বর্তমানে স্মার্টফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গে পরিণত হয়েছে। একটি ডিভাইসে অনেক কাজ সেরে নেওয়া যায় বলে এর প্রয়োজনীয়তা এবং জনপ্রিয়তা দিন দিনই বাড়ছে। ফোনকল, ইমেইল, ছবি তোলা, সামাজিক যোগাযোগ কিংবা ডকুমেন্ট তৈরি কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার, সবই করে নেওয়া যাচ্ছে হাতের মুঠোয় থাকা এই যন্ত্রটিতে।
তবে বাজারে রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হাজার মডেলের স্মার্টফোন, যেগুলোর কিছু সাধারণ ফিচার থাকলেও কিছু ফিচারে রয়েছে পার্থক্য। এর কোনোটি হয়ত একেবারেই সাধারণ মানের এবং কিছু বেসিক কাজের জন্য, আবার কোনোটি দিয়ে করা যাবে অ্যাডভান্সড লেভেলের কাজও। কোনোটির ডিসপ্লে এলইডি তো কোনোটির আবার অ্যামোলেড। আর তাই স্মার্টফোন কেনার আগে অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন প্রয়োজনীয় এবং পছন্দের ডিভাইসটি কিনতে গিয়ে।
যারা নতুন স্মার্টফোন কেনার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য আজ তুলে ধরা হলো স্মার্টফোন কেনার আগে লক্ষণীয় বিষয়গুলো-
১. বিল্ড কোয়ালিটি
ফোনের বিল্ড কোয়ালিটিই অনেকটা বলে দেবে ফোনটি স্থায়িত্ব কতদিন হতে পারে। বর্তমানে বাজারে মেটালিক এবং প্লাস্টিক বডির স্মার্টফোন রয়েছে। তবে কিছু স্মার্টফোনে আবার আছে গ্লাস কোটেড প্যানেলও। আপনার হাত থেকে যদি প্রায়শই ফোন পড়ে যাওয়ার অতীত ইতিহাস থেকে থাকে, তাহলে মেটালিক বডির স্মার্টফোন কেনাই ভালো হবে। তবে প্লাস্টিক বডিও চলতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই গ্লাস কোটেড প্যানেল নয়।
২. ডিসপ্লে
ফোনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো এর ডিসপ্লে। যারা ফোনের অধিকাংশ সময় ভিডিও দেখেন কিংবা ছবি সম্পাদনা করেন, তাদের জন্য ৫.৫ ইঞ্চি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬ ইঞ্চি ফুল এইচডি কিংবা কিএইচডি ডিসপ্লে বেশ কার্যকর। তবে আপনার স্মার্টফোন যদি সাধারণ ব্যবহার যেমন ফোন করা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং বা ইমেইল পাঠানোর কাজেই বেশি ব্যবহার হয়, সেক্ষেত্রে ৫ ইঞ্চি ডিসপ্লের স্মার্টফোনই যথেষ্ট। এই সাইজের স্মার্টফোন আকারে একটু ছোট হওয়ার কারণে সহজেই হাতে ধরা যায়। ৬ ইঞ্চির থেকে বড় ডিসপ্লের স্মার্টফোন এক হাতে ব্যবহার করা বেশ ঝামেলার।
৩. প্রসেসর
একটি স্মার্টফোন থেকে কতটা ভালো পারফরমেন্স পাওয়া যাবে, তার অনেকটাই নির্ভর করে এর প্রসেসিং পাওয়ার বা প্রসেসরের উপর। এর সাথে আছে অপারেটিং সিস্টেম, ইউআই প্রভৃতিও। ছবি সম্পাদনা, ভিডিও দেখা কিংবা ডকুমেন্ট তৈরি ও সম্পাদনা, গেম খেলা কিংবা অন্য কোনো ভারী কাজে ফোন বেশি ব্যবহার হলে স্ন্যাপড্রাগন ৬৫২ কিংবা স্নাপড্রাগন ৮২০ অথবা ৮২১ ভালো পারফমেন্স দিবে। তবে একেবারে সাধারণ কিছু ব্যবহারের জন্য মিডিয়াটেক প্রসেসর যথেষ্ট।
৪. ক্যামেরা
যত বেশি মেগাপিক্সেল, ক্যামেরা তত ভালো, এমন একটি ভুল ধারণা অনেকের মাঝেই আছে। ক্যামেরা কতটা ভালো, তা নির্ভর করে ক্যামেরা অ্যাপারচার, আইএসও লেভেল, পিক্সেল সাইজ, অটোফোকাস এবং আরও কিছু ফিচারের উপর। রিয়ার ক্যামেরা কিংবা ফ্রন্ট ক্যামেরা, উভয়টির ক্ষেত্রেই এই কথা প্রযোজ্য। ক্যামেরা যদি বেশি মেগাপিক্সেল হয়, তাহলে ছবির সাইজ বাড়বে। ফলে ছোট স্ক্রিনে দেখলে ছবি আরও ঝকঝকে মনে হবে। ফোনে ছবি তুলতে পছন্দ করেন, এমন ব্যবহারকারীদের জন্য ১২ কিংবা ১৬ মেগাপিক্সেল সেন্সর, এফ/২.০ বা এর থেকে কম অ্যাপারচারের ক্যামেরা দিয়ে বেশ দ্রুত ছবি তোলা সম্ভব।
