চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

স্কুল শিক্ষার্থীদের সাড়ে ১৪ লাখ ব্যাংক হিসাবে জমা ১৩শ কোটি টাকা

সঞ্চয়ের মনোভাব নিয়ে স্কুলের ছোট ছেলেমেয়েরাও আসছে ব্যাংকিং সেবার আওতায়। ফলে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে স্কুল শিক্ষার্থীদের হিসাব সাড়ে ১৪ লাখের ওপরে। আর এসব হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৩শ কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কুলের ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীদের সঞ্চয়ের অভ্যাসে উৎসাহিত করতে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মাত্র ১শ টাকা জমা দিয়ে নিজের নামে হিসাব খুলতে পারে শিক্ষার্থীরা। এতে একদিকে শিক্ষার্থীদের অর্থ জমা হচ্ছে, অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকেরও আমানত বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ১৪ লাখ ৫৩ হাজর ৯৩৬টি হিসাব খোলেছে শিক্ষার্থীরা। এসব হিসাবের বিপরীতে সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এ মধ্যে শহরের স্কুলের শিক্ষার্থীদের খোলা ৮ লাখ ৮৯ হাজার ২৯টি হিসাবে জমা ৯৪৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর গ্রামের ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯০৭ জন শিক্ষার্থীর হিসাবে জমা ৪১৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর হিসাব সংখ্যা দাড়িয়েছে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫৬টি। আর এসব হিসাবে মোট স্থিতি ১ হাজার ১০৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ৪ লাখ ২৪ হাজার ৩৩০টি হিসাব খোলা হয়েছে। এসব হিসাবে সঞ্চয় দাঁড়িয়েছে ১৬৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

সবচেয়ে বেশি হিসাব খোলা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকে, ২ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯৮টি। যা মোট হিসাবের ১৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এরপরে অগ্রণী ব্যাংকে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫৩৬টি হিসাব রয়েছে। এছাড়া ডাচ্-বাংলায় ১ লাখ ৭১ হাজার ৩৬২টি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ১ লাখ ১ হাজার ৩০১টি এবং উত্তরা ব্যাংকে ৮৪ হাজার ১০৮টি হিসাব রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. আবুল বশর বলেন, শিক্ষার্থীদের ব্যাংকমুখী করে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন সময় প্রচারণামূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব বাড়ছে।

২০১০ সালে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম শুরু হলেও স্কুলের শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সালে। ওই বছরে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা দেশের ব্যাংকগুলোতে ৩০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আমানত রাখে।

স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মধ্যে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে ‘চাইল্ড এন্ড ইউথ ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনালের’(সিওয়াইএফআই) ‘কান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত হয় বাংলাদেশ।

স্কুল ব্যাংকিংয়ের এই সেবা পৌঁছে গেছে সারা দেশের প্রায় সবখানেই। ব্যাংক হিসাব চালাতে গ্রাহককে কোনো না কোনো চার্জ দিতে হয়। কিন্তু স্কুলের শিক্ষার্থীদের এই হিসাব চালাতে কোনো খরচ দিতে হয় না। চেক বই নিতে গুনতে হয় না কোনো মাশুল। জমা বই, ডেবিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিংসহ অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে। লেনদেন করা যায় যত খুশি। এ হিসাব থেকে দৈনিক স্থিতির ওপর ছয় মাস অন্তর (অর্ধবার্ষিক) সুদ দেওয়া হয়। মুনাফার হার ৬ শতাংশ।