দুই পক্ষের পরপর পাল্টা সংবাদ সম্মেলন আর বিক্ষোভ-প্রতিবাদে দিন পার করলো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
স্বাধীনতার এত বছর পর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়ার অবদান সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করাকে বিভ্রান্তিকর ও অবাস্তব উল্লেখ্য করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
সম্পাদকের কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কুদ্দুস কাজল (সমিতির প্যাডে লিখিত বক্তব্যে) বলেন, ‘স্বাধীনতার এত বছর পর প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়ার অবদান সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। শহীদ জিয়া সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। আমরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে এই ধরনের বিভ্রান্তিকর ও অবাস্তব বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সমিতির সহ-সভাপতি জালাল উদ্দিন, সহ সম্পাদক মাহমুদ হাসান, সদস্য এস এম ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ, পারভীন কাওসার ও রেদওয়ান আহমেদকে নিয়ে করা সম্পাদকের সংবাদ সম্মেলনের সময় তার কক্ষের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ চলে।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাড ব্যাবহার করে সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের দেয়া বক্তব্যকে দলীয় বক্তব্য উল্লেখ্য করে সে বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আবার পাল্টা সংবাদ সম্মেলন হয় সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে। সমিতির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ’র সাথে এই সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন সমিতির ট্রেজারার ড. মো: ইকবাল করিম, সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার সাফায়েত সুলতানা রুমি, সদস্য মোঃ মাহফুজুর রহমান রুমন, এবিএম শিবলী সাদেকীন, মিন্টু কুমার মণ্ডল ও ব্যারিস্টার মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ।
এই সংবাদ সম্মেলন থেকে মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ (লিখিত বক্তব্যে) বলেন, ‘গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদকের বরাত দিয়া সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে সমিতির প্যাড ও স্বারক ব্যবহার করে সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলের ব্যক্তিগত বক্তব্য প্রচার করে। যেটি জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার পায়তারা মাত্র। এছাড়া ওই বিবৃতিটি একান্ত ব্যক্তিগত, যেটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বক্তব্য নয়। বরং তিনি (সম্পাদক) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাড ও স্বারক হীন দলীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে আইনজীবী সমিতির ঐতিহ্য ও রাতিনীতি লংঘনের মত জঘন্য অপরাধ করেছেন। তাই অনতিবিলম্বে তাহার বক্তব্য প্রত্যাহার করিয়া জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আইনজীবিদের সঙ্গে নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে।’
হঠাৎ আইনজীবী সমিতিতে সৃষ্ট এমন পরিস্থিতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি একটা দল নিরপেক্ষ সমিতি। আমাদের কাজ হচ্ছে সমিতির সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা এবং তাদের পেশাগত উন্নয়নে সহায়তা করা। সমিতির যারা নির্বাচিত সদস্য তারা অনেকেই রাজনীতি করেন। অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাই এখানে সভাপতি বা সম্পাদক হন। সম্পাদক তার নিজের বক্তব্য দেন, সভাপতি তার নিজের বক্তব্য রাখেন। কিন্তু সমিতির প্যাড ব্যবহার করে এটা দেয়া মনে হয় এই প্রথম হয়েছে। এটা আমাদের যে দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য সেটাকে মনে হয় ক্ষুন্ন করেছে। আমি শুনলাম যে, এটাকে কেন্দ্র করে আজ পাল্টাপাল্টি স্লোগান হয়েছে। এর ফলে পরিবেশটাই বিনষ্ট হচ্ছে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আর রাজনীতি, দুইটাকে কিন্তু আলাদা করতে হবে। সমিতির যে একটা ঐতিহ্য আছে সেটা বজায় রাখা আমাদের সবারই দায়িত্ব।’