চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সিএনজি চালকরা উবার-পাঠাও বিরোধী, নাগরিকরা কী বলছেন?

রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে জাহাঙ্গীর হোসেন মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে যাবেন আত্মীয়কে আনতে। তাড়া থাকায় তিনি সিএনজি চালিত অটোরিকশা খুঁজছেন। শুক্রবার হওয়ায় বিআরটিসি বাস ডিপোর কাছে চার-পাঁচটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা অলস দাঁড়িয়ে আছে। অটোরিকশাগুলোতে বসানো আছে মিটার। নিয়ম অনুযায়ী এসব অটোরিকশা কিলোমিটার প্রতি ভাড়া নিতে বাধ্য। অথচ এগুলোর একটিও মিটারে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়ায় বাধ্য হয়েই ২২০ টাকায় একটিতে চেপে বসলেন জাহাঙ্গীর।

তিনি চলে যাওয়ার পর চ্যানেল আই অনলাইনের এই প্রতিনিধির কথা হয় মিটারে রাজি না হওয়া কয়েকজন অটোরিকশা চালকের সঙ্গে। কেন মিটারে গেলেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে মো. মিন্টু নামের একজন চালকের সাদামাটা উত্তর, ‘ছুটির দিন, এমনেই যাত্রী কম, হের উপর মিটারে যাওন পোষায় না।’

কেন ‘পোষায় না’, এমন প্রশ্নের উত্তরে পাশের আরেকটি অটোরিকশার চালক মো. ইউনুস মোল্লা বলেন, ‘‘গ্যাসের দাম বাড়নের পর আর ভাড়া বাড়ে নাই। দুইশ’ আড়াইশ’ ট্যাকার গ্যাস, মালিকরে জমা দেই ১ হাজার-১২শ’। এরপর আবার সপ্তাহের ৫-৬ দিনই রাস্তায় জ্যাম লাইগা থাকে। বেশি ক্ষ্যাপ মারোন যায় না। এজন্য ছুটির দিনে বাড়তি কামাইয়ের আশা থাকে। তাই মিটারে পোষায় না।”

উবার-পাঠাওয়ের মোটরসাইকেল রাইডের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকায় সিএনজি অটোরিকশা

এরকম অজস্র ‘না পোষানো’র যুক্তিতে সবুজ-ধূসর রঙের খাঁচার মতো যানটির চালকদের কাছে জনগণ যেন জিম্মি! একরকম জিম্মি হয়ে থাকার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসনাইন মাহমুদ অঙ্গন বলেন: সিএনজি অটোরিকশায় শেষ কবে মিটারে গিয়েছি ভুলে গেছি। ক্যাম্পাস থেকে উত্তরা যেতে চাইলে তারা ৪শ’-সাড়ে ৪শ’ টাকা ভাড়া হাঁকিয়ে বসে থাকে!

এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীবাসীর যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, তখন উবার-পাঠাওয়ের মতো রাইডশেয়ারিং সেবা চালু হওয়ায় খুব সহজে এবং কম খরচে গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে বলে মনে করেন ঢাবিতে এমবিএ পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন: অটোরিকশার ভাড়া অরাজকতার চেয়ে উবার-পাঠাওয়ের ভাড়া নেয়াটা অনেক বেশি স্বচ্ছ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দরাদরি করে অটোরিকশা ঠিক করতে হচ্ছে না। আয় অনুযায়ী অনেকেই উবার-পাঠাও বেছে নিতে পারছে। আমি যে টাকায় সিএনজি অটোরিকশায় উত্তরা যেতে বাধ্য হতাম, এখন সেই টাকায় এসি গাড়িতে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছি স্মার্টফোনে উবার অ্যাপ দিয়ে।

অটোরিকশা মালিকদের আন্দোলনের হুঁমকিকে মোটেই ভালো চোখে দেখার সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন: পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে উবারের মতো বহু রাইড শেয়ারিং অ্যাপ আছে। সেখানে অটোরিকশাগুলো ন্যায্য ভাড়ায় স্বল্প দূরত্বে যায়। ভারতে যার যেমন আয়, সে তেমন যানবাহন বেছে নিতে পারছে। কই সেখানে তো অটোরিকশা চালকরা এরকম হুমকি দেয়নি।

