আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে শোনা যাচ্ছে বিগত দিনে জনপ্রতিনিধি হওয়া ব্যক্তিবর্গরা এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেনা। যেমন মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রভৃতি৷ হয়তো এসব জায়গায় পৌঁছলে বিতর্কিত হওয়ার ভয় থাকে সেজন্যই। সেক্ষেত্রে যারা বিগত দিনে এমপি হয়ে বিতর্কিত হয়ে জনগণ থেকে দূরে সরে গেছেন তাদের বেলায় কী হবে? আরও বলা হচ্ছে কেবল দলীয় তৃণমূলের সমর্থনই মনোনয়নের মূলে নয়। তাদের জনসমর্থনও থাকতে হবে। মনোনয়ন প্রাপ্তির ৫টি ভিত্তিমূল নির্ধারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই ভিত্তিগুলো হলো:
১.মনোনয়ন প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকা সম্পর্কে তার জ্ঞান। এলাকার ভোটার, এলাকা, সমস্যা, সম্ভাবনা ইত্যাদি সম্পর্কে প্রার্থী কতটা জানেন। নির্বাচনে জয়ী হলে এলাকা নিয়ে তার কী কী কর্ম পরিকল্পনা রয়েছে৷
২. এলাকার জন্য তার অবদান কী। যদি এমপি হয়ে থাকেন, তাহলে বিগত দিনে তার উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড কী কী। আর যদি এমপি না হন তাহলে, এলাকার জন্য তার বিশেষ অবদান কী রয়েছে৷
৩. নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগে তার অবস্থান, অাভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং গ্রুপিং এ জড়িত কিনা। আওয়ামী লীগের জন্য তার অবদান। বিশেষ করে সংকটকালে (যেমন: ওয়ান ইলেভেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০১৪, ১৫ আগুন সন্ত্রাস) তার দৃঢ়তা ও ভূমিকা। কতদিন ধরে আওয়ামী লীগ করছেন। অন্য কোনো দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন কিনা। বিশেষ করে কখনো বিএনপি বা জামাতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিনা।
৪. প্রার্থীর আর্থিক সক্ষমতা কী। সংসদ নির্বাচনের অর্থ কোথায় থেকে পাবেন। আয়ের উৎস কী। বিগত ১০ বছরে কী ধরনের কাজ করেছেন। নির্বাচনে কীভাবে ব্যয় করবেন।
৫. প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজের মূল্যায়ন। মনোনয়ন প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতি, নিয়োগ বদলী বাণিজ্য, চাঁদাবাজি এবং মাদক সন্ত্রাসের কোনো অভিযোগ রয়েছে কিনা।
শোনা যাচ্ছে, প্রচলিত ভাষায় যাদের ‘হাইব্রিড’ বলা হয়, অর্থাৎ যারা অন্য দল থেকে বিশেষ করে বিএনপি-জামাত থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে, তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবেনা। সেক্ষেত্রে যারা মনোনয়নের টিকিট পেতে দল বদল করেছে তাদের কী হবে? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জনগণের কাছে শ্রদ্ধার প্রার্থী ছাড়া কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। যারা জয়ী হতে পারবে না, তাদের বাদ দেয়া হবে। সত্যিই কি এমনটি হতে চলেছে? নাকি এগুলো শুধুই বলার জন্য বলা?