৫. ব্যাটারি
ফোনের ব্যবহারের উপর নির্ভর করে ব্যাটারি পারফরমেন্সের হেরফের ঘটে থাকে। সাধারণত যারা ফোনে অধিক সময় ধরে গেম খেলে, ভিডিও দেখে কিংবা অন্যান্য ভারী কাজ করে, তাদের জন্য অন্তত ৩৫০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির স্মার্টফোন প্রয়োজন। তবে একেবারে সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৩ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারিই চলনসই যা দিয়ে একবার চার্জ দিলে অনায়াসেই একদিন কাটিয়ে দেওয়া যাবে।
৬. অপারেটিং সিস্টেম ও ইউজার ইন্টয়ারফেস
স্মার্টফোন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এই দুটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ফোনটির ডিসপ্লেতে দৃশ্যমান সবকিছু কেমন হবে, তা নির্ভর করে ইউজার ইন্টারফেসের উপর। মটোরোলা, গুগল নেক্সাস প্রভৃতি ফোনে অ্যান্ড্রয়েডের একেবারে মূল ইউযার ইন্টারফেস থাকলেও আসুস, সনি, স্যামসাং, হুয়াওয়েসহ বেশ কিছু ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনে নিজস্ব ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে স্টাইল এবং অনেক ক্ষেত্রেই ফিচারে স্বকীয়তা বজায় রাখা সম্ভব হয়।
৭. স্টোরেজ
ফোনের বিল্ট ইন স্টোরেজের একটি বড় অংশই দখল করে রাখে অপারেটিং সিস্টেম এবং ফোনের ব্লোটওয়্যারগুলো। ফোনে খুব বেশি অ্যাপ ইনস্টল না করলে ৩২ গিগাবাইটেই কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব। অন্যথায় ৬৪ গিগাবাইট কিংবা এর বেশি স্টোরেজ ক্যাপাসিটির ফোন কেনা ভালো। তবে ফোনে মেমোরি কার্ড ব্যবহারের সুবিধা থাকলে ১৬ গিগাবাইটেও কাজ চালানো সম্ভব।
৮. নিরাপত্তা ফিচার ও অন্যান্য
বর্তমানে স্মার্টফোনগুলোতে বিভিন্ন নিরাপত্তা ফিচার ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের ব্যবহার এখন অত্যাধিক। তবে কিছু হাইএন্ড ডিভাইসে আইরিস স্ক্যানারও ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধুমাত্র ফোন লক কিংবা আনলক করার জন্যই নয়, এর মাধ্যমে ফোনে থাকা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও নিরাপদ রাখা সম্ভব।
৯. অডিও
যারা ফোনে গান শুনতে পছন্দ করেন কিংবা অতিমাত্রায় ভিডিও দেখেন, তাদের জন্য ফোনের অডিও সিস্টেম ভালো হওয়া আবশ্যক। ফোনে যদি ফ্রন্ট ফেসিং স্পিকার থাকে, তাহলে ভালো সাউন্ড পাওয়া যাবে। অন্যথায় ফোনের নিচের দিকে কিংবা পেছনের স্পিকারই ঠিক আছে।
১০. হেডফোন জ্যাক ও ইউএসবি
বর্তমানে প্রায় সব স্মার্টফোনেই ইউএসবি এবং ইউএসবি-সি টাইপ পোর্ট রয়েছে। তবে স্মার্টফোনে ইউএসবি-সি টাইপ পোর্টের ব্যবহার বাড়ছে। আর তাই স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে এই পোর্ট সমৃদ্ধ স্মার্টফোন ভবিষ্যতের কিছু ঝামেলা থেকে হয়ত আপনাকে রেহাই দিবে।
অন্যদিকে অনেক স্মার্টফোন ব্র্যান্ড এখন ৩.৫ মিমি. হেডফোন জ্যাকের পরিবর্তে হেডফোনের জন্যও ইউএসবি-সি পোর্ট ব্যবহার করছে।