‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ অমর এ গানের সুরস্রষ্টা আলতাফ মাহমুদ। ক্ষনজন্মা এ প্রবাদ পুরুষের আজ জন্মদিন। ১৯৩৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশালের মুলাদি থানার পাতারচর গ্রামের ফকিরবাড়ীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
ছোট থেকেই ‘ঝিলু’ পরিচিতি পাওয়া আলতাফ মাহমুদ বিশ বছর বয়সেই সৃষ্টি করেছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ট শ্রদ্ধাঞ্জলির গান-আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী। শৈশব থেকেই চঞ্চল স্বভাবের আলতাফের ছবি আঁকা ও গুনগুন করে গান গাওয়া ছিল নিত্য অভ্যাস। লেখাপড়ায় মনোযোগী না হলেও তিনি ছিলেন মেধাবী ও বুদ্ধিমান।
বরিশাল জিলা স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৮ সালে আলতাফ মাহমুদ কলকাতা বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিক পাস করে ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হন। সেখানে বেশি দিন লেখাপড়া করা হয়নি। কলকাতা আর্ট কলেজে কিছুদিন লেখাপড়া করেন।
১৯৪৫-৪৬ সালে তরুণ মাহফিল সংগঠনের একজন কর্মী হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৫০ সালে ঢাকার সেন্ট্রাল রোডে একটি ভাড়া বাসায় তিনি থাকতে শুরু করেন। সঙ্গী হিসেবে পেলেন মুনিম, জাহান আরা লাইজু ও শাহাদাতকে। ধূমকেতু শিল্পী সংঘের একজন বেহালাবাদক হিসেবে এসে অল্পদিনের মধ্যে প্রতিভা, অবিস্মরণীয় কল্পনাশক্তি, সংগীতের প্রতি একাগ্রতায় স্থান করে নিলেন সংগঠনের সংগীত পরিচালক হিসেবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিল্পীদের সঙ্গে তিনি যোগ দিতেন।
ঢাকায় আসার কিছুদিনপর কার্জন হলে একটি গানের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তারপর থেকে আলতাফ মাহমুদের নাম ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। যেখানেই অনুষ্ঠান হতো, সেখানেই আলতাফ মাহমুদকে পাওয়া যেত। আলতাফ মাহমুদ পাকিস্তান যুবলীগ সংগঠনের একজন সদস্য ছিলেন। যুবলীগের সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের অন্যতম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ত্ব ছিলেন তিনি।
১৯৫৫ সালের দিকে সংগীত পরিচালক দেবু ভট্টাচার্য ছিলেন চলচ্চিত্র সংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। আলতাফ মাহমুদের চলচ্চিত্র সংগীতের শিক্ষাগুরু ছিলেন দেবু ভট্টাচার্য। ১৯৫৫-৫৬ সালে আলতাফ মাহমুদ করাচি যান। করাচি রেডিও ও চলচ্চিত্রের বেশ কিছু গান করেন।
প্রথমে তিনি সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। পরবর্তী সময়ে এককভাবে অনেক গানের সংগীত পরিচালনা করেন। এদিকে পূর্ব পাকিস্তানে আবদুল জব্বার খানের পরিচালনায় প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ মুক্তি পায়। ঢাকায় ছবি নির্মাণ শুরু হলে আলতাফ মাহমুদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় ঢাকার চলচ্চিত্রে।
১৯৬৩ সালে আলতাফ মাহমুদ বেবী ইসলাম পরিচালিত ‘তানহা’ ছবিতে প্রথম সংগীত পরিচালনা করেন। এরপর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি ২৩টি ছবির সংগীত পরিচালনা করেন। সুরকার ও সংগীত পরিচালক শহীদ আলতাফ মাহমুদ ছিলেন রাজনৈতিক সচেতন ও দেশপ্রেমিক শিল্পী।
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর ছিল বলিষ্ঠ ভূমিকা। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার কারণে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আলতাফ মাহমুদকে ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট ধরে নিয়ে যায়। তিনি আর ফিরে আসেননি।