১৭ মে, ১৯৯৮। ১৭ মে, ২০১৯।
২১ বছরের ব্যবধান অথচ ঘটনাপ্রবাহে কী আশ্চর্য মিল! প্রথম ওয়ানডে জয়ের তারিখেই বাংলাদেশ পেল প্রথম টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ। দুটি ক্ষেত্রেই অনেক প্রতীক্ষার পর এসেছে সাফল্য এবং যার মঞ্চায়ন বিদেশের মাটিতে।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সাফল্য পেলে তার আনন্দ জাগরুক থাকে বহুকাল। প্রসঙ্গ উঠলেই রক্তকনায় ছড়িয়ে পড়ে সেটির অনুরনন। ভারতের হায়দরাবাদে কেনিয়ার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানড জয়ের সৃখস্মৃতি যেমন ভেসে এল মোহাম্মদ রফিকের মনে।
‘আমাদের কোচ গর্ডন গ্রিনিজ একটা কথা বলেছিলেন, জেতা নিয়ে চিন্তা করো, তাহলে তোমরা জিততে পারবে। জেতার কী স্বাদ সেটা যদি একটা ম্যাচে নিতে পার, তাহলে বুঝতে পারবা কোন পর্যায়ে যাচ্ছ তোমরা। গর্ডনের জন্যই কিন্তু ওই জয়টা। সে আমাকে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নামিয়ে বলেছিল, জেতাতে পারলে রফিকই পারবে।’
রফিক সেদিন সত্যিই পেরেছিলেন। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে কোকাকোলা ট্র্যাঙ্গুলার সিরিজে বিদেশি দুই দলের ম্যাচে তেমন দর্শক ছিল না। তবে বাংলাদেশের জয়ের খবরে ঠিকই উচ্ছ্বাস-আনন্দে রঙিন হয়ে উঠৈছিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকা।
প্রথম ওয়ানডে জয়ের নায়ক মোহাম্মদ রফিক বল হাতে তিন উইকেট নিয়ে সেময়কার শক্তিশালী কেনিয়াকে বেধে রেখেছিলেন ২৩৬ রানে। ওপেনিংয়ে নেমে এ বাঁ-হাতি খেলেন ৭৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। ১২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে পাওয়া জয়টি আবার দৃশ্যকল্পে ফিরল সেই ১৭ মে তারিখেই ডাবলিনে মাশরাফীবাহিনীর ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ে। ছয়বার হোঁচট খাওয়ার পর হাতে উঠল প্রথম ট্রফি।
‘জয় তো জয়ই। জয়ের আনন্দ সবসময়ই একই। মাশরাফীদের যেমন লাগছে আমাদেরও তেমনি লেগেছিল। আসলে তখন (প্রথম ওয়ানডে জিতে) বুঝতে পারলাম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ের কত আনন্দ। নতুন টিম হিসেবে প্রথম ওয়ানডে জয়টা ছিল অনেক বড় পাওয়া। কারণ আমরা যে দলের সঙ্গেই খেলতাম আমদের টিম মিটিংয়ে আলোচনা হতো ১৫০ করলেই মনে করবা জিতে গেছ। কখনো জেতার চিন্তা করতাম না। টার্গেট দিয়ে দিতেন কোচ, ১৩০-১৪০ করলেই বুঝবা তোমারা ভালো ক্রিকেট খেলছ। একটা একটা করে জিতে সাহস বাড়ল। এখন তো বাংলাদেশ খেলেই জেতার জন্য।
দুর্ভাগ্যের গেরো খুলে গেছে। টুর্নামেন্ট টাইটেল হয়তো আগামীতে বাংলাদেশ আরও জিতবে। কিন্তু প্রথমের স্বাদ থেকে যাবে তরতাজাই। অনুজদের সাফল্য দেখে হয়তো মাশরাফীবাহিনীর কাছেও মানুষ শুনতে চাইবে প্রথমের গল্প। প্রথম ট্রফি জেতার গল্প পুরনো হলে হয়তো এভাবেই বলবেন মাশরাফী। পরম্পরায় সাফল্যের গল্প হতে থাক সমৃদ্ধ।