চ্যানেল আই’র শুরু থেকে রন্ধনশিল্প বিষয়ক অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কেকা ফেরদৌসীর নাম। নিয়মিত অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্রতিবছর রমজান মাসে তিনি উপস্থাপনা করেন বিশেষ অনুষ্ঠান ‘মনোহর ইফতার’। ‘প্রাণ’র সৌজন্যেএবারের রোজার মাসেও হতে যাওয়া ওই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি আর নিজের জীবনের কিছু কথা বললেন কেকা ফেরদৌসী।
বললেন, শুরু থেকেই ইচ্ছে ছিলো নতুন কিছু করার। ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে চ্যানেল আই যখন যাত্রা করে, তখন দর্শকদের নতুন ধাঁচের অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য ডিসেম্বর মাস থেকে তিনি শুরু করেন নতুন নতুন রেসিপি নিয়ে রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান।
ওই বছরের ডিসেম্বর মাসেই ছিলো রোজা। তাই দর্শকদের সামনে ইফতারের নতুন সব আইটেমে উপস্থিত হন ‘মনোহর ইফতার’ অনুষ্ঠান নিয়ে।
কিন্তু শুরুটা খুব সহজ ছিলো না। স্বামী মুকিত মজুমদার বাবু ও মা রাবেয়া খাতুনের অনুপ্রেরণা থেকেই ধীরে ধীরে এগিয়ে গেছেন রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসী।
অন্যদের সঙ্গে কেকা ফেরদৌসীর অনুষ্ঠানের পার্থক্য: কোন্ খাবারে কী ধরণের পুষ্টিগুণ আছে তা বোঝানোর জন্য প্রথমে তিনি পুষ্টিবিদ ও ডাক্তারদের নিয়ে আসেন।
‘অনুষ্ঠানটি আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যখন তারকারা আমার রান্নাঘরে এসে আমার সঙ্গে রান্না করা শুরু করেন। কিন্তু এরইমধ্যে অন্যান্য চ্যানেলে একইরকম অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয়ে যায়। তাই দর্শকদের একঘেঁয়েমি দূর করতে ২০০৬ সালে আমার স্বামীর অনুপ্রেরণায় আমার রান্না ঘরকে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নিয়ে যাই বিদেশের মাটিতে,’ অনুষ্ঠানটির এগিয়ে চলার কথা জানাতে গিয়ে বিভিন্ন সময় যোগ-বিয়োগের কথা তুলে ধরেন দেশের বিশিষ্ট এ রন্ধনশিল্পী।
কেকা ফেরদৌসী বলেন, আমার নতুন ধরণের প্রস্তাব চ্যানেল আই পছন্দ করেছিলো, কারণ চ্যানেল আই নিজেও নতুনত্বে বিশ্বাসী। সেই থেকে ‘মনোহর ইফতারে’ যোগ হয় ভিন্ন মাত্রা আর নতুন আকর্ষণ। এর মধ্য দিয়ে ‘মনোহর ইফতার’ যেমন পৌঁছে গেছে প্রবাসী বাঙ্গালিদের কাছে, তেমনই তাদের নিয়ে এসেছি দেশের মানুষের কাছে।
এছাড়াও বিভিন্ন দেশে থাকা বাঙ্গালিদের কাছ থেকে নতুন ধরণের চমৎকার সব রেসিপি উপহার দিয়ে গেছেন তিনি।
শুধু টিভি চ্যানেলেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও রান্না নিয়ে কাজ করেন কেকা ফেরদৌসী। কারণ তার কাছে রান্না একটি শিল্প।
তাই ১৯৯৪ সাল থেকে নিজের রান্না শেখানোর স্কুল চালাচ্ছেন তিনি। রান্নাঘরে রেঁধেই তার কাজ শেষ হয়ে যায় না। এখনো তিনি দেশ বিদেশের লেখকদের রান্না বিষয়ক বই পড়েন। নতুন কিছু শিখতেও সবসময় আগ্রহী তিনি।
নিজের গুণ নিয়ে অহংকার করেন না, অন্যের কাছ থেকে নতুন কিছু শিখতে পিছপাও নন বলে জানান তিনি। দেশ বিদেশের বিভিন্ন রেসিপি সবার কাছে সহজ করে পৌঁছে দিতে ও রান্নাকে একটি শিল্পে পরিণত করতে ৯টি বইও লিখেছেন কেকা ফেরদৌসী। আগামীতে তার আরো নতুন বই আসবে।
রান্না করতে অনেক ভালোবাসেন বলে উল্লেখ করে কেকা ফেরদৌসী বলেন, আমার মাকে যেমন ভালোবাসি, তেমনই ভালোবাসি রান্নাকে। মা ও রান্নাকে আমি আলাদা করতে পারি না।
‘আমার কাছে জীবনের পেশা, নেশা সব কিছুই হলো রান্না। তবে সবকিছুর মধ্যে দেশি আইটেম রান্না করতে বেশি ভালোবাসি। দেশের ঐতিহ্যবাহী রান্নার রেসিপি আমি ভেঙ্গে নতুন নতুন ফিউশন করতে পছন্দ করি,’ নিজের কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, সবকিছুর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টিশীলতা।
এবারের ‘মনোহর ইফতার’ আয়োজন সম্পর্কে তিনি জানান, রমজানে পুরো মাসজুড়ে কাতারে থাকা প্রবাসী বাঙ্গালিদের কাছ থেকে সবাই ঐতিহ্যবাহী খাবারের সঙ্গে দেখতে পাবে নতুন এবং অভিনব সব রেসিপি।
রমজানের পর ঈদেও থাকে তার বিশেষ আয়োজন। তার উপস্থাপনায় রান্না নিয়ে এ ধরণের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান বাংলাদেশে প্রথম। এবারও ঈদের দিন বিনোদন এবং রন্ধনশিল্পের মিশেলে চ্যানেল আই দর্শকদের চমকে দেবেন কেকা ফেরদৌসী।