করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশের জনজীবন ধীরগতিতে চললেও থেমে নেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল। গত জুন মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৯৭টি, এতে নিহত হয়েছেন ৩৬১ জন এবং আহত ৩৪৮ জন। নিহতের মধ্যে ৫৭ জন নারী ও ৩২ শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি দেশের সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
সারাদেশে খুবই সীমিত আকারে গণপরিবহন চললেও সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা আগের মতোই আছে বলে ওই প্রতিবেদন তথ্য বোঝা যাচ্ছে। বিষয়টি খুবই চিন্তার। সরকারসহ বিভিন্ন মহলের সম্মিলিত চেষ্টায়ও তা কমছে না।
প্রতিবেদনটিতে আরো উঠে এসেছে দুর্ঘটনার নানা চিত্র। কী ধরণের যানবাহন বেশি দুর্ঘটনার শিকার, কোন সময়ে ঘটছে বেশি দুর্ঘটনাসহ নানা বিষয়। এসব দিকে কার্যকর মনোযোগ দিলে দুর্ঘটনার প্রাথমিক সমস্যাগুলো সহজেই নজরে আসে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী গত মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ১০৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯৪জন, যা মোট নিহতের ৩৪.৬৮ শতাংশ। ১১টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৫৬ জন নিহত ও ২৩ জন নিখোঁজ হয়েছেন। ৬টি রেল দুর্ঘটনায় নিহত ৭ জন।
এছাড়া দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩১টি (৪৪.১০%) জাতীয় মহাসড়কে, ৯২টি (৩০.৯৭%) আঞ্চলিক সড়কে, ৫৩টি (১৭.৮৪%) গ্রামীণ সড়কে এবং ২১টি (৭.০৭%)শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলোর সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৭.৪০%, সকালে ২৮.৬১%, দুপুরে ২২.৫৫%, বিকালে ১৭.৮৪%, সন্ধ্যায় ৮.৭৫% এবং রাতে ১৪.৮১%।
উপরোক্ত তথ্যগুলো আমাদের সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তার নেতিবাচক দিকটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। চালক, উপযুক্ত যানবাহন এবং সড়ক অবকাঠামোসহ নানা বিষয়ের দুর্বলতাও উঠে আসছে। এসব বিষয়ে জরুরি নজর দেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। অতীতে সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলনের সময়ে যেসব পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়েছিল, সেগুলোর বাস্তবায়ন কতো দূর তাও খতিয়ে দেখা জরুরি। আমাদের আশাবাদ, এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা যথাযথ মনোযোগ দিয়ে সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে সচেষ্ট হবেন।