সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও যথেচ্ছ ব্যবহার সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করেছেন বারাক ওবামা। অপব্যবহারের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এ মাধ্যমের যথেচ্ছ ব্যবহার জটিল বিষয়গুলো সম্পর্কে মানুষের বোধগম্যতাকে বিকৃত করছে এবং ভুল তথ্যের কারণে জনমনে ভ্রান্ত ধারণা জন্মাচ্ছে।
ব্রিটেনে বিবিসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ অনুষ্ঠান রেডিও ফোর ‘টুডে’র এক সাক্ষাৎকারে সামাজিক যোগাযোগ, ইন্টারনেট ও এই মাধ্যমে দায়িত্বশীলদের আচরণ নিয়ে মন্তব্য করেন ওবামা। বড়দিন উপলক্ষে প্রচারিত ওই অনুষ্ঠানের অতিথি সম্পাদক ছিলেন প্রিন্স হ্যারি।
বুধবার ব্রিটিশ রাজপুত্রকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ওবামা, ‘আগামীতে এমন দিন আসছে, যখন সত্য বলে আর তেমন কিছুই থাকবে না। মানুষ তখন কেবল সেটাই পড়বে ও শুনবে, যেগুলো তাদের ব্যক্তিগত মতকেই আরও পোক্ত করবে।’
ওবামার উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন সাধারণ নাগরিকের মত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন। সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেছেন, ‘নেতৃত্বে থাকা মানুষদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার ও বার্তা প্রদানে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পর বারাক ওবামার এই সাক্ষাৎকারটিকে বিরল হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। নিজের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে ক্ষমতায় আসা ও প্রেসিডেন্ট পর্ব সমাপ্ত করা পর্যন্ত আকর্ষণীয় ভাষণের জন্য সুনাম ছিল ওবামার। ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের পঞ্চম উত্তরাধিকারী প্রিন্স হ্যারির বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও তেমনি বেশ সাবলীলভাবেই দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট।
ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়েও সতর্কতা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন ওবামা। বলেন, আমরা যখন ক্ষমতায় থাকি বা নেতৃত্ব গ্রহণ করি, তখন ইন্টারনেটে সর্বসাধারণের ব্যবহারযোগ্য একটা জায়গা কীভাবে তৈরি করা যেতে পারে সেটা আমাদেরই ভাবতে হবে।
‘ইন্টারনেটের একটা ঝুঁকি হল মানুষ সেখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বাস্তবতার মুখোমুখি হতে পারে। মিথ্যা তথ্য তাদের এমনভাবে গ্রাস করতে পারে যা মানুষকে আরও পক্ষপাতদুষ্ট করে তুলবে।’
‘এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা এমনকিছু করতে পারি কিনা যেখানে, সমাজে শুধু বিভক্তির সৃষ্টি না হয়ে ভিন্নমতের আলোকে অভিন্ন অবস্থান ও ঐকমত্যের জায়গাগুলো খুঁজে পাবে।’ যোগ করেন ওবামা।
শঙ্কার দিকটা বলে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুরুত্বের দিকটাও তুলে ধরেছেন ওবামা। তবে সমমনা মানুষদের একজোট হওয়া ও যোগাযোগ গড়ে ওঠার জন্য এ মাধ্যমকে মোক্ষম যেমন বলেছেন, তেমনি ইন্টারনেট দুনিয়ার বাইরে মানুষের মাঝে সরাসরি সামাজিক যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার উপরও গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। এতে মানুষের উগ্রমতাদর্শী চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসতে পারে বলে মত ওবামার।
টুডে সংবাদ অনুষ্ঠান সম্পাদনা করা ছাড়া প্রিন্স হ্যারি অনুষ্ঠানে একটি সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন এদিন, যেখানে তিনি সাময়িক ঘটনাবলীর অনুষ্ঠান সম্পাদনার অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেন।
প্রিন্স হ্যারি বলেন, আমি খুব বেশি সাক্ষাৎকার নেইনি। তবে সাক্ষাৎকার নিতে আমি খুব মজা পেয়েছি। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ওবামার সাক্ষাৎকার নেয়াটা দারুণ অভিজ্ঞতা। যদিও তিনিই আমার সাক্ষাৎকার নিতে চাইছিলেন।