দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় শুটিং করার সময় কারণে অকারণে হয়রানির শিকার হন দেশের অভিনয় শিল্পীরা, এমন খবর প্রায়শই পাওয়া যায়। তাই বহু আগে থেকেই সবার চাওয়া ছিলো যেনো অন্যান্য পেশাজীবীদের মতো অভিনয় শিল্পীরও থাকে একটি পরিচয় পত্র। আর ১৩ অক্টোবর থেকে বহুল প্রত্যাশিত সেই পরিচয় পত্র পাওয়া শুরু করেছেন দেশের অভিনয় শিল্পীরা। শুক্রবার অভিনয় শিল্পী সংঘের কার্যালয়ে দিনব্যাপী চলে পরিচয়পত্র প্রদান অনুষ্ঠান, যা চলবে রবিবার পর্যন্ত। প্রথম দিনে নবীন প্রবীন শিল্পীদের হাতে পরিচয়পত্র তুলে দেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহিদুল আলম সাচ্চুসহ সংগঠনের নেতারা। পরিচয় পত্র প্রদানের বিষয়টিকে প্রাসঙ্গিক ধরে সংগঠনের আরো বেশকিছু বিষয় নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন সংগঠক, সংস্কৃতি কর্মী ও অভিনেতা শহিদুল আলম সাচ্চু-
অভিনয় শিল্পীদের সুরক্ষার জন্যই তাদের পরিচয় পত্র দেয়ার কাজ শুরু করলেন….
হ্যাঁ। শুক্রবার থেকে পরিচয় পত্র দেয়া শুরু হল। শনিবার, রবিবার পরিচয় পত্রগুলো অভিনয় শিল্পীদের দেয়া হবে। যদি আরো কিছু থেকে যায় তাহলে ক্রমান্বয়ে পরে আবার দেয়া হবে।
ছোট পর্দায় যারা অভিনয় করেন তারা সবাই কি পরিচয় পত্র পাচ্ছে?
আমাদের অভিনয় শিল্পী সংঘের সঙ্গে যারা আছেন, যারা সদস্য শুধু তাদেরকেই পরিচয় পত্র দেয়া হচ্ছে। আমরা যখন ইলেকশন করি তখন আমাদের কমিটমেন্ট ছিলো যে, প্রত্যেকটা পেশাজীবী মানুষের যেমন আলাদা আইডেন্টিটি আছে, কার্ড আছে। আমাদেরও এরকম পরিচয় পত্র দরকার। এবং আমরা সেটা করবো। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলোও আছে, যেমন আমাদের অভিনয় শিল্পীরা অনেক ভোরে শুটিং স্পটে যাওয়া আসা করে, শুটিংয়ের প্রয়োজনে অনেক রাতেও তাদের যাওয়া আসা করতে হয়। অনেক সময় অভিনয় শিল্পীদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে শুনি। নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে যেনো আমাদের অভিনয় শিল্পীদের হয়রানির শিকার না হতে হয় সেজন্য আমরা অভিনয় শিল্পীদের কার্ড প্রদান করছি।
পরিচয় পত্রের আর কোনো বিশেষ সুবিধা কি আছে?
অভিনয় শিল্পীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য সহযোগিতা করবে বেশকিছু স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। ল্যাবএইডের মতো প্রতিষ্ঠানও এই তালিকায় আছে। ঢাকাকে চারটা ভাগে ভাগ করে ক্লিনিক, হসপিটাল আমাদের ছাড় দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিবে। এরকম অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে, এবং সামনে আরো হবে। এমনকি বেশকিছু শপিংমল, যেমন আমরা যদি ‘স্বপ্ন বাজার’-এর কথা বলি তারাও আমাদের ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। এছাড়া আমাদের বেশকিছু শিল্পী আছেন যারা বয়স্ক। বার্ধক্য কিংবা অসুস্থতার জন্য অভিনয় করতে পারছেন না। আর্নিং সোর্স অফ। সেজন্য কিছু অভিনয় শিল্পীকে আমরা মান্থলি একটা বাজার করে দিবো। এরকম বেশকিছু প্ল্যান আমরা করছি আমাদের শিল্পীদের নিয়ে। যাতে তাদের সেবায় এই কার্ডটা কাজে লাগে।
এই কার্ডটা না হলে পেশার একটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি আমরা। ধরুন এখন প্রায় আটাশটা চ্যানেল, এখন কোনো একটা উশৃঙ্ক্ষল ছেলে বা মেয়ে একটা নাটকে অভিনয় করল। কিংবা নাটকে শুধুমাত্র একটা পাসিং শট দিল। তার উশৃঙ্ক্ষল জীবন যাপনের জন্য দেখা গেল যে কোনো এক সময় তাকে নিরাপত্তা বাহিনী ধরল বা নিয়ম ভাঙার কারণে তাকে ধরল। সে অবলীলায় বলে দিল যে, আমি অভিনয় করি। তার পরবর্তীতে যেটা হয় যে, চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে অভিনয় শিল্পী ধরা পড়েছে। ড্রাগ নিতে যেয়ে বা ড্রাগ বহন করার দায়ে। তাতে কিন্তু আমাদের একটা সম্মান ক্ষুণ্ন হয়। যেখানে ফেরদৌসি মজুমদারের মতো অভিনয় শিল্পী আমাদের অভিনয় শিল্পী সংঘের সঙ্গে যুক্ত, তারই সংগঠন কি এরকম হতে পারে? তো এসব কারণেই আমরা আপনাদের মাধ্যমে এটা বলছি যে, এখন থেকে যেনো অভিনয় শিল্পী সংঘের কার্ড নেই এমন কাউকে শিল্পী সম্বোধন করা না হয়।
শিল্পী সংঘে বর্তমান সদস্য সংখ্যা কতো?
