি যদি না আসে, আমি নিজেও মধুমিতা হল বন্ধ করে দেব। শুধু শুধু কেন লোকসান গুনবো? অনেক উৎসব তো দেখলাম কাজ হলো না। হলের খাবার হলো ছবি। ছবিই যদি না থাকে তাহলে হল চলবে কীভাবে? বাধ্য হয়ে আমি এ সপ্তাহে সালমান শাহ’র পুরাতন ছবি চালাচ্ছি।” 

চ্যানেল আই অনলাইনকে ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ”গত সপ্তাহে পুরাতন ছবি ‘পোড়ামন ২’ চালিয়েছিলেন। ৫০ হাজার টাকাও পায়নি। মধুমিতায় যদি আড়াই লাখ টাকা না ওঠে ছবি সেটা লস প্রজেক্ট! শুধু আমি না, পুরো দেশের হল মালিকরা খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ম্যাক্সিমাম হলেই শাকিব খানের পুরাতন ছবি চলছে। আমাদের দিকটা কেউ ভাবছে না। কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারছি না। ভালো ভালো ছবিও নির্মিত হচ্ছে না। হল চালু রাখতে আমদানি করে ছবি আনতে গেলেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। সংকট থাকলে পেয়াজ, চিনিসহ নানান জিনিস আমদানি করা হয়। আমাদের তো ছবি সংকট। তাহলে আমাদের ছবি আমদানি করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন? যারা এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তারা কি হল বন্ধ করে দিতে চায়?”  

আগামী ২৫ জানুয়ারি ‘প্রেম আমার ২’ মুক্তির কথা শোনা গেলেও এখনো সেটি অনিশ্চিত। অন্যদিকে, ফেব্রুয়ারি মাস উপলক্ষে ইতোমধ্যে মুক্তি মিছিলে রয়েছে একাধিক ছবি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে ‘কারণ তোমায় ভালোবাসি’, পরের সপ্তাহে (৮ ফেব্রুয়ারি) ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ও ‘দাগ হৃদয়ে’ নামে দুই ছবি মুক্তি পাবে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ১৫ তারিখ মুক্তি পাবে আলোচিত ছবি ‘শাহেনশাহ’। ওই তারিখে মুক্তি না হলে ২২ ফেব্রুয়ারি নিশ্চিত মুক্তি পাবে। এছাড়া আগামী মাসে আরো মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘রাত্রির যাত্রী’, ‘অন্ধকার জগৎ’, ‘যদি একদিন’। এসব ছবিগুলোর মুক্তি অনেকাংশে নির্ভর করছে শাকিব খানের ‘শাহনেশাহ’ মুক্তির উপর।