চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন বিজিএমইএ গড়তে চায় ‘ফোরাম’

পোশাক খাতের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার, ব্যয় কমানো ও বীমা-কল্যাণ তহবিল গঠনসহ ১৩ প্রতিশ্রুতির ইশতেহার

টেকসই তৈরি পোশাক শিল্প গড়ার লক্ষ্যে এই খাতের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় কমানো, বাজার সম্প্রসারণ এবং স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন বিজিএমইএ গড়ে তোলাসহ ১৩ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে বিজিএমইএ- এর নির্বাচনে লড়তে যাওয়া প্যানেল ‘ফোরাম’।

‘এছাড়াও বিজিএমইএকে শুধু সেবামুলক প্রতিষ্ঠান নয়, এটিকে পোশাক মালিক পক্ষের একটি সমন্বিত ফোরাম হিসেবে তৈরি করা হবে। যাতে আমাদের সমন্বিত আবেদনকে সরকার ক্রেতা বা অন্যান্য অংশীজনের কাছে পৌঁছানো যায়’, জানান ফোরামের নেতারা।

মঙ্গলবার ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিজিএমইএর ২০২১-২০২৩ সালের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন উপলক্ষে ফোরাম’র ইশতেহারে এই প্রতিশ্রুতি দেন প্যানেলটির নেতারা।

ইশতেহার পাঠ করেন বিজিএমইএর সভাপতি ও আগামী পর্ষদের পরিচালক প্রার্থী ড. রুবানা হক। এ সময় ফোরামের প্যানেল লিডার এ বি এম সামছুদ্দিনসহ অন্যান্য প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

আগামী ৪ এপ্রিল তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ২০২১-২০২৩ সালের দ্বি-বার্ষিক পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ফোরাম। এই নির্বাচনে ‘সম্মিলিত পরিষদ’ নামের অন্য একটি প্যানেলও সম্প্রতি তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে।

ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত দুই বছরে পোশাক খাতে তাদের অনেক অর্জন রয়েছে। পাশাপাশি তাদের নেয়া অনেকগুলো উদ্যোগ এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। করোনার কারণে আগামী দুই বছর পোশাক খাতকে অত্যন্ত কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং সময় পার করতে হবে। এই সময়ে বিজিএমইএতে সৎ, নিষ্ঠাবান, কর্মঠ ও অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী বোর্ড দরকার। পূর্বের অভিজ্ঞতায় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম ফোরাম।

ভোটে ফোরাম জয়ী হলে পোশাক মালিকদের উন্নয়নে বীমা ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হবে- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতোহারে বলা হয়, পরিচালকদের তিনমাস পর পর পারফরমেন্সের মূল্যায়ণ করা হবে। পরিচালকরা যাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সদস্যদের অনুসন্ধানের জবাব দেয় সেই নিশ্চয়তা দেয়া হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক বিজিএমইএ গড়তে পুরো কার্যক্রমকে ইআরপি এর অধীনে আনা হবে।

ফোরাম বলেছে, নির্বাচনে বিজয়ী হলে ফিজিক্যাল, ভার্চুয়াল ও হাইব্রিড পদ্ধতিতে দূতাবাসকেন্দ্রিক রোড শো করা হবে। নিজস্ব প্রোডাকশন হাউজ স্থাপন করা হবে যার মাধ্যমে অডিও-ভিজুয়্যাল ও ইনফোগ্রাফিক তৈরি করে তাৎক্ষণিক প্রচার করা সম্ভব হবে। বিদেশিদের রপ্তানিযোগ্য পণ্য সম্পর্কে ধারণা দিতে রাষ্ট্রপতি ভবন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গার্মেন্টসসহ রপ্তানিযোগ্য অন্যান্য পণ্যের গ্যালারি তৈরি করা হবে। এছাড়াও ফোরাম ইশতেহারে কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যেমন-

ব্যবসা পরিচালন ব্যয় কমানো ও সহজীকরণ
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সহজীকরণে লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ বার মেয়াদে উত্তীর্ণকরণ। নগদ সহায়তার ক্ষেত্রে সিএ ফামের্র অডিট রহিতকরণ। প্যাকিং ক্রেডিটের সুদহার কমানো এবং সময় বাড়ানো। কাস্টম ওয়ার্কিং কমিটির সঙ্গে মাসিক মিটিংয়ে ভিত্তিতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য করণীয়
নগদ প্রণোদনা ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করা এবং এসব শিল্পের শ্রেণিমান ৫ মিলিয়ন থেকে ১০ মিলিয়নে উন্নীত করা হবে। বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চলে এসএলই ক্লাস্টার করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হবে।

রুগ্ন শিল্প ও এক্সিট পলিসি
রুগ্ন বা বন্ধ ১৩৩টি পোশাক কারখানাগুলোকে মূল ঋণ, আয়খাতে নিট সুদ ও মামলা খরচ সমুদয় অর্থ বহনের জন্য বাজেটে ৬৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

তবে ফোরাম বিজয়ী হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দক্ষ ব্যাংকারদের নিয়ে একটি ব্যাংকিং সাপোর্ট সেল প্রতিষ্ঠা করা হবে। যেখানে ব্যাংকিং সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা হবে। পাশপাশি মালিকদের জন্য বীমা ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হবে।

পণ্যের দাম ও ক্রেতার জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ
উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার কারণেও অনেক সময় পণ্যের দাম কম পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে বিজিএমইএর সভাপতি ও ফোরাম’র প্রার্থী ড. রুবানা হক বলেন, ফেরামা জয়ী হলে ক্রেতার চুক্তিপত্র পরীক্ষা করে দেয়ার সেবা দেয়া হবে। চুক্তিপত্রে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি শর্ত প্রত্যাহার করা হবে। কারখানার রপ্তানিকৃত পণ্যের পেমেন্ট নিশ্চয়তার জন্য বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করা হবে। রপ্তানি অপ্রত্যাবাসিত মূল্য আনয়নের লক্ষ্যে বিজিএমইএ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ দূতাবাসকে সম্পৃক্ত করে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর সেল তৈরি করা হবে।

পাশাপাশি ক্রেতার জবাবদিহিতা ও মূল্যায়নের পদ্ধতি প্রবর্তন করা হচ্ছে যাতে পেশাদার সংস্থার মাধ্যমে আমাদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা যায়।

শিল্পের নিরাপত্তা ও নিজস্ব সক্ষমতা
আরওসসিতে শ্ৰমিক ও পরিবেশ সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। আরএসসিকে সব ধরনের অডিটের কেন্দ্রবিন্দু করা হবে। বর্তমানে র‌্যাপ অডিটে ২০১টি, বিএসসিই অডিটে ১৫৪টি, সেডেক্সঅডিট ৬৩টি, বেটার ওয়ার্কস অডিটে ১০টি ও ফেয়ার ওয়্যার অডিটে ৮৪টি নথিপত্র তৈরি করতে হয়। বিজয়ী হলে সব সোশ্যাল অডিটকে একীভূত করবো। আরসির মাসিক রিভিউ মিটিং করা হবে এবং সব পক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। আসন্ন বাজেটে আরওসসির বার্ষিক ব্যয় বাবদ সরকারি অনুদান হিসেবে ২০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।

বাজার সম্প্রসারণে ফোরামের পরিকল্পনা
নতুন বাজার ও নতুন পণ্য রপ্তানিতে অতিরিক্ত ২ শতাংশ নগদ সহায়তার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে উল্লেখ করে ফোরাম জানিয়েছে, দূতাবাসগুলো আরএমজি ডেস্ক স্থাপন করে অপচয় না করে, কীভাবে বি টু বি যোগাযোগ বাড়ানো যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করা হবে। অন্যান্য খাতকে সঙ্গে নিয়ে বড় আকারে আন্তর্জাতিকভাবে মেলার আয়োজন করা হবে। ব্রাজিলের তুলা দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়ে আলোচনা এবং বাজার সম্প্রসারণে নির্দিষ্ট বাজারের তথ্য সরবরাহ করা হবে।

প্রযুক্তি সক্ষমতা কাজে লাগানো
যেসব কারখানা ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদান করবে তাদের করপোরেট কর ২ শতাংশ অতিরিক্ত হ্রাসকরণের প্রস্তাব চলমান রয়েছে।

এছাড়া কমার্শিয়ালদের ডিজিটাল আইডি দেয়া হবে। বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশনর আওতায় নিয়ে আসা হবে। ইনসেনটিভসহ বিজিএমইএ’র সব কার্যক্রমকে ইআরপির অধীনে পরিচালনা করা হবে।

দক্ষতা ও উদ্ভাবন
লোকাল সোর্সিংয়ের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য ইনোভেশন সেন্টারকে কাজে লাগানো হবে। নতুন উদ্ভাবনকে মালিকদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ইনোভেশন সেন্টারকে কাজে লাগানো এবং পণ্যের উন্নয়নের সুবিধার্থে পেশাদার পুল অব ডিজাইন কনসালটেন্ট তৈরি করে সাহায্য করা হবে।

শ্রমিক কল্যাণে করণীয়
লেবার আরবিট্রেশন বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিবিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। মিড ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ‘স্টাফ কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ এবং এটুআই ও ন্যাশনাল স্কিল কাউন্সিলের অধীনের দক্ষতা উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন বিজিএমইএ গঠন
একটি স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন বিজিএমইএ গড়তে বিজিএমইএর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিইউএফটি ট্রাস্টি বোর্ডকে পুনর্গঠন করা হবে। এক্ষেত্রে ৭ জন সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকবে।

বৃহৎশিল্পসমূহ নিয়ে একটি ডিসকাশন গ্রুপ তৈরি করা হবে, যাতে পুরো শিল্পের সার্বিক অবস্থা নিয়ে বিজিএমইএ পর্ষদ একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়।