মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’র বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আবেদন করেছেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের আইনজীবীরা।
স্থানীয় সময় শুক্রবার দিনশেষে মেলবোর্নের ম্যাজিস্ট্রেটস কোর্টে প্রাইভেট প্রসিকিউশনের ওই আবেদন দাখিল করেছেন মেলবোর্নের ব্যারিস্টার ও ফেডারেল কোর্টের সাবেক বিচারক রন মেরকেল কিউসি, দুই আন্তর্জাতিক বিষয়ক আইনজীবী ম্যারিয়ন ইসোবেল ও রেইলিন শার্প এবং সিডনির মানবাধিকার বিষয়ক দুই আইনজীবী অ্যালিসন ব্যাটিসন ও ড্যানিয়েল টেইলর।
বর্তমানে সু চি আসিয়ান সম্মেলনের জন্য সিডনিতেই অবস্থান করছেন।
আবেদনটি বর্তমানে ওই আদালত যাচাই করে দেখছেন। আগামী সপ্তাহেই এ ব্যাপারে জবাব পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী আইনজীবীরা।
তবে মামলার আবেদনটি গৃহীত হওয়ার আগে একে বেশকিছু বাধার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এমনকি দেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের আনুষ্ঠানিক সম্মতিও প্রয়োজন এর জন্য। কেননা অস্ট্রেলিয়ায় সর্বজনীন বিচার ব্যবস্থার অধীনে কোনো মামলা করতে হলে অ্যাটর্নি জেনারেলের সম্মতি প্রয়োজন।
এ কারণে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ক্রিশ্চিয়ান পোর্টারের কার্যালয় বরাবর আনুষ্ঠানিক আবেদন পাঠানো হয়েছে, যেন মামলাটি দায়েরের বিষয়ে তিনি সম্মতি দেন।।
মামলার আবেদনপত্রে সু চি’র বিরুদ্ধে মিয়ানমারের একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর (রোহিঙ্গা) বিরুদ্ধে মানবতা লঙ্ঘনকারী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তাদেরকে জোরপূর্বক নিজ বাসভূমি থেকে সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও জ্বালাও পোড়াও থেকে বাঁচতে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
এ ব্যাপারটি স্বীকার করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাদের সমর্থন করার অভিযোগে এই মামলা করতে চাইছেন মেলবোর্নের ওই আইনজীবীরা।
মামলার আবেদনকারী আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ও সুশৃঙ্খল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিপুল পরিমাণ অভিযোগ রয়েছে, যা বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকেই পাওয়া। এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, সহিংসতা, ধর্ষণ, বেআইনি আটক এবং রোহিঙ্গাদের সম্পত্তিসহ পুরো গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস করা।
সু চি প্রথম থেকেই এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে এসেছেন। আর যখন পরোক্ষভাবে কিছু অভিযোগ স্বীকার করেছেন, সেখানেও পক্ষ নিয়েছেন সেনাবাহিনীরই।
অং সান সু চি তার অবস্থান ও ক্ষমতা ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং এ কারণেই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীকে তিনি রোহিঙ্গাদের আবাস থেকে উৎখাত করার অনুমতি দিয়েছেন – এই অভিযোগ থেকে মামলার আবেদন করা হয়েছে।