দুর্নীতিবাজরা অবৈধ পথে অর্জিত সম্পদ যাতে তাদের স্ত্রীদের নামে রাখতে না পারে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালায়ের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের এ কথা জানান সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
নতুন বছরে দুদকের পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুদক পাঁচ বছরের যে পরিকল্পনা নিয়েছে ২০১৮ সাল হলো তার দ্বিতীয় বছর। ২০৩০ সালে জাপান ও চীনসহ কয়েকটি দেশে প্রায় ২৭ কোটি জনশক্তি লাগবে। ওই সময় বাংলাদেশের জনশক্তি ১৮ শতাংশ উদ্বৃত থাকবে। এই জনশক্তিকে উপযুক্ত শিক্ষিত করেই বিদেশে পাঠাতে হবে। তাই শিক্ষাখাতে যেন কোনোভাবেই দুর্নীতি না হয় সেদিকে নজর থাকবে। এ বিষয়ে দুদক সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
‘এছাড়া এ বছর বড় বড় ২৫টি খাতে যেন দুর্নীতি বা অপচয় না হয় সে বিষয়েও পদক্ষেপ নেয়া হবে। এসব খাতে দৃশ্যমান কিছু করা হবে। যাতে সবাই বুঝতে পারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশে শাস্তি আছে।’
এ সময় স্বপ্রণোদিত হয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে, অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের দায়ে প্রায় ১০টি মামলায় মূলত যারা আসামি হওয়ার কথা, সেখানে তাদের স্ত্রীরাও আসামি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেসব স্ত্রীদের সম্পদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা সম্পদের বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারে না। এটা এক ধরনের সামাজিকব্যাধী হয়ে যাচ্ছে। তাই এ বছরেই উদ্যোগ নেয়া হবে যাতে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীরা তাদের স্ত্রীদের নামে সম্পদ রাখতে না পারে। এ জন্য দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন করা হবে।
‘চলতি বছরে প্রকৌশলখাতের টেন্ডারে যেন কোনো প্রকার দুর্নীতি না হয় সে বিষয়েও নজর থাকবে। কারণ বাজেটের সিংহভাগই যায় প্রকৌশল খাতে। তা এসব খাতের সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করা হবে। তাদের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।’
বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের কী ভূমিকা থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সরকারকে তথা কেবিনেট ডিভিশনকে বলেছিলাম তারা চাইলে সহায়তা করা হবে। কিন্তু সরকার থেকে এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাইনি।
সরকার না চাইলেও দুদক স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব বড় প্রকল্পের দুর্নীতি দমনে কোনো উদ্যোগ নিবে কি না জানতে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, হ্যাঁ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো দুদক স্ব-উদ্যোগে কাজ করছে এবং করবে।
তদন্তে থাকা ব্যাসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চুর বিরুদ্ধে কবে নাগাদ চার্জশীট দেয়া হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে যারা তদন্ত করছেন তারা বিষয়টি ভাল বলতে পারবেন।
ব্যাংকিং খাতে ধসসহ নানা কেলেঙ্কারি বাড়ছে, এক্ষেত্রে দুদক কী ভূমিকা নিচ্ছে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নো নো। এটা সঠিক নয়। ব্যাংকিং খাতে কেলেঙ্কারি হচ্ছে না এখন। বরং কমছে। এ খাতে সুশাসন শুরু হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকবে। কারণ ব্যাংকিং খাতে ১৬ শতাংশ ক্রেডিট গ্রোথ হয়েছে।
তাহলে একের পর এক অনিয়ম বের হয়ে আসছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে নিয়ম আছে, সেখানে অনিয়মও থাকবে। আর সে জন্যই দুদকের মতো সংস্থার সৃষ্টি।
কিন্তু সুশাসন থাকলে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ জবাব দেন, লেন, ব্যাংকখাতে ক্রেডিট গ্রোথ কেন হচ্ছে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ভাল বলতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয় সুশাসনের ফলেও এটা হতে পারে।
অনেক অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীও আগামী নির্বাচনে অংশ নিবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, এক্ষেত্রে দুদকের কোনো ভূমিকা থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে অংশ নিবেন, তাদের সম্পদের সঠিক তথ্য দিতে হবে।
তবে এক্ষেত্রে দুদক স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছু করবে না বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান।