চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

স্বপ্নের আরেক নাম ক্রিকেট

আমাদের স্বপ্নের আরেক নাম ক্রিকেট। ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখে চলেছে বাংলাদেশের মানুষ। সেই স্বপ্ন পুরোপুরি পূর্ণতা না পেলেও স্বপ্নকে আরো বড় করতে রসদ যুগিয়ে যাচ্ছে টাইগারদের সাফল্য। সে সাফল্য হোক ব্যক্তিগত বা দলীয়। এই বদ্বীপের মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন। আজীবন সেটাই সবচেয়ে বড় অর্জন হয়ে থাকবে। কিন্তু দেশটিকে বিশ্ববাসীর কাছে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরেছে ক্রিকেট। এই ক্রিকেটই বহু মতাদর্শের মানুষকে এক প্ল্যাটফর্মে টেনে আনছে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উৎসবের উপলক্ষও ওই ক্রিকেটই হচ্ছে। ক্রিকেটের সূত্র ধরেই ১৩ জানুয়ারিকে বাংলাদেশের জন্য নতুন বছরের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিন বলতে হবে। ঘুম ভেঙ্গেই দেশবাসী আনন্দে উজ্জীবিত হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে চোখ বুলালে সেই চিত্রটাই চোখে পড়ে। ক্রিকেটে দুই টাইগারের ব্যক্তিগত অর্জন সবার জন্যই বিশেষ অর্জন হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের পাহাড়সম দুঃখ-বেদনা সেই অর্জনের নীচে চাপা পড়ে গেছে। যদিও বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড প্রথম টেস্টের ফল পেতে আরো ৩দিন অপেক্ষা করতে হবে তারপরও ওয়েলিংটনে বইছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এবং ক্রিকেটারদের বড় বড় সব রেকর্ড। টেস্টের দ্বিতীয় দিনে সাকিব আল হাসানের ডাবল সেঞ্চুরি ও মুশফিকুর রহিমের দেড়শ ছাড়ানো ইনিংসে চালকের আসনে টাইগাররা। দিনশেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ৫৪২ রান। এদিন তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন সাকিব। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এটি সাকিবের টানা দ্বিতীয় শতক। ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে সেঞ্চুরি করেন এই অলরাউন্ডার। এর আগে ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪৪ রানই এতদিন সাকিবের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ছিল। তৃতীয় বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দারুণ এই রেকর্ড গড়লেন সাকিব আল হাসান। ডাবল সেঞ্চুরির দিন তৃতীয় বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে তিন হাজার রানের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে তিন হাজার রান ও বল হাতে ১৫০ উইকেট নেওয়া ১৪তম অলরাউন্ডার তিনি। এদিন তামিম-ইমরুলের ৩শ’ ১২ রানের রেকর্ড ভেঙে ৩৫৯ রানের সেরা পার্টনারশিপের রেকর্ড গড়ে সাকিব-মুশফিক জুটি। আর পঞ্চম জুটিতে বিশ্বে চতুর্থ সেরা জুটি এটি। নিউজিল্যান্ডের মাঠে এটি সফরকারী দলগুলোর যেকোন উইকেট জুটিতে নতুন রেকর্ড। ৪৪ বছর পুরনো জুটির রেকর্ড ভেঙ্গেছেন সাকিব-মুশফিক। ১৯৭৩ সালে ডানেডিন টেস্টে চতুর্থ উইকেটে ৩৫০ রান যোগ করেছিলেন পাকিস্তানের আসিফ ইকবাল ও মুশতাক মোহাম্মদ। সেটিই ছিল নিউজিল্যান্ডে বিদেশী দলগুলোর সর্বোচ্চ জুটি। সাকিব-মুশফিকের এই জুটির ওপরে যেকোন দল মিলিয়েই আছে মাত্র দুটি জুটি। যেকোন উইকেটে প্রতিপক্ষের মাঠে সবচেয়ে বেশি রান তোলায় টেস্ট ইতিহাসে সাকিব-মুশির এই জুটি থাকল ১৪ নম্বরে। যে তালিকায় সবার ওপরে আছে ১৯৩৪ সালে ওভালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ব্র্যাডম্যান-পন্সফোর্ডের ৪৫১ রানের জুটিটি। এদিনের অর্জনে তৃপ্ত অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ওয়ানডে সিরিজে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। নিজের ইনিংসটার চেয়ে মুশফিক বেশি তৃপ্ত দলের  শক্ত অবস্থানে। তবে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, “এখনো অনেক কাজ বাকি। দলকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।” সাকিবও একইভাবে বলেছেন, “আমরা ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টিতে ভালো করতে পারিনি। টেস্টে ভালো করা দরকার ছিল। আমার এই ইনিংস দলকে ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, সেই তৃপ্তি আছে।” ব্যক্তিগত অর্জন দিয়ে দলীয় সাফল্যের ভিত গড়ে তৃপ্তি পাচ্ছেন সাকিব-মুশফিক। ঠিক একই দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বপ্ন দেখা এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করা দরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের। এক একটি ছোট ছোট অর্জনের মাধ্যমে দেশ অর্জন করবে বড় বড় সব সাফল্য।