বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ করেই মঙ্গলবার ভোর থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। অবশ্য তারা একে ধর্মঘট না বলে কর্মবিরতি দাবি করে বলছে, সম্প্রতি মানিকগঞ্জ ও ঢাকার আদালতে দুই চালকের শাস্তির প্রতিবাদে এই কর্মসূচি। আমরা জানি, এ ধর্মঘটের শুরু আরো কয়েকদিন আগেই- চুয়াডাঙ্গা থেকে। পরে তার আওতা বাড়িয়ে খুলনা বিভাগের ১০ জেলাকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এর কারণ গত ২২ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বাসচালক জামির হোসেনকে দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ। খুলনা বিভাগে ধর্মঘট চলার মধ্যেই সোমবার ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২০০৩ সালে সাভারে ঘটা একটি ঘটনায় ট্রাক চালক মীর হোসেন মীরুকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ওই মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, পারিবারিক রাস্তা দিয়ে মাটিভর্তি ট্রাক চলাচলে বাধা দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে খোদেজা বেগম নামের এক নারীর ওপর ট্রাক চালিয়ে দেন ওই চালক। এতে ঘটনাস্থলেই খোদেজা নিহত হন। আদালতের রায়ে দুটি ঘটনাতেই চালকের অসহনীয় ও হিংস্র মনোভাবের বহি:প্রকাশের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তারা ছিলেন বেপরোয়া এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিশেষ করে তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীর নিহত হওয়ার সময় ওই গাড়ির চালক ও তার গাড়ি ছিল সমানভাবে বেপরোয়া। শুধু তাই নয়, অাদালতের রায়ে উঠে এসেছে সেই চালকের দায়িত্বহীনতার সঙ্গে তার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া, গাড়ির ফিটনেস না থাকার পাশাপাশি গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র টেম্পারিং করে অকার্যকর রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। শুধু এই দুটি ক্ষেত্রেই নয়, এমন অনেকক্ষেত্রেই আমরা দেখছি, চালকদের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা, বেপরোয়া গতি, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিংয়ের কারণে মহাসড়ক পরিণত হয়েছে মৃত্যুকূপে। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে দিনের পর দিন অসহায় আর নিঃস্ব হতে হচ্ছে অসংখ্য পরিবারকে। আমরা বলছি না সব সড়ক দুর্ঘটনাই চালকের ইচ্ছাকৃত। কিন্তু অনেক ঘটনার পর দেখা গেছে, চালক ইচ্ছা করলেই সেসব দুর্ঘটনাকে এড়াতে পারতেন। সড়ক দুর্ঘটনারোধে সচেতনতা বাড়াতে যারা কাজ করেন, তাদের দাবি, অপ্রাপ্ত বয়স্ক, অদক্ষ এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকরাই সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এর বাইরে দুর্বল আইন আর নামমাত্র শাস্তির কারণেও চালকেরা বেপরোয়া ও নিয়ন্ত্রণহীন। সরকার একাধিকবার কঠোর আইন করতে গিয়েও পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। আমরা মনে করি, আদালতের এ দুটি রায়ই যুগান্তকারী। তাই কোন অন্যায় দাবির কাছে সরকারের নতি স্বীকার করা উচিৎ হবে না। একটি গোষ্ঠি দিনের পর দিন অন্যায় করে যাবে; আর সেই অন্যায়ের বিচারের উদ্যোগ নিলেই দেশের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার সংস্কৃতিকে বন্ধ করতে হবে। এমনিতেই ধর্মঘটের কারণে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন অসংখ্য যাত্রী। তাদের মধ্যে অনেক অসুস্থ রোগী আর শিশুও আছে। বিশেষ করে যারা চিকিৎসার জন্য ঢাকা কিংবা ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন বা চিকিৎসা শেষে ফিরছিলেন। আমরা চাই, এদেরকে আর প্রশ্রয় নয়, কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করা হোক।