অপু, ফেলুদা কিংবা উদয়ন পণ্ডিত- যে নামেই অভিহিত করুন না কেন অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জী বাঙালি আবেগের সমার্থক একটি নামে পরিণত হয়েছেন। যতো অতিমারীর সতর্ক সংকেত থাকুক না কেন, তার শেষ বিদায়ে যে রাস্তায় লাখো মানুষ নেমে আসবেন এটা অনুমেয়-ই ছিলো!
সৌমিত্রের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে রবিবার দুপুরে রাস্তায় নেমে আসেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। কারো হাতে ব্যানার, কারো হাতে পোস্টার- এভাবেই কলকাতার রাজপথ সাক্ষী রইল জনসমুদ্রের।
শেষযাত্রার কোনো অংশে কবিতা পাঠ, সংগীত আবার কোথাও মোমবাতি মিছিলের সঙ্গে বাঙালি বিদায় জানাল তার অন্তরের আত্মীয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে।
কিংবদন্তির শেষযাত্রায় বাঁধভাঙা আবেগ থাকলেও শ্মশান চত্বরে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কোভিড-১৯ এর নিয়ম মেনেই তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানানোর পর সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ চুল্লিতে ঢোকানো হয় মরদেহ।
এরআগ বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ রবীন্দ্রসদন থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশানের পথে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহ নিয়ে যাত্রা শুরু করে কয়েক হাজার মানুষের লম্বা মিছিল। পদযাত্রায় অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমান বসু-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্র শিল্পের নির্মাতা, অভিনেতা ও কলাকুশলি থেকে সাধারণ মানুষ।
রবীন্দ্রসদন থেকে দীর্ঘ পদযাত্রায় তাঁকে শেষ বারের মতো ছুঁয়ে দেখার আপ্রাণ চেষ্টা দেখা যায় সাধারণ মানুষের মধ্যে। সাড়ে ৬টা নাগাদ কেওড়াতলা মহাশ্মশানে পৌঁছানোর পর ‘গান স্যালুট’ জানায় রাজ্য সরকার। পরে শুরু হয় শেষকৃত্য।
টানা ৪০ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন পশ্চিম বাংলার কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অবশেষে রবিবার লড়াই থামলো সত্যজিৎ রায়ের অপুর। দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা সিনেমার অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবির মধ্য দিয়ে ১৯৫৯ সালে চলচ্চিত্রে পা রাখেন সৌমিত্র। এরপর গত ছয় দশক ধরে অভিনয় জগৎকে ঋদ্ধ করে যাচ্ছেন তিনি। অভিনয়ে আসার আগে তিনি রেডিওতে ঘোষক ছিলেন এবং মঞ্চে ছোট চরিত্রে অভিনয় করতেন। ধীরে ধীরে তিনি সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন।
তার অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায় ফেলুদা। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ ছবিতে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেন। প্রথমে ফেলুদা চরিত্রে তার চেয়েও ভালো কাউকে নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তার অভিনীত ফেলুদার প্রথম ছবি ‘সোনার কেল্লা’ বের হওয়ার পর সত্যজিৎ রায় স্বীকার করেন যে, তার চেয়ে ভালো আর কেউ ছবিটি করতে পারত না।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় করোনাতে আক্রান্ত হয়ে গত ৬ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর তিনি করোনা মুক্ত হয়ে কিছুটা সুস্থ হলেও নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন। পাশাপাশি মস্তিষ্কও কাজ করা বন্ধ হয়ে দেয়।