সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার ১৪ বছর হলো আজ। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ঠিক এই দিনে ওই হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। একমাত্র মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাড়া দেশের সবগুলো জেলার ৫’শটি স্থানে চালানো সেই বোমা হামলায় দুজন নিহত হলেও আহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ।
কিন্তু এত বড় হামলার বিচার এতগুলো বছরেও শেষ করতে পারেনি সরকার। আমরা জানি, সারাদেশকে হতবাক করে দেওয়া এই হামলায় ১৬০টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এসব মামলায় আসামি করা হয় ১৩০ জনকে। এর মধ্যে ১৪২টি মামলায় ১ হাজার ৭২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। আর বাকি ১৭টি মামলার ক্ষেত্রে ঘটনার সত্যতা থাকলেও আসামি শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয় পুলিশ।
সর্বশেষ তথ্য অনুসারে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩২২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় ১৫ জনকে। ২০০৭ সালে ৬ জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানি, আব্দুল আউয়াল, খালেদ সাইফুল্লাহ এবং সালাউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
তবে অবাক করার মতো বিষয় হলো, সিরিজ বোমা হামলায় করা অন্তত ৫৯টি মামলার বিচার কাজ এখনো চলছে। এতো বিলম্বের প্রধান কারণ হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী না পাওয়ার কথা বলছে। কিন্তু সাক্ষী কেন পাওয়া যাবে না? তারা কি নিখোঁজ হয়ে গেছেন? দেশত্যাগ করেছেন? আর সত্যি সত্যিই যদি সাক্ষী না পাওয়া যায়, তাহলে কি বিচারকাজ আটকে থাকে? দোষ বা অপরাধ প্রমাণ করার মতো আরো অনেক তথ্য-প্রমাণ পুলিশের সংগ্রহে রয়েছে।
এটা ঠিক, এদেশে একটা ঘটনা ঘটার পর তা যত বড়ই হোক কেন; মানুষের স্মৃতির আড়ালে চলে যায়। আর সেই সুযোগটাই নেয় অপরাধীরা। জঙ্গিদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। নানা কৌশলে সিরিজ বোমা হামলার অনেক আসামি আইনের ফাঁকে বের হয়ে গেছে। কিন্তু এতে ক্ষতি হয়েছে দেশেরই। কেননা পরবর্তীতে অনেকগুলো জঙ্গি হামলার ক্ষেত্রে সেইসব ব্যক্তির নাম এসেছে, যারা সিরিজ বোমা হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
শুধু তাই নয়, আজ পর্যন্তও সেই জঙ্গি সংগঠন জেএমবি তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা পুরোপুরি স্বীকার করে না। আমরা মনে করি, ১৪ বছর আগে যে উদ্দেশ্য নিয়ে জেএমবি হামলা সারাদেশে হামলা করেছিল, আজও সেই উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে তারা। শুধু কঠোর শাস্তিই পারে, তাদেরকে দমন করতে।