প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকার শাহজালাল আবাসিক হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম জুনায়েত (৪০) খুন হন। তার কাছে কোটি টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড স্যুটার সবুজ ওরফে সজিব (২২)। সেই চাঁদা না দেওয়ায় বাঁচতে পারেন নি জুনায়েত।
তার হত্যাকাণ্ডের এতো বছর পর সেই মামলার প্রধান আসামি স্যুটার সবুজকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সোমবার রাত ১০টার দিকে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর একটি দল যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
পিবিআই বলছে, জুনায়েতের কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা চেয়েছিল শাহাদাত বাহিনী। কিন্তু সেই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় তাকে।
পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জুনায়েত হত্যার ঘটনার কয়েক বছর আগে থেকেই স্থানীয় চাঁদাবাজ শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহদাত গ্রুপের নামে সেকেন্ড ইন কমান্ড আনোয়ার হোসেন সবুজ ওরফে সজিব ওরফে স্যুটার সবুজসহ তার সহযোগী স্যুটার সোহেল, শেখ মৃদুল ওরফে বাবু ওরফে মির্জা, আব্দুর রহিম ও আনোয়ার হোসেন পলাশ হোটেল থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে আসছিল।’
‘‘শাহদাত গ্রুপ রফিকুল ইসলাম জুনায়েতের কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয় তারা। এরপর তার মোবাইলফোনে বিভিন্ন হুমকি-ধামকির আসতে থাকে। কিন্তু জুনায়েত চাঁদা না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। আর এ কারণেই পরিকল্পিতভাবে জুনায়েতকে হত্যা করা হয়।
২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে জুনায়েত পাইকপাড়া সরকারি স্টাফ কোয়াটার জামে মসজিদের সামনে দিয়ে আসার পথে তাকে আসামিরা ঘিরে ধরে। স্যুটার সবুজ জুনায়েতকে গুলি করে গুদারাঘাট বটতলা দিয়ে সবাই মিলে পালিয়ে যায়। তাদের মোবাইলফোন বন্ধ করে সিমসহ তুরাগ নদীতে ফেলে দেয়া হয়।’’
মামলার ঘটনায় জড়িত সহযোগী আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
শাহজালাল আবাসিক হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম জুনায়েতের হত্যাকাণ্ডের পরদিন সকালে নিহতের বড় ভাই ডা. সাঈদ হোসেন সোহাগ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৬)।
দারুস সালাম থানা পুলিশ মামলাটি তদন্তকালে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামি সোহেল ওরফে স্যুটার সোহেল (৩৫) ও শেখ মৃদুল ওরফে বাবু ওরফে মির্জাকে (৩৪) গ্রেপ্তার করেন।
এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে এবং ঘটনায় জড়িত আব্দুর রহিম ও আনোয়ার হোসেন পলাশকে গ্রেপ্তার করে মামলাটি তদন্ত শেষে ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
ডিবি পুলিশ প্রধান দুজন আসামি গ্রেপ্তার না করেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করায় বাদী আদালতে নারাজি আবেদন করেন। আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
দায়িত্ব পাওয়ার পর পিবিআই ঢাকা মেট্রোর একটি দল গতকাল সোমবার রাতে মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করে।