মঙ্গলবার বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বের ম্যাচে ভারতের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। কলকাতায় ৮৮ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও ড্র করতে হয় লাল-সবুজদের। তবে প্রতিপক্ষের মাঠে বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্সে মুগ্ধ ফুটবলপ্রেমীরা। উত্তরসূরিদের খেলায় দারুণ খুশি সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলামও।
মাঠে বসে খেলা দেখা মামুনুলের মতে, ‘সুনীল ছেত্রীকে বাদ দিলে কোয়ালিটিতে বাংলাদেশ-ভারতে কোনো পার্থক্য নেই।’ এনডিটিভি বাংলাকে সাক্ষাতকারে এমনটাই বলেছেন মামুনুল।
কলকাতার মাটিতে ভারতকে আটকে দেয়াটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ দলের জন্য?
অনেকটাই। আমরা ভালো খেলেছি ভারতের বিরুদ্ধে। আমরা জিততেও পারতাম সুযোগ নষ্ট না করলে। তবে এই এক পয়েন্ট আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।
বাংলাদেশের ফুটবল ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে এই মুহূর্তে?
ফুটবল কিছুটা বদলেছে। বাংলাদেশের ফুটবলও উন্নতি করছে। বিশেষ করে ক্লাব পর্যায়ে। এএফসি ক্লাব কাপে আবাহনী সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল বড় ক্লাবকে হারিয়েই। যেখানে ভারতীয় ফুটবলে ক্লাবগুলোর রমরমা সবার জানা, আমরা তাদের হারিয়েছিলাম। তারপর থেকে এশিয়ার সেরা দলগুলোর মধ্যে আমাদের নাম ঢুকে পড়ে। কাতারের সঙ্গে ১-০ গোলে হারছিলাম, শেষে গোল হজম করতে হল। কিন্তু সেই ম্যাচটা আমরা ভালো খেলেছি। এটাই প্রমাণ, আমরা উন্নতি করছি।
নতুন দায়িত্ব নেয়া এই কোচ কতটা বাংলাদেশের ফুটবলে বদল আনতে পেরেছেন?
এক বছর হল কোচ এসেছেন। তিনি আসায় অনেককিছু বদলেছে। নতুন প্রজন্মকে তুলে এনেছেন। যুব প্রতিভারা দলে আসায় মরিয়া হয়ে সবাই সেরাটা দিচ্ছে। এই কোচ আমাদের দেশের জন্য যেমন সিস্টেমে খেলা সম্ভব, সেটাই নিয়ে এসেছেন দলের মধ্যে।
ভারতের সঙ্গে এই ফলটা প্রত্যাশিত ছিল?
উপমহাদেশের সব দলই ৫০-৫০। আগাম বলা খুব মুশকিল, কে সেরা! র্যাঙ্কিং খুব একটা এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে না। তবে ভারত-বাংলাদেশ সব সময়ই হাই-ভোল্টেজ ম্যাচ। ওই ৯০ মিনিট যে সেরাটা দেবে, সেই জিতবে।
তা-ও বাংলাদেশের থেকে ভারতের ফুটবলকে এগিয়ে রাখা হয়?
ভারত আমাদের থেকে এগিয়ে পরিকাঠামোতে। ভারতের ফুটবলের পরিবেশ বদলেছে। সেরা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে ভারতীয় ফুটবল দলকে। খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে কিন্তু সুনীল ছেত্রী ছাড়া কোয়ালিটির দিক থেকে আমাদের আর ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
কিন্তু এই ম্যাচে তো সুনীলকে খুঁজেই পাওয়া গেল না, সে কারণেই কি আপনারা কিছুটা এগিয়ে থাকলেন?একদমই না। যদি ভালো করে লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন, ভারতের পজিটিভ আক্রমণগুলো কিন্তু সুনীলের ভূমিকাতেই এসেছে। ও-ই আক্রমণ তৈরি করেছে।
ভারতের ফুটবলের যে বদলের কথা বলছেন সেটা বাংলাদেশ ফুটবলে আসছে না কেন?
বাংলাদেশের ফুটবলও বদলাচ্ছে। আগে অনেক কম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতাম। এখন চেষ্টা করা হচ্ছে, বেশি করে খেলতে। ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে আসার আগে আমরা প্র্যাকটিস ম্যাচও খেলেছি, যেটা আগে হত না।
কী উন্নতি লক্ষ্য করছেন দলের খেলায়?
সেটা কোয়ালিফায়ারের শেষে বুঝতে পারব। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন না করলেও এই খেলা থেকেও তো আমরা উন্নতি করতে পারি। গতবার কোয়ালিফায়ার থেকে যদি এক পয়েন্ট পেয়ে থাকি, আর এবার যদি তিন পয়েন্টে শেষ করি, তাহলে সেটাই আমাদের উন্নতি।
আপনি যখন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন, তখনো দল সাফল্য পেয়েছে। এই দলের সঙ্গে তার পার্থক্য কোথায়?
আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম তখন আমরা ‘অ্যাটাকিং ফুটবল’ খেলতাম। বেশকিছু ভালো ম্যাচ খেলেছি। এখন আমরা ‘কাউন্টার অ্যাটাক’ নির্ভর ফুটবল খেলি। সেখানে বড় বড় ম্যাচে ফল পাচ্ছি। পার্থক্য এটাই। আসল তো রেজাল্ট।
এই ম্যাচটা নিয়ে কী বলবেন, বাংলাদেশ কোথায় এগিয়ে থাকল ভারতের থেকে?
আমরা কোনো সুযোগ দেইনি ভারতকে। সুযোগ কাজে লাগিয়েছি। আবার অনেক সুযোগ কাজেও লাগাতে পারিনি। ভারত তেমনভাবে সুযোগ পায়নি। ছেত্রীর নিশ্চিত গোল দুটো সেভ হয়ে যাওয়াটাই আমাদের খেলায় ভীষণভাবে রেখে দিয়েছিল।
কলকাতার দর্শকদের দেখে কী মনে হল, ভারত আটকে যাওয়ায় হতাশ?
না, আমার মনে হয় আমাদের ৯০ মিনিটের ফুটবল দেখে তারা খুশি। কলকাতার ৫০ শতাংশ মানুষই তো বাংলাদেশের! সামনাসামনি সমর্থন করতে না পারলেও মনে মনে নিশ্চয়ই করে (হাসি)।