এমন হওয়ার কথা ছিল না। কথা ছিল বাড়িতে অপেক্ষায় থাকা প্রিয়জনদের সঙ্গে এবার ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবেন তারা। কিন্তু তা আর কোনদিনও হবে না। আপনজনকে না দেখার অপূর্ণতা নিয়েই তারা চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
শনিবার দুপুর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অংশে সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। নাড়ীর টানে বাড়ি ফিরতে গিয়ে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন তারা। স্বজনদের কাছে লাশ হয়ে ফেরা দুর্ভাগা এ মানুষগুলোর মৃত্যু সংবাদ তাদের অপেক্ষায় থাকা প্রিয়জনদের সমস্ত আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে।
ওই সব দুর্ঘটনার একটিতে রংপুরের পীরগঞ্জে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক উল্টে নিহত হয়েছেন ১৭ জন পোশাক শ্রমিক। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন আরো ২ চালক।
রংপুর: রংপুরের পীরগঞ্জে সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাক উল্টে ১৭ পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ১২ জন। আহতদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার ভোরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে এক শিশুসহ তিন জন নারী শ্রমিক রয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই লালমনিরহাটের কালিগঞ্জের বাসিন্দা।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, ঢাকা থেকে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকে ১৫০ জন পোশাক শ্রমিক লালমনিরহাটে ফিরছিলেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে। শনিবার ভোরে রংপুরের পীরগঞ্জ সড়কের কলাবাগান এলাকায় ট্রাকটি পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাঁদে পড়ে যায়।
“এতে ট্রাকে থাকা যাত্রীদের মধ্যে ১১জনই ঘটনাস্থলে মারা যায়। পরে পীরগঞ্জ ক্লিনিক ও রংপুর হাসপাতালে মারা যায় আরও ৬ জন। ঘটনাস্থলে সিমেন্টের বস্তায় চাপা পড়া বাকিদের উদ্ধার করেছে পীরগঞ্জ বড় দরগাহ হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন।”
বেঁচে যাত্রীদের অভিযোগ, চালক নিজে ঘুমিয়ে হেল্পারকে দিয়ে ট্রাকটি চালানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল: ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার চরপাড়া এলাকায় দুটি বাস ও একটি ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ট্রাকের চালক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন।
আহতদের মির্জাপুর কুমুদিনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
গোড়াই হাইওয়ে পুলিশের এসআই বাবলু মিয়া জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা উত্তরবঙ্গগামী একটি ট্রাক ঘটনাস্থলে পৌঁছলে একই দিকগামী অপর একটি বাস ওই ট্রাকটিকে চাপা দেয়। এসময় ঢাকাগামী একটি বাসের সঙ্গে ওই দুটি যানের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় ঢাকাগামী বাসটি ২০ ফিট নিচে খাদে পড়ে যায়। এ ঘটনায় ট্রাকের চালক ঘটনাস্থলেই নিহত হয় আহত হয় আরো অন্তত ১০জন।
গাইবান্ধা: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে দু’টি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাস চালক রানা মিয়া (২৮) নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৮ জন।
শনিবার সকাল ৬ টার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বোয়ালিয়া চক্ষু হাসপাতাল এলাকায় দু’টি বাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত বাস ড্রাইভার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হামিদপুর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, সকালে চক্ষু হাসপাতাল এলাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গাইবান্ধাগামী সূর্য পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে এ হতাহতে ঘটনা ঘটে।