লকডাউনের শুরু থেকে অসচ্ছল মানুষকে সাহায্য করতে শহরের রাস্তায় রাস্তায় ছুটে বেড়িয়েছেন চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববি। তবে জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে তিনি অসুস্থতা অনুভব করেন। তার শরীরে করোনার প্রায় সবগুলো উপসর্গ দেখা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ববি তার নিজ বাসায় আইসোলেশনে যান। একমাসের মাথায় ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’ ছবির এ নায়িকা কিছুটা সুস্থতা অনুভব করলেও জানালেন, তার শরীর প্রচণ্ড দুর্বল। করোনাকাল ও ভবিষ্যৎ কাজের পরিকল্পনা নিয়ে মুঠোফোনে ববির কথা হয় চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে…
করোনার শুরু থেকেই আপনাকে ত্রাণ নিয়ে ছুটে যেতে দেখা গেছে। শোনা যাচ্ছে, মাঝখানে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন?
মানুষের পাশে যখন খাবার নিয়ে গিয়েছি, তখন ভালো ছিলাম। তার অনেকদিন পর পর্যন্ত সুস্থ ছিলাম। এরমধ্যে সুপারশপে টুকটাক বাসার খাবারের জন্য কেনাকাটা করতে যেতাম। কিন্তু কই থেকে করোনা জুটল আমি ঠিক জানি না। ২৬ জুন থেকে করোনার প্রায় সবগুলো উপসর্গ আমার মধ্যে ছিল। জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি, খাবারে অরুচি, খেতে গেলে কোনো স্বাদ পাচ্ছিলাম না। সিওর ছিলাম করোনা হয়েছে! তাই আর টেস্ট করিনি। প্রায় চার সপ্তাহ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছি।
করোনা মুক্ত কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য টেস্ট করা প্রয়োজন মনে করছেন না?
টেস্ট করতে আমার কেন জানি ভয় লাগে! আমাদের দেশে এ প্রক্রিয়াটাও স্বচ্ছ নয়। আসলে অসুস্থ থাকার সময়টা খুব খারাপ গেছে। একদমই খাবার খেতে পারতাম না। কোনো কিছুর গন্ধও পেতাম না। দিনরাত কখন যেত টের পেতাম না। ফোন থেকেও দূরে ছিলাম। বাইরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। অসুস্থতার কথা আমার মা, বোন, ছোট খালা এবং বাসার কেয়ার টেকার জানতো। এখন করোনার কোনো উপসর্গ আপাতত আমার মধ্যে নেই। এ রোগ থেকে সুস্থ হলে প্রত্যেকেই দুর্বল অনুভব করছেন। আমারও একই অবস্থা। এছাড়া এখন আলহামদুলিল্লাহ্ আমি সুস্থ।
বাসায় থেকে কীভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন?
গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস খেয়েছি, গরম পানির ভাব নিয়েছি, গার্গল করেছি, আদা-লবঙ্গ মিশিয়ে চা খেয়েছি। এন্টিবায়োটিক ঔষধ নিয়েছি। ভিটামিন ডি, জিংকসহ মোট ছয় প্রকার ঔষধ খেয়েছি। আমার বোন অস্ট্রেলিয়াতে চিকিৎসক। তার পরিচিত প্রফেসরের পরামর্শ মেনে চলেছি। প্রথমে খারাপ লাগতো কারণ পাশে কেউ ছিল না। মা-বোন দুজনেই দেশের বাইরে। তাদের সঙ্গে কম কথা হতো। ফোনে কথা বললেই মাথা ব্যথা চোখ ব্যথা থাকতো। প্রথম দুই সপ্তাহে খুব দুর্বল ছিলাম। তারপর একটু একটু করে রিকভার করতে থাকি। কোনো কাজ না করলেও দুর্বলতার কারণে মনে হতো কত কাজ করেছি! তবে করোনা হলে মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকাটা সবচেয়ে আগে দরকার।
সিনেমা বা শুটিংয়ে ফেরার নিয়ে কিছু ভেবেছেন?
সিনেমা হলের জন্য নির্মিত কাজগুলো তো করোনার জন্য বন্ধ হয়ে আছে। কিন্তু ইদানিং অফার আছে ওয়েব ফিল্মের। সাবধানতা মেনেই শুটিংয়ের কথা বলছে। সদ্য রিকভার হলাম। এ অবস্থায় কীভাবে শুটিং করবো! পরিচিত অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন, কেউ কেউ মারা যাচ্ছেন। তাই আরও কিছুদিন সময় নিতে চাই। এছাড়া মাস্ক বা দূরত্ব বজায় রেখে ভালোভাবে কাজ করা সম্ভব না। এজন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে চাচ্ছি। আমার মনে হচ্ছে, এ বছরটাই ধৈর্য্য ধরে থাকা উচিত। খেয়ে পরে, সুস্থ থাকা উচিত। সুস্থ থাকলে কাজ তো আগামীতে করা যাবে। ২০২০ সালটা আমাদের সবার কাছে একদম মাইনাস।
সিনেমা না থাকলেও সিনেমা তৈরির তীর্থস্থান এফডিসি উত্তপ্ত। এফডিসির মানুষরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং বিভক্ত হয়েছেন। দর্শকদের মনে এতে নেতিবাচক ধারণা জন্ম হচ্ছে। শিল্পী হিসেবে এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানতে চাই?
করোনায় এই চরম খারাপ সময়ে এ বিষয়গুলো একেবারেই অপ্রত্যাশিত। বারবার নিজেরাই হাসির পাত্র হচ্ছেন। সাধারণ মানুষদের কাছে নিজেরাই ছোট হচ্ছেন। কিছু মানুষের এসব কর্মকাণ্ডে শিল্পীরা যথাযত সম্মান হারাচ্ছেন। কেন অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো পাবলিকলি আনা হচ্ছে আমি বুঝি না। কয়েকজন শিল্পী কিছু হলেই ভালো মন্দ বিবেচনা না করে ফেসবুকে পোস্ট, লাইভ করে জানাচ্ছেন। তিনি যদি শিল্পীই হন, তাহলে তার তো দায়বন্ধতা রয়েছে! সবকিছু প্রকাশ্যে আনায় অন্য শিল্পীদের সম্মানহানি করা হচ্ছে। এটা মোটেও উচিত নয়। এতে করে একটা ভালো কাজ করলেও সেখানে সাধারণ মানুষ বাজে মন্তব্য করছে। এগুলো অনতি বিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। সুষ্ঠু কাজে পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ বিভক্ত হওয়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।