একাদশ সংসদ নির্বাচন দশম সংসদ নির্বাচনের মতো এত সহজ হবেনা৷ এ নির্বাচন হতে যাচ্ছে তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি তাদের মন্ত্রী এমপিদের ক্ষমতার চরম ঔদ্ধত্যে যারা একদিন ভোট দিয়েছিল তারাই একসময় মুখ ফিরিয়ে নেয়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তখন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐক্যমতের সরকারের কেউ কেউ ক্ষমতা পেয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে৷ যার জবাব দেয় জনগণ ২০০১ সালে। যে বিএনপিকে জনগণ ১৯৯৬ সালে ফেল করিয়েছিলো আওয়ামী লীগের প্রতি বিরক্ত হয়ে সেবার তাদেরকেই জিতিয়ে দিলো। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এলো আবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট৷ শুরু হলো ক্ষমতার উগ্রতা, ভিন্নমতাবলম্বী দমন, সংখ্যালঘু নিপীড়নসহ সুপরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। ২০০১ সালের পর হতে ২০০৬ পর্যন্ত সে সময়ের জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে চোখ বুলালেই তা বোঝা যাবে।
১ জুন ২০০২, দৈনিক আজকের কাগজ: সংখ্যালঘু ও জনসাধারণের মধ্যে উত্তেজনা: মলমগঞ্জ বাজারের কালীমন্দিরের জায়গা দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে/২ জুন ২০০২, দৈনিক সংবাদ: এবার বিএনপি ক্যাডাররা দখল করে নিয়েছে শ্মশান/৩ জুন ২০০২, দৈনিক যুগান্তর: ঝিনাইদহে সন্ত্রাসীরা ছাত্রলীগ নেতাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দু’পা ভেঙে দিয়েছে/৩ জুন ২০০২, দৈনিক যুগান্তর: রাজশাহীতে আদিবাসী শিশু খুন/৪ জুন ২০০২, দৈনিক জনকণ্ঠ: তানোরের রাতৈল গ্রামের আদিবাসীরা বিএনপি ক্যাডারদের হুমকিতে সন্ত্রস্ত/৪ জুন ২০০২, দৈনিক প্রথম আলো: নওগাঁয় পূজামণ্ডপে আগুন ধরিয়ে দিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর/৪ জুন ২০০২, দৈনিক যুগান্তর: বরিশালে যুবককে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টা: অপহরণকারীকে পুলিশে সোপর্দ/৫ জুন ২০০২, দৈনিক সংবাদ: ডোমারে একটি সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িঘর লুট, অগ্নিসংযোগ ও স্ত্রী-কন্যাদের ধর্ষণের হুমকি/৬ জুন ২০০২, দৈনিক জনকণ্ঠ: লালমোহনে সংখ্যালঘু গৃহবধূ খুন, গ্রেফতারকৃত দুই বিএনপি নেতাকে থানা থেকে ছিনতাই/৮ জুন ২০০২, দৈনিক যুগান্তর: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিনদুপুরে ডাক্তার অপহরণ: ছাত্রদল নেতাসহ ৩ জন গ্রেফতার/১০ জুন ২০০২, দৈনিক জনকণ্ঠ: হবিগঞ্জে সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীর দোকানে ছাত্রদল ক্যাডারের চাঁদাবাজি, মালিক আহত, পরে ক্যাডারকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ/১২ জুন ২০০২, দৈনিক আজকের কাগজ: ভারত চলে যাওয়ার নির্দেশ, বানারীপাড়ায় একটি সংখ্যালঘু পরিবার সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি/১৫ জুন ২০০২, দৈনিক ভোরের কাগজ: চাঁদা না পেয়ে সংখ্যালঘু কৃষকের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে জোট সন্ত্রাসীরা: মামলা না নিয়ে থানার আপোসের পরামর্শ/১৬ জুন ২০০২, দৈনিক জনকণ্ঠ: মহাদেবপুরে ফের আদিবাসী উচ্ছেদের পাঁয়তারা বিএনপি ক্যাডারদের সরেনের ভাগ্যবরণের হুমকি/২০ জুন ২০০২, দৈনিক ভোরের কাগজ: গৌরনদীতে ছিনতাইয়ের টাকা উদ্ধার করে ছাত্রদল ক্যাডারদের ভাগ-বাটোয়ারা/২২ জুন ২০০২, দৈনিক ভোরের কাগজ: ঝালকাঠিতে সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলার পর এবার তাদের বিরুদ্ধেই মামলা
২২ জুন ২০০২, দৈনিক জনকণ্ঠ: চাঞ্চল্যকর তথ্য, বাগেরহাটে ডাকাতি ও সংখ্যালঘু নির্যাতনে বিএনপি নেতারা জড়িত, আদালতে ডাকাত সর্দারের স্বীকারোক্তি৷ বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় মদতে উত্থান ঘটে জঙ্গিবাদের৷ একদিন ও একই সময়ে দেশের ৬৩টি জেলায় বোমা হামলা চালানো হয়৷ বিচারক খুন হন বাসভবনে৷ বাংলা ভাইয়ের গাছে ঝুলিয়ে মানুষকে নির্যাতনের রোমহর্ষক দৃশ্যে এখনও গায়ে কাঁটা দেয়৷ আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী এস এম কিবরিয়াকে রাস্তায় গ্রেনেড মেরে হত্যা করা হয়৷ বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে চালানো হয় গ্রেনেড হামলা। অল্পের জন্য বেঁচে যান আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির ক্ষমতার ঔদ্ধত্যে জনগণ যখন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তখনই ইয়াজউদ্দীনকে দিয়ে তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নানান চাতুরি শুরু করে। গণহাততালি পেয়ে তখন ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায় সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দীনের সরকারের আগমনকে জনগণ শুরুতে সমর্থন জানালেও পরবর্তীতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ক্ষমতার সান্নিধ্য বারবার দলকে জনগণ হতে দূরে ঠেলে দিয়ে চলেছে৷
মনোনয়ন প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নিয়োগ বদলী বাণিজ্য, চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে কিনা ও তার বিরুদ্ধে মাদক এবং সন্ত্রাসের কোনো অভিযোগ রয়েছে কিনা। এসব অভিযোগ কি কেবলই নবম ও দশম সংসদে নির্বাচিত এমপি মন্ত্রীদের বেলায় প্রযোজ্য নয় কি?
