একটু পর পর নিজের স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে না তাকালে ফারিয়ার চলেই না। মিনিটে মিনিটে-ঘণ্টায় ঘণ্টায় মাথা ঝুঁকিয়ে স্মার্টফোনটায় চোখ না রাখলে যেনো থাকতে পারেন না তিনি। গভীর রাত পর্যন্ত স্মার্টফোনের পর্দায় চোখ আটকে রাখা এবং সকালে ঘুম থেকে জেগেই আবার ফোনের স্ক্রিনে আটকে থাকাটাই তার অভ্যাস!
তার ভয় হয়, স্মার্টফোনটি হাতছাড়া হলে কিভাবে থাকবো?
এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ভীতির নাম ‘নোমোফোবিয়া’ বা নো মোবাইল ফোবিয়া । মোবাইলফোন নেই! এমন ‘ভীতিকর’ পরিস্থিতি যারা ভাবতেই পারেন না তাদের জন্যই নতুন যুগের নতুন এই শব্দ।
তবে সারাদিন মোবাইল ফোনে মেতে থাকাদের পরিণতি সুখকর নয় এমন বার্তা দিচ্ছে একাধিক জরিপ,গবেষণা।
মানুষের মোবাইলফোন ব্যবহারের মাত্রা নিয়ে গবেষণারত নিউ ইয়র্ক স্টেট ইউনির্ভাসিটির সহকারি অধ্যাপক কাগলার ইলদিরিম জানিয়েছেন স্মার্টফোন আসক্তি ব্যক্তির জীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
তিনি বলেন,‘অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার ব্যক্তির সমাজ জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর চেয়েও বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে সম্পর্কের বেলাতে।’
স্মার্টফোন আসক্তি ব্যক্তির স্বাভাবিক কর্মক্ষমতাকে হ্রাস করে জানিয়ে তিনি বলেন,‘স্মার্টফোন এবং এই ফোনে সার্বক্ষণিক আসা নোটিফিকেশন দেখার অভ্যাস ব্যক্তির কর্মক্ষমতা এবং পড়ালেখার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ মন স্মার্টফোনে পড়ে থাকলে মনস্থির করে কাজে-পড়ায় মন দেয়া প্রায় অসম্ভব।’
রেডিওলজিক্যাল সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকার একটি ছোট্ট গবেষণাপত্রও দিচ্ছে এমন বার্তা। প্রতিবেদনে উঠে আসা ফলাফল বলছে, স্মার্টফোন আসক্তি ব্যক্তির মস্তিষ্কের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলছে।
১৯ জন স্মার্টফোন আসক্ত এবং ১৯ জন অনাসক্ত, মোট ৩৮ জন কিশোরের ওপর একটি গবেষণা করে কোরিয়া ইউনিভার্সিটি। গবেষণা দেখা যায়, আসক্তি নেই এমন ১৯ জন কিশোরের তুলনায় ১৯ জন আসক্ত কিশোরের মস্তিষ্কে গামা অ্যামিনোবোটিক অ্যাসিড বা গাবা’র পরিমাণ বেশি।
গবেষণা প্রধান ড. ইয়ুং সুক সেও বলেন,‘গাবা মস্তিষ্কে নিউরোনকে বাধাগ্রস্থ করে। এটা ব্যক্তিকে উদ্বেগ, নিদ্রাহীনতা এবং বিষন্নতার পাশাপাশি অমনযোগী করে তোলে।’
তাহলে উপায়?
প্রযুক্তির এই সময়ে একেবারেই প্রযুক্তিহীন থাকাটা যৌক্তিক নয়। তবে সব কিছুরই সীমা আছে। সেই সীমা নিজেকেই ঠিক করতে হবে, নিজের স্বার্থে। অতিরিক্ত ভার্চুয়াল সামাজিক যোগাযোগের চেয়ে সামনাসামনি যোগাযোগ এবং পরিবার-স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটানোর পুরোনো কায়দা আবারও রপ্ত করতে হবে। আর আসক্তির মাত্রা বেশি হয়ে গেলে দিনের কিছু কিছু সময়ে স্মার্টফোন বন্ধ রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা স্মার্টফোনে সামাজিক মাধ্যম থেকে বেশি দূরত্ব বজায় রাখতে বলছেন। সম্ভব হলে ফেসবুক,টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের অ্যাপগুলো আনইন্সটল করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।