রাজধানীর অটোরিকশা চালকরা কম দূরত্বে যেতে চান না, যেতে চাইলেও মিটারের চেয়ে ৩০-৫০ টাকা বেশি ভাড়া চান। এটি অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে নাগরিকদের আরেকটি সাধারণ অভিযোগ।

প্রতিনিয়ত এমন ভোগান্তির শিকার হয়ে এখন উবারে ভরসা পাচ্ছেন পান্থপথের বাসিন্দা রাশনা মাহজাবিন। নিয়মিত উবার ব্যবহার করেন জানিয়ে তিনি বলেন: উবার আমাকে প্রোমো কোড (বিশেষ ছাড়) দিচ্ছে। এইতো সেদিন পান্থপথ থেকে বারিধারা গিয়েছি অথচ ভাড়া দিতে হয়েছে ১শ’ টাকারও কম।

উবারে অভ্যস্ত হলেও মোটরসাইকেল ভীতির কারণে পাঠাও রাইড নেওয়া হয়না বলে জানান তিনি।

তবে জ্যামের শহরে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর বাহন হিসেবে পাঠাও রাইড বেছে নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মায়েদা তানহা বিদুষী।

সিএনজি অটোরিকশার পরিবর্তে পাঠাওয়ের নিয়মিত যাত্রী হওয়া বিদুষী বলেন: কম সময়ে তুলনামূলক কম ভাড়ায় হুটহাট যাতায়াতের জন্য পাঠাও বেশ কার্যকর। যেখানে সিএনজি ড্রাইভারদের স্বেচ্ছাচারিতা আর আকাশচুম্বী ভাড়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়া লাগে, পাঠাও সেক্ষেত্রে বেশ সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী।

‘সিএনজির ক্ষেত্রে মিটার নিয়ে ঝামেলা, বেধে দেয়া বেসিক ভাড়ার পরেও অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়া, ঢাকার তীব্র যানজটে আটকে থাকার চেয়ে যে কোন সময়েই পাঠাও এর সহজলভ্যতা আর ঝামেলাবিহীন যাতায়াত এর জন্য পাঠাও বেশ নির্ভরযোগ্য অপশন।’

একজন যাত্রীকে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে পাঠাও

নাগরিকদের কাছে উবার-পাঠাওয়ের এমন জনপ্রিয়তায় যাত্রী সংকটে পড়েছে সিএনজি অটোরিকশাগুলো। চালকেরা অকপটেই বললেন: খারাপ সময় চলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড় এলাকায় যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা বেশি কয়েকটি অটোরিকশার চালকরাই কাছাকাছি কেউ আসলেই হাঁক-ডাক দিচ্ছেন। এখানেই কথা হয় অটোচালক হানিফ মৃধার সঙ্গে।

তিনি বলেন: এখন মোবাইল দিয়া গাড়ি-মোটরসাইকেল ডাইকা যাত্রী উঠতাছে। এই কারণে আমাগো যাত্রী কমছে। এখন মহাসড়কেও সিএনজি অটোরিকশা নিষেধ। তাই এখন ঢাকার ভিতরে সিএনজি অটো বাড়লেও যাত্রী কম।

এমন সংকটে সিএনজি অটোরিকশা মালিকরা ২৭ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে এবং টিএসসি মোড়ে দাঁড়ানো অটোরিকশার চালকরা জানান এখনো ধর্মঘটের কথা তারা শোনেননি।

এই পরিস্থিতির জন্য অটোরিকশার মালিকদেরই দায়ী করেছেন অটোচালক আব্দুস সামাদ। মালিকপক্ষের কারণে যাত্রী-চালক সবাই হতাশ হচ্ছে জানিয়ে ক্ষুব্ধ এই চালক বলেন: অটোরিকশাগুলারে আগুন লাগায়া দিক। তারা ১ হাজার-১২ ট্যাকা জমা নিতাছে। অথচ গ্যাসের দাম, পকেট খরচ দিয়া, সারাদিন জ্যামে বইসা আমরা কয়টা ক্ষ্যাপ মারতে পারি?

‘‘বাড়িতে ২শ’-৩শ’ ট্যাকা নিয়া যাইতে পারি না। গ্রামে কোনো মাসে ৪ হাজার আবার কোনো মাসে ২ হাজার এরকম ট্যাকা পাঠাইতে পারি। আমরা বাঁচতে যাত্রীগো কাছ থিকা কিছু বেশি ট্যাকা নিতাছি।”