গোলরক্ষকের ক্ষেত্র থেকে শুরু। এরপর নিজেদের মধ্যে বারকয়েক বল দেয়া-নেয়া করে ডিফেন্স থেকে বল উঠে আসে মাঝমাঠে। মাঝমাঠের সেনানীরা তক্কে তক্কে থাকেন সুযোগের। যেন ওঁতপেতে থাকা নেকড়ের দল! সঙ্গে চলে নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস। যেইনা প্রতিপক্ষের রক্ষণে ফাটল ধরা পড়ে, বল চকিতে চলে যায় ফরোয়ার্ডদের পায়ে। পোস্টপ্রহরী বুঝে ওঠার আগেই গোল! সবকিছুতে যেন ধ্রুপদী একটা ঘোরলাগা। এক সুরে বেজে ওঠা এক অর্কেস্ট্রা! এটাই স্পেনের খেলা।
সেই স্পেন তাদের শেষ ম্যাচ হেরেছে দুই বছর আগে। ২০১৬ ইউরোতে। এমন একটি দলের বিপক্ষে স্বাগতিক রাশিয়াকে পরীক্ষা দিতে হবে! রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় নক আউটের লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে স্পেন-রাশিয়া।
পরিসংখ্যানকে যদি গুরুত্বের সঙ্গে নেয় বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশটি, তবে দারুণকিছু আশা না করাই উত্তম! কারণ, ইতিহাস বলছে কখনোই লা রোজাদের হারাতে পারেনি সমাজতন্ত্রের সূতিকাগার দেশটি। মোট ৬ দেখায় ৪টিতেই হার, বাকি দুটিতে ড্র। যে হারের তিনটিই আবার ইউরো কাপে! বিশ্বকাপে অবশ্য কখনোই দেখা হয়নি রাশিয়া-স্পেনের।
যদিও পরিসংখ্যান নিয়ে পড়ে থাকা বোকার স্বর্গে বাস করার মতই! যে দুই ম্যাচে স্পেনের সঙ্গে ড্র করেছে রাশিয়া, তার শেষটি কিন্তু খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। গত বছরের নভেম্বরে খেলতে এসে স্বাগতিকদের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র মানতে বাধ্য হয়েছিল স্পেন।
তবে প্রীতি ম্যাচের স্পেন আর বিশ্বকাপের স্পেনকে এক পাল্লায় মাপাও ঠিক নয়, সেটা জানেন আর্টেম জিউবা। তাই ছোটখাটো এক অলৌকিক ঘটনার প্রার্থনায় রাশিয়ান ফরোয়ার্ড।
একই দলের ৩৮ বছর বয়সী ডিফেন্ডার সের্গেই ইগনাশেবিচ আবার অলৌকিক আশার ধার ধরছেন না। বারবার একই ঘরানার ফুটবল খেলায় স্পেনের ধরণ বুঝতে না পারার কোনো কারণই দেখেন না তিনটি ইউরো খেলা অভিজ্ঞ এ ফুটবলার, ‘আগেও যেমন খেলেছে, স্পেন এখনো সেই কৌশলেই খেলে। স্প্যানিশ ডিফেন্ডাররা খুব উঁচু মানের। যে কারণে দলের কাউন্টার অ্যাটাক করা খুব সহজ হয়ে যায়। তবে তাদেরও কিন্তু দুর্বলতা আছে।’
স্পেনের যে দুর্বলতা আছে সেটা দেখিয়ে দিয়েছে মরক্কোই। সেজন্য দরকার নির্ভার খেলা। হারের কোন তোয়াক্কা না করে সার্জিও রামোসের দলকে বিশ্বকাপ থেকে প্রায় ছিটকেই দিচ্ছিল আফ্রিকান দেশটি। শেষের ঝলকে পরের রাউন্ডের টিকিট পায় রামোসরা। স্পেন সেই গোলে নকআউটে তো উঠেছেই, হয়েছে গ্রুপ ‘বি’র সেরাও।
স্পেনের খেলোয়াড়রাও জানেন গ্রুপপর্বে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তারা। দলে তারকার ছড়াছড়ি। অথচ সেই দলটাই কিনা পর্তুগালের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্রয়ের পর ইরানের বিপক্ষে পেয়েছে কষ্টের এক জয়, এক গোলের জয়! ইয়াগো আসপাস অতিরিক্ত সময়ে গোল না পেলে মরক্কোর বিপক্ষেও ড্র পেত না লা রোজারা। এমন খেলায় কী আর মন ভরে!
থিয়াগো আলকানতারাও বলছেন তারা তাদের সেরাটা দিতে পারেননি। এবারের বিশ্বকাপে র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে থাকা রাশিয়ার বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা ঢেলে দেয়ার প্রত্যয় এ স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের, ‘আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল রাশিয়া ম্যাচে ভালো খেলা। আমরা শুধু ১১ জন খেলোয়াড়ের বিপক্ষেই খেলবো না, আমাদের লড়তে হবে পুরো স্টেডিয়াম ভর্তি হাজার হাজার রাশিয়ানদের সঙ্গেও।’
চোখে আঙুল দিয়ে আসল কথাটাই বলেছেন আলকানতারা। রোববার লুঝনিকি স্টেডিয়ামের ম্যাচে উপস্থিত থাকবেন ৮০হাজারেরও বেশি দর্শক। যাদের বেশির ভাগই হবেন রাশিয়ান।
সৌদি আরব ও মিশরের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে ৮ গোল করা রাশানরা যদিও নিজেদের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে ৩-০ গোলে হেরেছে, তাতেও দলের প্রতি ভরসা কমেনি ভক্তদের। দলের সমর্থনে তারা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করবেন তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। সেই উল্লাস-তরঙ্গে ভর করে রাশিয়া আরেকটি বিপ্লবের জন্ম দেবে কিনা সেটাই এখন দেখার!