চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সেমির দৌড়ে থাকতে বাংলাদেশের চাই ৩১৫

মোস্তাফিজের ৫ উইকেট

কোথায় থামবে ভারত, কত রান করবে। সাড়ে তিনশ, নাকি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ স্কোর! ভারতের ওপেনিং জুটি ভাঙার আগে এরকম হাজারো প্রশ্ন। তবে শুরুর মতো শেষটা করতে পারেনি ভারত। স্পষ্ট করে বললে শুরুর চেয়ে শেষটা অনেক ভালো করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওভার যেখানে ১০ রানে শুরু, সেখানে শেষ ওভার থেকে আসল তিন রান। টাইগারদের দুর্দান্ত কামব্যাকের কারণে ওপেনিং জুটিতে ১৮০ তুলেও ভারত শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য দিতে পেরেছে ৩১৫ রানের।

ঘুরে দাঁড়ানোর পথে সাকিবের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে পাঁচ উইকেট নিয়ে সফল বোলার মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া এদিন সাকিব আল হাসান, রুবেল হোসেন ও সৌম্য সরকার প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নিয়েছেন। ভারত তুলতে পেরেছে ৯ উইকেটে ৩১৪।

চলতি বিশ্বকাপে প্রথম ১০ ওভারে অবশ্য বাংলাদেশের গড়ই সবচেয়ে খারাপ। আগের সাত ম্যাচে শুরুর ১০ ওভারে ৭৬.৫০ গড়ে মাত্র চার উইকেট নিতে পেরেছে তারা। হিসেবে প্রতি ৯০ বলে পর এক উইকেট। সেটা বজায় থাকল ভারত ম্যাচেও। তবে শেষ ২০ ওভারে বাংলাদেশের টাইট বোলিংয়ে সামনে সেই সুযোগ নিয়ে বড় স্কোর গড়তে পারেনি বিরাট কোহলির দল।

এই রান তাড়ায় বাংলাদেশের সামনে অনুপ্রেরণা চলতি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো ম্যাচ। ওই ম্যাচে ক্যারিবীয়দের ৩২২ রান তাড়া করে জেতে টাইগাররা। এছাড়া ২০১৫ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২১ রান তাড়া করে জিতেছিল তারা। ফলে ভারতকে হারাতে হলে নিজেদের সামর্থ্যে থাকা রানই তাড়া করতে হবে বাংলাদেশকে!

ম্যাচের আগে মাশরাফী বলেছিলেন, শুরুতেই ভারতের টপঅর্ডার ছেঁটে ফেলতে চান তারা। সেটা হয়নি। যদিও সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। মোস্তাফিজুর রহমানের করা পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে তামিম যে ক্যাচটা ফেললেন, সেটা তার নামের সঙ্গে একেবারেই বেমানান! স্কয়ার লেগে সীমানার ছোট অংশ দিয়ে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন রোহিত। কিন্তু ঠিকমতো ব্যাটে-বলে না হওয়ায় বাতাসে ভেসে বল চলে যায় ডিপ স্কয়ার লেগে। ১৫ গজ দৌড়ে বলে হাত লাগালেও শেষ পর্যন্ত জমাতে ব্যর্থ হন তামিম।

রোহিতের ক্যাচ মিসের পর শরীরী ভাষায় যে পরিবর্তন আসে সে ধাক্কাই যেন আর কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। টাইগাররা তাল হারাতেই বেতালা ব্যাটিং শুরু করেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা।

তামিমের ক্যাচ মিসের পর থেকেই আশঙ্কা, কী করেন রোহিত? কারণ তার ক্যাচ ছাড়ার মাশুল গুনতে হয়েছিল সাউথ আফ্রিকা ও পাকিস্তানকে। ওই দুই ম্যাচেই শুরুতে ‘জীবন’ ফিরে পেয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন। ভারতও জয় পায়। সবশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই এজবাস্টনেই চতুর্থ ওভারে রোহিতের ক্যাচ ফেলেছিলেন জো রুট। সেই সুযোগ পেয়ে বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলির রেকর্ড স্পর্শ করেছিলেন। তবে ইংলিশদের বিপক্ষে ভারতের হারা ম্যাচ নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে।

সুযোগ পেলে রোহিত যেটা করেন সেটা বাংলাদেশের বিপক্ষেও করলেন। প্রথমে ৪৫ বলে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। পঞ্চম ওভার আর দলীয় ২১ রানে যেখানে উইকেট যাওয়ার কথা সেখানে প্রথম উইকেটের দেখা পেতে বাংলাদেশের অপেক্ষা করতে হল ১৮০ রান ও ৩০তম ওভার পর্যন্ত। তার আগে ১৮তম ওভারেই তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলে ভারতের স্কোর। ২৩ ওভারে দেড়শ!

অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের পর এই বিশ্বকাপে তৃতীয় দল হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে সেঞ্চুরির জুটি গড়ল ভারত। স্কোরবোর্ড আর নিজের ব্যাট একই ছন্দে রেখে ৯০বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন রোহিত। হাফসেঞ্চুরির আগে যেমন, তেমনি সেঞ্চুরির মাত্র দুই রান দূরে থাকতে অবশ্য সাকিবের একটি বল স্টাম্পের চুল পরিমাণ পাশ দিয়ে চলে যায়।

চলতি বিশ্বকাপে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। সৌরভ গাঙ্গুলিকে ছাড়িয়ে ভারতীয়দের মধ্যে এক বিশ্বকাপে সেঞ্চুরিতে এখন রোহিতই শীর্ষে। সেইসঙ্গে এক বিশ্বকাপে কুমার সাঙ্গাকারার করা চার সেঞ্চুরিও ছুঁয়ে ফেলেছেন। লঙ্কান কিংবদন্তি অবশ্য তার চার সেঞ্চুরি করেছিলেন টানা চার ম্যাচে। শেষ পর্যন্ত ৯২ বলে সাতটি চার ও পাঁচটি ছক্কায় ১০৪ রান করে আউট হন রোহিত। অনিয়মিত বোলার সৌম্য সরকারের স্লো অফকাটার উঁচু করতে খেলতে গিয়ে এক্সটা কভারে ক্যাচ দেন, এবার অবশ্য ভুল করেননি লিটন দাস।

এদিন কম যাননি লোকেল রাহুলও। আগের ম্যাচগুলোতে একটি ফিফটি পেলেও সব প্রতিপক্ষের সামনেই কাঁপাকাঁপি করেছেন। একাদশের তার জায়গা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রোহিতের সঙ্গে মিলে দলকে রানের চূড়ায় তুলে দিয়ে নিজের দিকে ধেয়ে আসা সমালোচনার তীরগুলো ভোঁতা করেন দিয়েছেন রাহুল। রোহিত ফেরার কিছুক্ষণ পর রুবেলের শিকার হন তিনি। অফস্টাম্পের বাইরের স্লো বল খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মুশফিক। ছয়টি চার ও এক ছক্কায় ৯২ বলে ৭৭ রান করে যান রাহুল।

দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে কিছু সময়ের জন্য ভারতের রানের চাকা টেনে ধরে বাংলাদেশ। এসময় আচমকাই পাল্টে যায় চিত্র। মাশরাফী যখন খুব করেই উইকেট চাইছিলেন। তখনই তিন বলের ব্যবধানে বিরাট কোহলি আর হার্দিক পান্ডিয়াকে ফিরিয়ে ম্যাচের নাটাই বাংলাদেশের হাতে নিয়ে আসেন মোস্তাফিজ।

৩৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মিডউইকেটের উপর দিয়ে খেলেছিলেন কোহলি। কিন্তু বল-ব্যাটে শতভাগ গলাগলি না হওয়ায় ক্যাচ হয়ে যান। সীমানায় দাঁড়িয়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন রুবেল হোসেন। এক বল পর চোখ ধাঁধানো এক ডেলিভারিতে পান্ডিয়াকে ফেরান মোস্তাফিজ। অফস্টাম্পের বাইরের বল স্লিপে ক্যাচ দিলে পাখির চোখে তা তালুবন্দি করেন সৌম্য।

এদিনও অবশ্য নিজের রেকর্ড ধরে রাখলেন মোস্তাফিজ। এই বিশ্বকাপের প্রথম ৩০ ওভার শেষ হওয়ার আগে আজও উইকেট পেলেন না তিনি। এদিন উইকেট নেন ৩৯তম ওভারে।

কিছুটা চাপে থাকার পর জুটি জমিয়ে তুলেছিলেন রিশভ পান্ট ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে সেই জুটিকে আলাদা করেন টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়ে থাকা সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও হাফসেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে ফেরেন পান্ট। ৪১ বলে ছয় চার ও এক ছক্কায় করেন ৪৮ রান। দড়ির কাছে দাঁড়িয়ে তিনবারের চেষ্টার ক্যাচ নেন মোসাদ্দেক হোসেন।

বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচে সুবিধা করতে পারেননি দিনেশ কার্তিক। নয় বলে আট রান করে মোসাদ্দেকের হাতে ক্যাচ দিয়ে মোস্তাফিজের তৃতীয় শিকার হন তিনি। তবে আগের ম্যাচগুলোতে স্লো ব্যাটিংয়ে জন্য সমালোচিত ধোনি এদিন বলের চেয়ে বেশি রানই করেছেন। ৩৩ বলে ৩৫ রান করলেও মারকাটারি ইনিংস খেলতে পারেননি সাবেক অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত ভারত থামে ৮ উইকেটে ৩১৪ রানে।