নবম ও দশম সংসদে ক্ষমতাসীন দল ছিল আওয়ামী লীগ৷ নবম সংসদ নির্বাচন ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ৷ কারণ সেসময় বিএনপিও নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল৷ দশম সংসদে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় সেটা হয়ে ওঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন৷ ৩০০ জন এমপির মধ্যে ১৫৪ জন এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়৷ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসা এমপিদের কতজন এবার মনোনয়ন পাচ্ছে? তাদের মধ্যে কতজন একাদশের প্রতিযোগিতায় জিতে আসতে পারবে?
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়ে পাঁচ বছরে কে কতটুকু জনপ্রিয় ও দল প্রিয় হতে পেরেছে সেগুলো দিয়েই কি মনোনয়ন স্থির করবে মনোনয়ন বোর্ড? বিরোধী দলে থাকার সময়ে যারা নির্যাতিত হয়েছে ওয়ান ইলেভেনের সময় হয়েছে হয়রানির শিকার ও যাদের ইমেজ ক্লিন তারা কি সত্যিই পাবে একাদশে মনোনয়ন? ক্ষমতার স্পর্শে যারা নিজেরা বিতর্কিত হয়েছে ও দলকেও করেছে বিতর্কিত তারা নির্বাচনে দাঁড়ালে কি প্রতিপক্ষ চোখে আঙুল দিয়ে তাদের দোষত্রুটির কথা উল্লেখ করে বক্তৃতা দেবেনা? বিএনপির একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী বলেছে, আর যাই হোক গম চুরি, টিন চুরি ও রিলিফ চুরি করিনি ও করবোনা৷ তাদের প্রতিপক্ষের এমন অভিযোগ থাকলে কি তা না বলবে? বরং প্রতিপক্ষের জনমত হ্রাস করিয়ে নিজেদেরটা বাড়াতে কি আরও বাড়িয়ে বলবেনা? মনোনয়ন বোর্ড কি তা ভাববে? ভোটারদের মাঝে জনপ্রিয়তা অনেক সময় হুজুগেও হয়ে থাকে৷ বিতর্কিতরাও ভোটারদের নজর কেড়ে নিতে পারে৷ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর৷ সম্প্রতি তার ফাঁসির রায় হয়েছে৷ তিনি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, মদন ও খালিয়াজুরী আসনে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার সদস্য আব্দুল মমিনকে হারিয়ে নির্বাচিত হন৷ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নেত্রকোনায় কয়েকটি হত্যাকাণ্ডও সংঘটিত হয় তার সময়ে৷ বোমা হামলা হয় নেত্রকোনার উদিচী কার্যালয়ে৷ এ হামলায় নিহত নিরীহ যাদব পালকে হিন্দু জঙ্গী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে নাকি বাবরের ইমেজকে পুঁজি করে মোহনগঞ্জ, মদন ও খালিয়াজুরী এলাকা হতে এবার প্রার্থী হতে চলেছেন তারই স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী৷ জনমতের দিক থেকে তিনিই এগিয়ে৷ নেত্রকোনা জুড়ে রয়েছে বাবরের বিশাল জনমত৷ এ জনসমর্থনকে ডিঙ্গিয়ে জয়ের দিকে যেতে চাইলে প্রয়োজন অবিতর্কিত ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থী৷ যাদের ললাটে ক্ষমতাবাজী ও দুর্নীতি অনিয়মের কোন চিহ্ন পড়েনি এখনও৷ নেত্রকোনায় এমন প্রার্থী কি কেউ আছে? নেত্রকোনায় কখনও এমপি ছিলনা ও দুর্দিনে নির্যাতিত হয়েছে এমন মনোনয়ন প্রার্থী কে কে আছে? জনগণ যার কোন ত্রুটি দেখাতে পারবেনা এমন প্রার্থী কয়জন আছে? নেত্রকোনা সদর-বারহাট্টা এলাকায় রয়েছেন দেড় ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী৷ দাবিদাররা গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের অপরাপর মনোনয়ন প্রত্যাশিদের চেয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণে ভাষণ দিচ্ছেন। পূর্বধলা আসনে বর্তমানে এমপি রয়েছেন জাসদ গণবাহিনীর নেতা কর্নেল তাহেরের অনুজ ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল৷ এখানে সংরক্ষিত আসনে মহিলা এমপি রয়েছেন কর্নেল তাহেরের বিধবা পত্নী লুৎফা তাহের৷ একই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন৷ বেলাল ও আহমদ হোসেনকে ঘিরে এখানে দলীয় গ্রুপিং তুঙ্গে৷ একজন মনোনয়ন পেলে অপরজন তুমুল বিরোধিতা করবে সেখানে৷ পূর্বধলায় ক্লিন ইমেজের নিরপেক্ষ প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার তুহিন আহমেদ খান৷ দল ও জনগণের মাঝে যার কোন দোষ বের করা সম্ভব নয়৷ যার বিরুদ্ধে সহিংসতা, উগ্রতা ও গ্রুপিংয়ের কোন নজীর নেই এমন প্রার্থীরা কি এবার পেতে পারে মনোনয়ন?
নেত্রকোনার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী আসনে ২০০৬ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা শফী আহমেদ। অতঃপর ওয়ান ইলেভেনে হয়েছেন নির্যাতিত। অতঃপর ২০০৮ সালেও মনোনয়ন প্রত্যাশী হন তিনি কিন্তু মনোনয়ন পাননি। ২০১৪ সালে এসেও তিনি আবার মনোনয়ন চাইলেন তখনও পেলেন না। এবারও মনোনয়ন চাইছেন তিনি। এ আসনে বেশ হাঁকডাক করে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থী হতে চলেছেন ফাঁসির রায়ে দণ্ডিত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী৷ এখানে ভোটারদের বলতে শোনা যায়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করলেও এ আসনটি ছাড়তে হবে শ্রাবণীকে। ২০১৪ সালে এখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েছিলেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল মমিনের স্ত্রী রেবেকা মমিন৷ উল্লেখ্য লুৎফুজ্জামান বাবর আব্দুল মমিনকেও ভোটে হারিয়েছিল। এখানে এবার তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস সুস্পষ্ট৷
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন৷ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের মেজো ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন সৈয়দ আশরাফের নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়নপত্র কিনেছেন। উল্লেখ্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের আরেক ছেলে রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক মনোনয়ন চাচ্ছেন ইটনা-মিটামইন থেকে। আব্দুল হামিদ স্পিকার থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে তৌফিক বাবার ছেড়ে দেয়া আসনে সাংসদ হন। ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন ব্যবসায়ী আলহাজ্ব আফজাল হোসেন৷ রাষ্ট্রপতির আশীর্বাদ পেতে ব্যর্থ হয়ে বারবার মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন। এবার কি তার বঞ্চনার অবসান হবে? এমপি আফজাল হোসেন উপদলীয় স্বার্থরক্ষায় দলের ভিতরেই চরম দলাদলি সৃষ্টি করে রেখেছেন বলে জানা যায়। বিরোধী দলের চেয়ে দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে তুলনামূলক মামলার সংখ্যা অধিক। প্রবীণ ও ত্যাগীরা স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে জোট বেঁধেছেন এই সাংসদের মনোনয়নের বিরুদ্ধে। এমনকি আফজাল হোসেন মনোনয়ন পেলে তা ঠেকাতে কঠিন কর্মসূচিরও ঘোষণা দেয়া হয়েছে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে৷ মনোনয়ন বোর্ড কি এসব যাচাই বাছাই করেই মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন? মনোনয়ন কি এবার সত্যিই পাবে জনপ্রিয়, তৃণমূল বান্ধব, ত্যাগী, সজ্জন ও রাজনৈতিক যোগ্যতা সম্পন্নরা?
এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)