চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সেই ‘চাটার দল’ কি ব্যাংক খাতও ধ্বংস করবে?

ব্যাংক খাত নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। বিষয়টা এরকম যে, যাদের কথা বলার দরকার তারা বলবে আর ব্যাংকের বারোটা বাজাতে যারা আছে তারা তাদের কাজ করেই যাবে। প্রায়ই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া বিভিন্ন সভা সেমিনারে আলোচনাগুলো এমন- বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে চলতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ পুরো ব্যাংক খাতেই সুশাসন দরকার। এ জন্য ব্যাংক খাতের সংস্কার দরকার।

গত ৮ মার্চ ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন চলছে’ শীর্ষক আলোচনা সভা হয়েছে। উপরের কথাগুলো সেখানেই আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকের একজন পরিচালক বলেছেন- কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। সুশাসনের অভাব রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। তিনি এটিও স্বীকার করেছেন যে একজন পরিচালক হিসেবে এ কথা তার বলা শোভন না। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন মহল চাপ প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করিয়ে নিচ্ছে। আর এ কারণেই ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি কঠোর আকার ধারণ করেছে। ওই পরিচালক এটাও বলেছেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ২ শতাংশ এককালীন নগদ জমা দিয়ে ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেওয়া হলেও শীর্ষ ২০ খেলাপি এর ধারেকাছেও আসেননি।

পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ব্যাংক খাত এবং রাজস্ব খাত খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতকে শুদ্ধ করতে না পারলে বিনিয়োগের লক্ষ্য পূরণ হবে না। এক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের দায়িত্ব কতটুকু? সেখানে কারা আছেন? তারা কতটুকু আন্তরিক? তারা কি চায় ব্যাংক খাত আগের অবস্থায় ফিরে আসুক আবার? মানুষের ভেতরে আস্থা ফিরিয়ে আনতে তারা আদৌ কি কোনো চিন্তা ভাবনা করছেন? নাকি লুটপাটের কথা মাথায় রেখেই একের পর এক প্রণোদনার প্রস্তাব করে পরোক্ষভাবে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করায় তারা ব্যস্ত?

বিগত দিনে সাধারণ মানুষ শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে কাদের নাম জেনেছেন? কাদের ছবি পত্রপত্রিকায় এসেছে? তারা আজ কোথায়? তাদের আদৌ কোনো সাজা হয়েছে? নাকি তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে? এখনও শেয়ারবাজারে মানুষ তাদের পুঁজি হারিয়ে পথে বসে যাচ্ছে। কারা এখন পুঁজিবাজার নিয়ে খেলাধুলা করছে? তারা কারা? এতসব প্রশ্নের উত্তর সবার জানা। কিন্ত বলার মতো সাহস কারো নেই। আমাদের ব্যাংক খাত নিয়ে কারা খেলাধুলা করছে? কাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে আজ হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়ে আড়ালেই থেকে যাচ্ছে নাটের গুরুরা? তাদের ব্যাপারে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নজরে না আসায় মানুষের ভেতরে হতাশা কাজ করছে ব্যাংক খাত নিয়ে। পারতপক্ষে কেউ আর ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখতে ভরসা পাচ্ছে না।

সাধারণ মানুষের জন্য সরকারের সঞ্চয় স্কিমে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ধনীরা। তাই সরকার তাদেরকে টাইট দিতে গিয়ে নানা রকমের বিধিনিষেধ আরোপ করতে বাধ্য হয়েছে। যা কি না সাধারণ মানুষের ভেতরে ভীতির সঞ্চার করেছে।

একজন পরিচালক কতটা চাপের ভেতরে থাকতে থাকতে অসহ্য হয়ে বলে ফেলেন বিভিন্ন মহলের চাপের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হচ্ছে। সেই চাপ কারা দিচ্ছে সরকার অবশ্যই জানেন। কেন তাদেরকে ঠেকাতে পারছে না? এ প্রশ্ন তো সাধারণ মানুষের ভেতরে আসতেই পারে।

গ্রামে কিছু প্রবাদ আছে- ছোট ভাইয়ের বউ কখনো স্বামীর বড় ভাই অর্থাৎ ভাসুরের নাম নেয় না। আমরা আর কতকাল ভয়ে ভাসুরের নাম নিতে পারবো না? হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই চাটার দল কি আবারো কোনো গভীর ষড়যন্ত্র করছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে?

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)