বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কে মাঝেমধ্যে তিক্ততার অন্যতম প্রধান কারণ সীমান্ত হত্যা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ প্রায়ই ‘গরু চুরির অজুহাতে’ বাংলাদেশিদের ওপর গুলি চালায়। এর ফলে বহু মানুষ প্রাণ হারান। এতে স্বাভাবিকভাবেই দু’দেশের সম্পর্কে চিড় ধরে।
এছাড়াও প্রতিবেশি দেশ ভারতের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক কিছু অমিমাংসিত ইস্যু রয়েছে। এসব বিষয় নিয়েই বিজিবি সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে বিজিবি এবং বিএসএফ এর মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন চলছে। শনিবার সকালে সম্মেলনের যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে সীমান্ত সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এবারের সীমান্ত সম্মেলনের আলোচনা বিগত বছরগুলোর চেয়ে ফলপ্রসু হবে বলে আমরা আশাবাদী। তবে বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে এক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। নয়তো কাগজে-কলমে আলোচনার দলিল স্বাক্ষর ছাড়া এ সম্মেলন ফলপ্রসু হবে না। যা কারোরই কাম্য নয়।
বিজিবি জানিয়েছে, ‘‘এবারের সম্মেলনে সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি/হত্যা/আহত করা, সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে বাংলাদেশে ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ, ইয়াবা, ভায়াগ্রা/সেনেগ্রা ট্যাবলেটসহ মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের চোরাচালান, অস্ত্র, গোলা-বারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্য পাচার, বাংলাদেশি নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া/আটক, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম/বাংলাদেশে জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ করানো, মানসিক ভারসাম্যহীন ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশ-ইন, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে উন্নয়নমূলক নির্মাণ কাজ, উভয় দেশের সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ, বাংলাবান্ধা আইসিপিতে দর্শক গ্যালারী নির্মাণ, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে যৌথ টহল পরিচালনা, রিজিয়ন/ফ্রন্টিয়ার পর্যায়ের অফিসারদের নিয়মিত বৈঠক আয়োজন, পাবর্ত্য অঞ্চলে হিল ফ্লাইং প্রশিক্ষণ ও অপারেশন পরিচালনা এবং উভয় বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও বিরাজমান সৌহার্দ্য বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’’
এ বিষয়গুলো বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হলে সীমান্তে কোন ধরনের দুর্ঘটনা বা রেষারেষি হবে না বলে আমরা মনে করি। এতে উভয় দেশেরই লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনকে সামনে রেখে আমরা বরাবরের মতো বলতে চাই, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শুধু সরকারের সাথে সরকারের নয়। আত্মিক এ সম্পর্ক দু’দেশের জনগণের সাথে জনগণের। এই সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে উভয়কেই আরও কৌশলী হতে হবে। এক্ষেত্রে বিএসএফ আরও দায়িত্বশীল আচরণ করলে দু’দেশের জনগণের বোঝাপড়া অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।