বিশ্ব বাজারে তেলের ব্যাপক মূল্যপতনের পরও বিস্ময়করভাবে রাশিয়াকে টপকে বিশ্ব সামরিক ব্যয়ে তিন নম্বর স্থানে উঠে এসেছে সৌদি আরব।
২০১৫ সালে দেশটির সামরিক ব্যয় ছিল ৮৭ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মঙ্গলবার স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্স ইনস্টিটিউট (সিপ্রি)’র এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর গত বছর প্রথমবারের মতো বিশ্বজুড়ে সামরিক খাতের প্রকৃত ব্যয়ও বেড়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।
ইয়েমেন যুদ্ধের কারণে সৌদি আরবের সামরিক ব্যয় বেড়েছে। বার্ষিক হিসেবে যা ২০০৬ সাল থেকে ব্যয় হওয়া অর্থের দ্বিগুণ। এখন এটি রাশিয়ার মতো সামরিক শক্তির দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে জ্বালানির মূল্য কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিও প্রতিরক্ষা ব্যয় অনেকখানি কমাতে বাধ্য হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থানে বিস্তর পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। গত বছর ৫১ দশমিক ৩ বিলিয়ন অর্থ খরচ করে ভারত রয়েছে ছয় নম্বরে। আগের বছরের চেয়ে ভারতের ব্যয় ০ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
তবে গত বছরের চেয়ে বেশি ব্যয় করলেও সামরিক ব্যয়ের তালিকায় শীর্ষ ১৫-এর মধ্যে নেই পাকিস্তানের নাম। ২০১৫ সালে ৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে পাকিস্তান। দেশটি আগের বছর খরচ ৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
সিপ্রি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে প্রতিরক্ষা বাজেট বেড়েছে ১ শতাংশ। গত বছর সামরিক খাতে মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার কোটি ডলার। যা বিশ্বের মোট জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
গত বছর প্রতিরক্ষা খাতে যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে। এ সময় মার্কিন প্রতিরক্ষা খাতে মোট ব্যয় হয়েছে ৫৯ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। ২০১৪ সালের তুলনায় অবশ্য এ ব্যয় ২ দশমিক ৪ শতাংশ কম।
গত বছর চীনের সামরিক ব্যয় ৭ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ২১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে দেশটির উচ্চাভিলাষী কার্যক্রমের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অস্ত্র বাণিজ্য অনেকটা বেড়েছে।
উদ্বেগ রয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি নিয়েও। ক্রিমিয়া আক্রমণ ও পূর্বাঞ্চলীয় ইউক্রেনে সহিংসতার পর থেকেই নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) আওতাভুক্ত এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে রাশিয়া। এ কারণে পূর্ব ইউরোপে সামরিক ব্যয় আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অবশ্য আর্থিক সংকটের কারণে সামরিক খাতে ব্যয়ের তালিকায় শীর্ষে থাকা কয়েকটি দেশের প্রতিরক্ষা বাজেট কিছুটা সংকুচিত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানি। নভেম্বরের প্যারিস হামলা ও ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে জোরদার অভিযানের কারণে চলতি বছর এসব দেশের সামরিক ব্যয় বেড়েছে বটে, তবে তা খুব সামান্যই।
জ্বালানির দরপতনের কারণে রাশিয়ার অর্থনীতি এখন অনেকটাই বিপর্যস্ত। এর প্রভাবে গত বছর সামরিক ব্যয়ের বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে দেশটি চতুর্থ স্থানে নেমে গেছে। এ সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাজেটে ব্যয় কমেছে ৮ শতাংশ।
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারের লক্ষ্যে ভারত চলতি বছর বিএই সিস্টেমস, বোয়িং, লকহিড মার্টিন ও সাবসহ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে। গত বছর দেশটি প্রতিরক্ষা ব্যয়ের তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে ছিল।
তালিকার পঞ্চম অবস্থানটি ব্রিটেনের দখলে ছিল। আইএইচএস জেন’সের বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা বাবদ ব্যয় ১৩ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৭০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। এর মাধ্যমে দেশটি তালিকার চতুর্থ স্থানে উঠে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।