আমাদের সংঘে এখন পর্যন্ত সাতশো’র উপরে সদস্য আছে। এটা আরো বাড়বে। নতুন নতুন ছেলে মেয়েরা অনেকদিন যাবৎ কাজ করছে, পর্যায়ক্রমে তাদের নেয়া হচ্ছে। আমাদের কথা হচ্ছে, যার কাছে শিল্পী সংঘের কার্ড আছে তাদের যেনো এইটুকু ফেসিলিটিস দেয়া হয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে যেনো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যেনো তাদের টেক কেয়ার করতে পারি।
কিন্তু যাদের কাছে কার্ড নেই, অথচ অভিনয় করে যাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে?
আমরা প্রযোজকদের বলছি যে, অভিনয় শিল্পীর কার্ড যাদের কাছে নেই আপনারা তাদের নিয়ে কাজ করবেন না। পরিচালকদেরও বলছি যে, যাদের কার্ড নেই তাদের নিয়ে কাজ করবেন না। করলে তার রেসপন্সসিবিলিটি আমাদের অভিনয় শিল্পী সংঘের না।
আপনাদের এই আহ্বানে পরিচালক, প্রযোজকরা রেসপন্স করছে?
আমাদের মধ্যে একটা ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। ডিরেক্টর গিল্ডস, প্রডিউসার গিল্ডস এবং অ্যাক্টর সিকিউরিটি এই তিনটি সংগঠন কিন্তু আমরা একসঙ্গে চুক্তিতে এক হয়েছি। চুক্তি মোতাবেক এখন শুটিং শুরু হবে, শুটিং শেষ হবে। এরকম অনেকগুলো নিয়ম আমরা বহুবার বসে বসে যুক্ত করছি। আমাদের আগে যে কমিটি ছিল, তারা কিছু নিয়ম করে গিয়েছিল সেটার সঙ্গে আমরা এখন আরো প্র্যাকটিক্যালি সবার সঙ্গে আলোচনা করে ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে গিয়েছি। এবং গত মাস থেকে চুক্তি কার্যকর শুরু হয়ে গেছে। সামনে আরো বেশকিছু বিষয় নিয়ে বসবো আমরা। চ্যানেলগুলোর সঙ্গেও আমাদের চুক্তি হবে।
আর অভিনয় শিল্পী সংঘের কার্ড যাদের কাছে নেই?
কার্ড যার কাছে নাই তাকে যেনো শিল্পী সম্বোধন না করা হয়। কেউ একটা কিছু অভিনয় করলো আর সে শিল্পী হয়ে গেল এমনটা যেনো না হয়। তাকে যেনো অন্যকিছু সম্বোধন করা হয়।
শিল্পী হওয়ার প্রক্রিয়াটা কি আসলে?
এটা বলা আসলে ডিফিকাল্ট। আমি নিজেকেও শিল্পী বলি না। আমরা আসলে সংস্কৃতি কর্মী ও পারফর্মার।
কী কী শর্ত পূরণ হলে নতুন একজন শিল্পী সংঘের সদস্য হতে পারবেন?
আগে শিল্পী সংঘের শর্তে ছিলো যে পাঁচটি নাটকে অন্তত মেজর ক্যারেক্টারে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা যার আছে সেই সদস্য হতে পারবে। আগেতো কম নাটক হতো, কিন্তু এখনতো প্রচুর নাটক হয়। সেই হিসেবে আমরা সংখ্যা দশটি বা পনেরো নাটকের সঙ্গে কাজ করলে এবং যে এটাকে পেশা হিসেবে নিচ্ছে এইসব বিবেচনায় তাকে শিল্পী সংঘের সদস্য হিসেবে যোগ্য ধরে নেব। সৌখিন ও সখের অভিনেতারা আমাদের সদস্য নয়। তাদের নিয়ে আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। যারা অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিচ্ছে, চব্বিশ ঘণ্টা টেলিভিশন, অভিনয় নিয়ে যারা ভাবে তারাই আমাদের মেম্বার।