১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হবার পর ওইদিন পরিবারের বেঁচে যাওয়া অন্য সদস্যদের জন্য দিনগুলো কতটা কঠিন ছিলো, তা তুলে ধরে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি বলেছেন: স্কুলে যেতে পারতাম না। খুনিরা সবখানে ফলো করতো। ওই সময় ১৫ আগস্ট-ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স সম্পর্কে সকলকে গিয়ে গিয়ে জানাতে হতো। তবে আশার কথা হলো, এখন সময় বদলেছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি যাদুঘরে ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেশন (সিআরআই)’ আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা: যাত্রা, অর্জন ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক সেমিনারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।
১৫ আগস্ট মা-খালা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যায়। দেশে ফিরে আমাকে বনানীর একটি স্কুলে ভর্তি করা হলো। কেজি ওয়ান-কেজি টু। ওই সময় গুলো অনেক ইনজয় করতাম। কিন্তু একদিন মা এসে বললেন: তোমার স্কুল ভর্তি পরিবর্তন করতে হবে। আমি ছোটো ছিলাম। স্বাভাবই জিজ্ঞাসা করলাম কেনো?
কারণ তখন ছোটো ছিলাম, এখানে অনেক বন্ধু তৈরী হয়ে গেছে। আবার নতুন স্কুল! এখানকার বন্ধুদের ছেড়ে, আবার নতুন পরিবেশে!ঐ অল্প বয়সে যা হয় আর কি।
তখন মা আমাকে বললেন, এই স্কুলে খুনিদের ছেলে মেয়েরা ভর্তি হয়েছে। এই স্কুলে পড়া যাবে না। আমি খুব অবাক হতাম, খুনি-তাহলে তারা বাইরে ঘুরছে কিভাবে?
আমাদের পরিবার থেকে সব সময় ১৫ আগস্ট সম্পর্কে সব সময় স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে। কোনো লুকোচুরি করা হয়নি। তখন জানতে পারলাম ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের কথা।
জানার পর আমরা সবাইকে গিয়ে গিয়ে বলতাম ১৫ আগস্ট কি হয়েছিলো। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স কি। কিন্তু এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে। সবাই জানে, ১৫ আগস্ট কি হয়েছিলো। এমনকি অফিসে বসে আছি একজন রিসার্স করে এসে জানালো-জানেন, আপনার নানা কি বলেছিলেন। আমি নতুন করে জানতে পারছি। এসব সিআরআই’র কল্যাণে।
খুনিরা স্কুল থেকে আমাদের ফলো করতে শুরু করলো। মা সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে আবারও দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার। স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আর কত দিন। আপনারা তো জানেন আমার মা-খালারা তাদের জীবন নিয়ে কখনও ভীত ছিলেন না। কিন্তু, আমাদের নিয়ে তারা চিন্তিত ছিলেন।
১৯৯৩তে আমি আবার দেশে ফিরে আসি। তখনও বয়স খুব একটা বেশি না। ১২ কি ১৩। তখন গিয়ে গিয়ে সকলকে ১৫ আগস্ট সম্পর্কে জানাতে হতো। এখন সময় বদলেছে। সকলেই ১৫ আগস্ট কি হয়েছিলো জানে। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স সম্পর্কে জানে।
তরুণ প্রজন্মকে জানানোর দায়িত্বটা তারপরও রয়ে গেছে। সে দায়িত্বটা আমাদের। আজকের আলোচক প্যানেলে যারা ছিলেন তাদের অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুকে দেখি নাই, তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে যারা ৭১-৭৫ দেখেছেন তাদের কাছ থেকে জেনে তরুণ প্রজন্মকে জানানো।