জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সারের প্রতিষ্ঠান ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন্স গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজন করেছিলো ‘অরিজিৎ সিং উইথ সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা’। রক্তঝরা মার্চে বাইরের দেশের সঙ্গীতশিল্পী নিয়ে শমীর এতো মাতামাতি দর্শকসহ সঙ্গীত অঙ্গনের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি।
সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দেয় এ নিয়ে শমীর বক্তব্য। তিনি অরিজিৎ কনসার্টের মধ্যভাগে মঞ্চে উঠে বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করি, বাঙালি গান শোনে। বাঙালি নাটক দেখে। বাঙালি সংস্কৃতিকে ভালোবাসে।’
এরপর শমী উল্লেখ করেন, ‘এটা অনেক বড় স্বপ্ন ছিলো। এতো বড় একটি স্বপ্ন সফল হয়েছে এক বছর ধরে। আমাদের এই স্বপ্নকে সফল করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’
সঙ্গীতঅঙ্গনের শিল্পীরা বলছেন শমী কোন স্বপ্নপূরণের কথা বলছেন? এবিষয়ে অবশ্য গায়িকা আলিফ আলাউদ্দিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আজ থেকে বেশ অনেক বছর আগে সালমান খান ঢাকায় এসেছিলেন। গানের তালে হাত নাড়িয়ে তারপর চলে গেলেন। সেই অনুষ্ঠানে আমারও গাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু সেই একই কারণে গাইনি। আমার এসব বিষয় গায়ে লাগে। আমাদের সবারই গায়ে লাগে।’
গেলো বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আলিফ আরও লিখেছেন, ‘বলিউড তারকা হৃতিক রোশনের পাশে লোকগানের সম্রাজ্ঞী মমতাজের ক্ষুদ্র ছবি অতিশয় বেমানান। মমতাজ যে কোনো আন্তর্জাতিক তারকার চেয়ে যখন-তখন দর্শক মাতাতে সক্ষম। আমরা নিজেরাই নিজেদের ওপর আস্থা রাখতে পারি না। নিজেদেরকে নিয়ে লজ্জা হয়!’
প্রতিবাদ জানানোর জন্য এলিটা আর মাহাদীকে বাহবাও দিয়েছেন আলিফ।
সংগীতশিল্পী প্রীতম আহমেদ লিখেছেন, ‘যাক, অন্তত মাহাদী ও এলিটা প্রমাণ করলো এখনও কিছু সংগীতশিল্পীর আত্মসম্মানবোধ আছে। দর্শক-শ্রোতাদের একজন ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, বিদেশী শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশীয় শিল্পীদেরকে হেয় করা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিবাদ জানাতে জনসাধারণেরও উচিত এগিয়ে আসা।’
মাইলসের শাফিন আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কলকাতা থেকে আমার এক বন্ধু আমাকে জানালো, অরিজিৎ সিং আর্মি স্টেডিয়ামে ঢাকঢোল পিটিয়ে গান করবেন। ফারহান আখতার আসবেন ৩১ মার্চ। সেই বলিউড জোর করে শুনতেই হবে! বাংলা রক ভালো লাগে ওর। যাকে আমরা ব্যান্ড সংগীত হিসেবে উল্লেখ করি। ওপার থেকে এই বেদনা অনুভব করছে সে।
শাফিন যোগ করে আরো লিখেছেন, আমরা মাইলসের সদস্যরা জানি, কতোটা কঠিন ও কতো বছর সংগ্রাম করে বাংলা রককে বাংলাদেশের মূলধারার সংগীতের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আমরা এখনও লড়াই করে যাচ্ছি। কিন্তু যদি নিজের দেশের মানুষই তা বুঝতে না চায় এবং নিজেদের সংস্কৃতিকে সুরক্ষার ব্যাপারে উদ্যোগ না নেয়, তাহলে কে নেবে? বলিউডের সংগীত ও চলচ্চিত্র তারকাদেরকে প্রতি সপ্তাহে কতো টাকা দিয়ে দিচ্ছি আমরা? সে খেয়াল আছে কারও?’
শমী কায়সার কি এসব মন্তব্য দেখছেন? অরিজিৎ সিংকে এনে তিনি নিজের স্বপ্নপূরণ তো করেছেন, এবার বাংলাদেশের শিল্পীদের নিয়ে কিছু করুন ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন্স থেকে। যে দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য তার বাবা শহীদ হয়েছেন। যার সবচেয়ে গর্বের পরিচয়, তিনি শহীদের সন্তান।
চলতি মাসে ভারতের আরও কয়েকজন সংগীতশিল্পীর অনুষ্ঠান হবে ঢাকায়। ১৮ মার্চ মোনালি ঠাকুর আর ৩১ মার্চ আসবেন ফারহান আখতার। শুক্রবার (১১ মার্চ) বিশাল-শেখরের আসার কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়েছে।
ভারতীয় শিল্পীদের প্রতি আয়োজকদের অতি আগ্রহে হতাশ শিল্পীসমাজ। গায়ক আসিফ আকবর তো অনেকদিন ধরেই এর বিরুদ্ধে বলে আসছেন, ফেসবুকেও লিখেছেন।