চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সুসময়ে পদ-পদবীতে দলীয় ঐক্য, দুঃসময়ে অনৈক্য

রাজনীতি, দেশরক্ষা, দলরক্ষা, জোটরক্ষা প্রভৃতির প্রতি যেন বাংলাদেশের দলীয় নেতাদের চরম অনাগ্রহ। দেশজুড়ে জ্বালাও পোড়াও, গাড়ি ভাংচুর, বার্ন ইউনিটে পোড়া মানুষের আর্তনাদ, হরতাল-অবরোধ, ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে না দেয়া ও নেত্রীর প্রাণনাশের হুমকিসহ কত ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে বাংলাদেশে।

দেশজুড়ে এসব প্রতিরোধের জন্য পাড়ায় মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। এমপিদের এলাকায় গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নির্বিঘ্ন পরীক্ষা অনুষ্ঠানে সহায়তা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

কতজন এমপি এ নির্দেশ পালন করেছে? কতজন নেতা উপদলীয় কর্মকাণ্ড বাদ দিয়ে দলীয় ঐক্য গড়ে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনে প্রয়াসী হয়েছে? দল ও দেশের প্রয়োজনে যাদের মধ্যে কোনো অনুভূতি কাজ করেনা কাজ করে শুধুই পদ পদবীর লড়াই তাদের ব্যাপারে দলীয় নীতি নির্ধারকদের কী বক্তব্য?

৫ জানুয়ারীর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। নির্বাচন টিকবে কি টিকবেনা এই সংশয়ে অনেকেই রাজপথে আসেনি, ভোট চাইতে যায়নি। অাবার অনেক ক্ষেত্রে ভোট চাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেকেই এমপি হয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাদের বিপরীতে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও তারা ভোটে হেরে যেতেন।

এই সুযোগে অনেক গণ, জন, দল ও জোট বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি সংসদ সদস্য হয়ে গেছেন। নির্বাচন টিকে যাওয়ার পর তারা নেতৃত্ব কর্তৃত্ব ও সুবিধাদি রক্ষার লড়াইয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। সুসময়ের বন্ধুরা যে কোনো সময় ভয়ানক শত্রু হয়ে উঠতে পারে দুঃসময়ের বন্ধুরা তা পারে না।

বিরোধী দল থাকলে পদের লড়াই ও মনোনয়নের লড়াই কম হয় লড়াই জমে ওঠে সরকারি দল হলে। সরকারি দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান, মেয়রদের ক্ষমতা ও সুবিধা বেশি তাই।

দুঃসময়ে কোন্দল করে সুসময়ে দল করতে যাচ্ছে যারা তাদের ব্যাপারে দলীয় গঠনতান্ত্রিক ও আদর্শিক সত্তার সজাগ থাকা জরুরি। শর্ত দিয়ে যেমন প্রেম হয় না, তেমন আদর্শিক দলীয় রাজনীতিও হয় না। ক- কে সভাপতি, খ-কে সাধারণ সম্পাদক, গ-কে এমপি মনোনয়ন, ঘ-কে মেয়র ও ঙ-কে উপজেলা চেয়ারম্যান মনোনয়ন প্রভৃতি শর্তে অনেক জায়গায় আপাতত কোন্দল বাদ দিয়ে অনেকেই দলে আগ্রহী হচ্ছেন। এইসব শর্তবাজিকে কিভাবে দেখবেন দলীয় নীতি নির্ধারকগণ?

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকতো কারও হওয়ার বিষয় না সেটা সম্মেলন ও কাউন্সিলে কাউকে নির্বাচিত করার বিষয়। প্রকাশ্যে এরকম শর্তবাজী কি কোনো রাজনৈতিক ও গঠনতান্ত্রিক আচরণের মধ্যে পড়ে? দল, রাজনীতি ও দেশরক্ষার চেতনা বর্জিত স্রেফ ক্ষমতার ভাগাভাগি কেন্দ্রিক কোন্দল অবসানে দলীয় কাজে দল কতটা আগাবে তা সময়ে প্রকাশ্য হবে। তবে এগুলো যে কোনো দলনিষ্ট, আদর্শিক সত্তার ঐক্য নয় সেটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)