সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান হামলা, যুদ্ধজাহাজ থেকে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ জঙ্গি গোষ্ঠি ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং অন্যান্য জঙ্গি দলগুলোকে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে রাশিয়া। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট এবং উত্তর আটলান্টিক দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের শাসন টিকিয়ে রাখতেই বিদ্রোহী দলগুলোর উপর এই হামলা চালানো হচ্ছে বলে রাশিয়ার হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র কয়েকমাস ধরে আইএসবিরোধী বিমান হামলা চালিয়ে আসছিলো। নৃশংসতার ঘৃণ্যতম নজির দেখানো আইএসকে দমন করার জন্য রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলিত আক্রমণের আহবান জানালেও রাশিয়ার পদক্ষেপকে ভ্রান্ত অ্যাখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তা প্রত্যাখান করে। আবার বেশকয়েকবার ন্যাটোভুক্ত দেশ তুরস্কের আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় রাশিয়াকে সতর্ক করা হয়েছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি।
২০১১ সালে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ বিরোধীদের আন্দোলন তীব্রতর হওয়ার প্রেক্ষাপটে আমেরিকা বাশারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহীদের সহায়তা করলেও সিরিয়ার মিত্র দেশ রাশিয়ার অব্যাহত সমর্থনের মুখে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। এরইমধ্যে সিরিয়া এবং ইরাকের ভুখণ্ড দখল করে আইএস তার আধিপত্য বৃদ্ধি করেছে। তেল সম্পদ দখলের ফলে বিপুল সম্পদশালী এই জঙ্গি গোষ্ঠি তার দল ভারী করতে মানুষকে আকৃষ্ট করতে এবং বর্বরোচিত পন্থায় হত্যা ও তার ভিডিও প্রচার করে বিশ্ব নেতৃত্বের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি করার ক্ষেত্রেও সাফল্য পেয়েছে।
বিশ্বরাজনীতিতে পরাশক্তি দেশগুলোর হিসাব নিকাশ পাল্টে দেয়ার মতো এমন চরম পর্যায়ে একসময় শীতল যুদ্ধে আমেরিকার কাছে পরাজিত সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে হওয়া রাশিয়া তার পক্ষে পেয়েছে ইরানকে। মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অবস্থান সুসংহত করার এই লড়াইয়ে লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠিও রয়েছে তাদের পক্ষে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আবারো বড় কোন সংঘাতের আশংকাও উড়িয়ে দিচ্ছে না আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা।
কাস্পিয়ান সাগর থেকে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ সিরিয়ায় আইএসকে লক্ষ্য করে রকেট চালনা সিরিয়ায় দেশটির ভূমিকা বৃদ্ধির আভাস দেয়। হামা প্রদেশ এবং ইদলিবের কাছে সিরিয়ান আর্মিকে সহায়তার উদ্দেশ্যে ইসলামি জঙ্গিদের উপর রণতরী থেকে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার দূরবর্তী লক্ষ্যে ২৬ টি ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ করা হয়েছে বলে ক্রেমলিন ঘোষণা করে। প্রথমবারের মতো রাশিয়ার এত দূরবর্তী আক্রমণের ব্যাপারে সিরিয়ান আর্মিকে সাহায্যের বিষয়টি পশ্চিমাদের দাবি।
প্রেসিডেন্ট পুতিন সিরিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক এবং সৌদি আরবের সহযোগিতা চেয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র আইএস এর অবস্থানের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ে রাজি হয়নি এবং এই মনোভাব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিরত থাকতে যুক্তরাষ্ট্রের অজুহাত খোঁজার চেষ্টা বলে অভিহিত করেছে রাশিয়া। তবে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই সিরিয়ায় বিমান হামলা অব্যাহত রাখায় পাইলটদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই বিষয়ে আলোচনার আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব এ্যাশটন কার্টার সিরিয়ায় রাশিয়ার কৌশল ভুল বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের চলমান হামলা আইএসকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এটাই মূল ভ্রান্তি। তারা যতোক্ষণ তাদের ভ্রান্ত নীতি অনুসরণ করে চলবে ততোক্ষণ আমরা তাদের সহযোগিতার বিষয়ে রাজি হবো না।
তবে সিরিয়ায় সেপ্টেম্বর মাসের ৩০ তারিখ থেকে পরিচালিত রাশিয়ার বিমান হামলায় আইএসকে ছাড়া অন্য কোনো লক্ষ্যে আঘাত করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আইএস এবং অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠিকে লক্ষ্য করে ১১২ টি হামলা করা হয়েছে বলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।