ফাও সিগারেট না দেয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটকের সামনে এক দোকানিকে ঢাবি ছাত্রলীগের তিন নেতা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের তিন পদধারী নেতা মো. হানিফ নামের এক চা দোকানিকে মারধর করেন।
মারধরের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রলীগ নেতা হেলাল উদ্দীন তাইসিনের কাছে ওই দোকানির ২০০০ টাকারও বেশি পাওনা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দীন তাইসিন, অর্থ বিষয়ক উপ-সম্পাদক ইফতেখার আহমেদ সুজন, স্কুল ছাত্র বিষয়ক উপ-সম্পাদক আরাফাত হোসেন অভি ঢাকা মেডিকেলের সামনে মো. হানিফের চায়ের দোকানে চা খেতে আসেন। দোকান মালিক হানিফ তখন দোকানে ছিলেন না।
‘‘সুজন মো. হানিফের স্ত্রীর কাছে সিগারেট চাইলে সুজনকে তিনি বলেন, সিগারেট নেই। আপনার কাছে তো কিছু টাকা পাই, দিচ্ছেন না কেন? এর কিছুক্ষণ পর সিগারেট নিয়ে মো. হানিফ দোকানে এলে তাকে মারধর শুরু করে সুজন ও তার বন্ধু অভি। একপর্যায়ে হানিফের দোকান ভাঙচুর শুরু করে সুজন ও অভি৷’’
এসময় দোকানের পাশের বেঞ্চে বসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আসিফ ত্বাসীন ও সহ-সভাপতি মীর আরশাদুল হক৷ মীর আরশাদুল হক মারধর ও দোকান ভাঙচুরকারী সুজন ও অভিকে বুঝিয়ে থামাতে গেলে তারা তার ওপরও চড়াও হয়।
উত্তেজনার একপর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের মারার হুমকি দিয়ে লাঠিসোঁটা আনতে দৌঁড়ে শহীদুল্লাহ হলের দিকে যান৷ তখন তার বন্ধু শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক উপ-সম্পাদক মো. শামসুর রহমান সুইট তাকে শান্ত করে ফিরিয়ে আনেন।
এরপর বিষয়টি ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসকে জানানো হলে তিনি রাত সোয়া দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন৷ তিনি তাইসিনের কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তাইসিনের বর্ণনা প্রত্যক্ষদর্শী ও সাংবাদিক কারো সাথেই মিল না থাকায় পালিয়ে যাওয়া সুজন ও অভিকে নিয়ে আসতে বলেন সনজিত৷ প্রায় ৪০ মিনিট পর সুজন ও অভি ঘটনাস্থলে আসেন। সনজিত চন্দ্র দাসের নির্দেশে সুজন ও অভি দোকানির মো. হানিফের কাছে ক্ষমা চান। ক্ষতিপূরণ হিসেবে সনজিত চা দোকানি মো. হানিফকে ১০০০ টাকা দেন৷
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হেলাল উদ্দীন তাইসিন হানিফের দোকানে প্রায় নিয়মিত বাকি খান, কিন্তু ঠিকমতো অর্থ পরিশোধ করেন না৷ প্রায়ই পাওনা টাকা চাইলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘আমরা ঢাবির ছাত্ররা কি ফাও খাই নাকি!’ তাইসিনের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে৷ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী৷ তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর অনুসারী।
জানতে চাইলে হেলাল উদ্দীন তাইসিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমার জুনিয়র সুজন হানিফ ভাইয়ের দোকান থেকে সিগারেট নিয়েছে। সুজন টাকা দিতে চাইলে জগন্নাথ হলের এক বড় ভাই তাকে টাকা দিতে নিষেধ করেন এবং তিনি দোকানদারকে টাকা দিবেন বলে জানায়। কিন্তু তিনি আর দোকানদারকে টাকা দেননি। পরে সুজন ওই দোকানে আসলে দোকানদার তার থেকে সিগারেটের টাকা চায়। তখন সুজন বলে আমার টাকা তো বড় ভাই দেওয়ার কথা ছিল। এক পর্যায়ে দোকানদারের স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে। তখন দোকানে হানিফ ভাই ছিলেন না। এর কিছুক্ষণ পর হানিফ ভাই দোকানে আসলে তাকে আমি জাস্ট একটা থাপ্পর দিই।’
বাকি টাকা পাওনার কথা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম বর্ষ থেকে হানিফ ভাইয়ের দোকানে বাকি খাই। কিন্তু তিনি এখন কত টাকা পাবেন তা আমি হিসাব করিনি। হিসাব করে তার পাওনা টাকা দিয়ে দিবো।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘ঘটনাটি শুনে আমি রাতে সেখানে (ঘটনাস্থলে) গিয়েছি। এটা অবশ্যই ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমাদের সাধারণ সম্পাদক (সাদ্দাম হোসাইন) অসুস্থ আছে। তার সাথে কথা বলে পরে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।’
এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।