রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার জনগোষ্ঠীর বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আদালতের আইনজীবীরা যখন অন্য কোন দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশে আদালত স্থানান্তরের নজিরবিহীন আবেদন করেছেন, তখন সীমান্তে সেনাসমাবেশের মাধ্যমে অপতৎপরতা শুরু করেছে মিয়ানমার।
শুক্রবার হাজার খানেক বর্মী সেনা টেকনাফ সীমান্তে ৩টি পয়েন্টে টহল দিয়ে উত্তেজনাপূর্ণ রাখাইনে প্রবেশ করে। সেনাদের সন্দেহজনক ওই মুভমেন্টকে শান্ত সীমান্ত অশান্ত করা এবং রাখাইন অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা হিসাবে দেখছে ঢাকা। বিনা উস্কানিতে এভাবে সীমান্তের কাছে নতুন করে সেনাসমাবেশের প্রতিবাদে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়।
রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে নিয়ে মৌখিক প্রতিবাদ জানানো ছাড়াও তার হাতে একটি প্রটেস্ট নোট দেয়া হয়।
ঢাকার এই কড়া অবস্থানকে আমরা স্বাগত জানাই। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বদলে নতুন করে মিয়ানমারের এই ধৃষ্টতা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বর্মী বাহিনীর অপতৎপরতা বন্ধে জোরালো কূটনৈতিক পদক্ষেপসহ ঢাকাকে প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
রাখাইনেে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিষয়ে দেশটির একাধিক সৈনিক স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক আদালতের অফিস বাংলাদেশে আসলে বড় ধরনের বেকায়দায় পড়বে মিয়ানমার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিমন্ত্রী কয়েকদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। চতুর্মুখী চাপে দিশেহারা মিয়ানমার তাই সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাইছে বলেই আমাদের শঙ্কা। এজন্য বাংলাদেশকে সতর্কতার সঙ্গে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে ঝুলে থাকলে এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি বাড়ে। এ বিষয়টি আমরা বরাবরের মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করে দিতে চাই। রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান। মিয়ানমারের সব ধরনের অপতৎপরতা বন্ধ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধ্য করার দায় বিশ্বনেতারা এড়াতে পারেন না। কারণ, সংকটের শুরুর দিকে তাদের মানবিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল। সুতরাং মিয়ানমারের ধৃষ্টতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।