মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নৌ-কমান্ডোদের অভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নামে পরিচিত। এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে গেল আগস্টে এই নামে সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা আসে সরকারের তরফ থেকে। এরপরই ছবিটি আসে আলোনায়। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বাজেটের ছবি হবে বলেও শোনা যায়। সংবাদপত্রে ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর বাজেট ত্রিশ কোটি টাকা নির্ধারণ হয়েছে বলেও খবরে আসে। তবে বাজেট নিয়ে কিছু জানেন না বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম।
তার দাবী, আমি নির্মাতা মানুষ। বাজেট তৈরি করা আমার দায়িত্ব নয়। ‘অপারেশন জ্যাকপট’ ছবির এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার ইকবাল কবির জুয়েল এই বিষয়ে জানেন।
‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর জন্য ত্রিশ কোটি টাকা বাজেট নির্ধারণ হওয়ার খবরে সেলিম বলেন, এখনো বাজেট প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। ছবির প্রযোজক বাজেট তৈরি করছেন, সেটা শেষ হলে সরকারের কাছে তা জমা দেয়া হবে। এরপর আমরা ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর কার্যক্রম শুরু করবো। অনেকেই বাজেটের খবর শুনে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন ত্রিশ কোটি টাকা বাজেট কিনা, কিন্তু ছবির বাজেট নিয়ে আমি কোথাও কিছু বলিনি।
বাজেট নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না দাবী করে নির্মাতা জানান, বাজেট নিয়ে আমার ভাবনার কিছু নেই। এর দায়িত্বও আমার না। এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার আছেন তিনিই সব করছেন। আমি শুধু সিনেমাটা করতে চাই। আর তা করতে যা যা ইমপ্লিমেন্ট করা দরকার সেটা ঠিকঠাক পেলেই হলো। এটার বাজেট কতো কোটি হবে, না অন্য কি হবে সেটা দেখা আমার দায়িত্ব না।
এদিকে সিনেমার স্ক্রিপ্ট তৈরির পর ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর ইতিহাস নিয়ে উঠেছে বিতর্ক। ওই সময়কার নৌ কমান্ডো আবু মুসা চৌধুরীর অভিযোগ এনে গণমাধ্যমে বলেন, অপারেশন জ্যাকপটে ‘এমভি হরমুজ ও এমভি আব্বাস’ নামে কোনো জাহাজ ডুবানো হয়নি। এরপরই মূলত ছবির কাজে কিছুটা ভাটা পড়ে। এমনকি আগামি ১৬ সেপ্টেম্বর ছবির মহরত অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিলো, যা এই তারিখে না হওয়ারও সম্ভাবনাই দেখছেন স্বয়ং নির্মাতা।
তবে ছবিটি নিয়ে শিগগির একটি সিদ্ধান্ত আসবে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান সিরাজ। চট্টগ্রামে একটি সেমিনারে সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন ওই সময়কার নৌ কমান্ডো আবু মুসা চৌধুরীর অভিযোগের পর ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর চিত্রনাট্য ঠিক আছে কি না তা প্রধানমন্ত্রী দেখবেন। এরপরেই ছবির স্ক্রিপ্ট নিয়ে আসতে পারে সঠিক সিদ্ধান্ত। শিগগির শুরু হতে পারে ছবির কাজ।
তবে ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর সত্যতা নিয়ে যে অভিযোগ এ বিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেছেন নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। স্ক্রিপ্ট তৈরির আগে নিজের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অপারেশন জ্যাকপট’ আমার পছন্দের কাজ। এই ছবির জন্য সরকারি ভাবে আমাকে রাইটার ও ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমি আমার কাজ করেছি। ইতিহাস থেকে সমস্ত তথ্য উপাত্ত নিয়ে কাজ করেছি। নথিপত্র দেখেছি। ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর সাথে জড়িত অন্তত ২২ থেকে ২৩ জন নৌকমান্ডোর ইন্টারভিউ করেছি, যারা এই অপারেশনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এই অপারেশন নিয়ে তৎকালীন নৌকমান্ডোসহ অন্যান্য লেখকের বিভিন্ন বইয়ের শরনাপন্ন হয়েছি। সবকিছু দেখে, বিশ্লেষণ করে সেখান থেকে আমরা একটা ফিকশন দাঁড় করিয়েছি। এটা কিন্তু ডকুমেন্টারি না। এখন আমাদের স্ক্রিপ্ট না দেখে কেউ কেন অভিযোগ তুললেন, এটা আমি জানি না।
তবে নির্মাতা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, শিগগির সরকারি সব প্রসেস সম্পন্ন হলেই সিনেমা নির্মাণে নেমে যাবেন তিনি।
‘অপারেশন জ্যাকপট’ ছাড়াও নতুন আরেকটি প্রজেক্ট নিয়ে এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। সালাউদ্দিন লাভলু ও অমিতাভ রেজার সঙ্গে মিলে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের জন্য ১৫ পর্বের ধারাবাহিক নির্মাণ করছেন। এরইমধ্যে শুটিং সম্পন্ন করেছেন। শিগগির আসছে প্রচারে। এছাড়া নির্মাতার সবশেষ নির্মিত ছবি ‘স্বপ্নজাল’ চলছে আমেরিকা ও ফ্রান্সে। শিগগির আনুষ্ঠানিক ভাবে কলকাতায়ও মুক্তি পাবে ছবিটি।
ছবি: ওবায়দুল হক তুহিন