প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফরের জন্য বেছে নিলেন সৌদি আরবকে – যা বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের জন্য পবিত্রতম এক দেশ। অথচ এই ইসলাম আর সৌদি আরবকে নিয়ে নানা ধরণের মন্তব্য করে বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের অভ্যাসই মনে হয় বারবার বিতর্ক আর আলোচনার জন্ম দেয়া। কেননা সৌদি সফরে সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা চুল ঢেকে না যাওয়ায় যে ট্রাম্প তীব্র সমালোচনা করেছিলেন, আজ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেই ট্রাম্পই তার স্ত্রী ও মেয়েকে সৌদি নিয়ে গেলেন স্কার্ফ ছাড়াই।
২০-২১ মে সৌদি আরব সফরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প থাকলেও স্কার্ফ বা ওড়না দিয়ে মাথা ঢাকেননি তিনি। তবে সাবেক মডেল মেলানিয়া মুসলিমপ্রধান দেশ সৌদি সফরে সবার চিন্তাভাবনার অবসান করে পোশাকের দিকে বেশ লক্ষ্যই রেখেছেন।
সৌদি সফরে মেলানিয়া কেমন পোশাক পরবেন – সেটি নিয়ে সফর ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বেশ জল্পনা-কল্পনা চলছিল। এর আগে ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সৌদিতে সস্ত্রীক সফরে মিশেল মাথায় স্কার্ফ না পরায় বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।
ট্রাম্প তখন নিজেই এর বিরোধিতা করে টুইট করেছিলেন, ‘অনেকেই বলছে মিসেস ওবামা সৌদি আরবে স্কার্ফ পরতে অস্বীকৃতি জানিয়ে চমৎকার কাজ করেছেন। কিন্তু তারা (আরবরা) আসলে এতে অপমানিত হয়েছে। আমাদের এমনিই যথেষ্ট শত্রু আছে।’
Many people are saying it was wonderful that Mrs. Obama refused to wear a scarf in Saudi Arabia, but they were insulted.We have enuf enemies
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) January 29, 2015
এমন প্রেক্ষাপটে সবাই আশা করেছিল, ট্রাম্পের স্ত্রী ফার্স্ট লেডি হয়ে যখন সৌদি আরব বা অন্যান্য আরব দেশ সফরে যাবেন, তিনি নিশ্চয় স্কার্ফ বা ওড়না পরেই যাবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে তার উল্টো।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শুক্রবার ওয়াশিংটন থেকে রওনা দেয়ার সময় মেলানিয়া ট্রাম্পের পরনে ছিল একটি অফহোয়াইট ফুলহাতা টপ এবং কমলা লেদার স্কার্ট। আর সৌদি সময় শনিবার সকালে যখন প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট লেডি ও তাদের বহর নিয়ে বিশেষ উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ান পৌঁছায়, তখন দেখা গেল, মেলানিয়া বিখ্যাত ডিজাইনার স্টেলা ম্যাককার্টনি’র ডিজাইন করা প্রায় ঢোলা পুরোপুরি কালো একটি পোশাক পরে আছেন। আর কোমরে ছিল সোনালি মোটা বেল্ট।
হাত-পা ঢাকা পোশাকটি মেলানিয়ার রক্ষণশীল ধাঁচের পোশাকগুলোর একটি হলেও সঙ্গে কোনো স্কার্ফ বা ওড়না জাতীয় কিছু ছিল না। সফরসঙ্গী ট্রাম্পকন্যা ইভানকা ট্রাম্পও কোনো স্কার্ফ বা হিজাব পরেননি। তবে তিনি ফুলের প্রিন্টযুক্ত ফুলহাতা একটি পোশাক পরে সৌদি পৌঁছান। পোশাকটি ঠিক গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা।
মাথার চুল না ঢেকে সৌদি আরবে অবতরণ করায়, বিশেষ করে মেলানিয়ার বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তার অন্যতম প্রধান কারণ অবশ্য ট্রাম্পের করা সেই টুইট, যেখানে তিনি আরেকজনকে ঠিক সেই কাজের জন্যই তিরস্কার করেছিলেন, যা দু’বছর পর তার নিজের স্ত্রী-কন্যাই একই অবস্থানে থেকে করেছেন।
তবে সফরের আগে দেয়া এক বক্তব্যে অবশ্য সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল বিন আহমেদ আল-জুবায়ের বৃহস্পতিবার এক বক্তব্যে বলেন, মার্কিন ফার্স্ট লেডিকে তার দৈনন্দিন ফ্যাশন তালিকার বাইরে যেতে হবে না। ‘আমরা তাকে যে কোনো স্টাইলের পোশাকেই স্বাগত জানাই।’
সৌদি আরবে অতি বিশেষ মর্যাদার রাষ্ট্রীয় অতিথিদের মাথায় স্কার্ফ না পরলেও চলে – দেশটিতে এমন নীতি রয়েছে। সেই নীতির সদ্ব্যবহার করেই মেলানিয়া এবং ইভানকা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম বৈদেশিক সফরে সেখানে চুল না ঢেকে গেছেন। যদিও দু’বছর আগে মিশেল এই নীতি অনুসারে সফর করলেও তাকে ট্রাম্পের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল।