নড়াইলে স্থানীয় দলে ব্যাটিং করতেন চার নম্বরে। বলে গতি অতটা ছিল না। তবে একই জায়গায় টানা বল ফেলতে পারতেন। হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করেন বলে গতি বেড়ে গেছে। মাশরাফী তখন ক্লাস নাইনের ছাত্র। এখন তিনি বুঝতে পারেন সেটি ছিল বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক পরিবর্তনের প্রভাব। সেখান থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে গতির ঝড় তুলে পেয়েছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ তকমা। বার বার হাঁটুর ইনজুরি, অস্ত্রোপচার আর পুনর্বাসনের ধকলে আগের গতি হারিয়েছেন সেই কবে। তবে কিশোর বয়সেই এক জায়গায় বল করার যে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন সেটি এখনও মাশরাফীর সঞ্জীবনী শক্তি। আর বৈচিত্র্য হিসেবে পরবর্তীতে যোগ করেন অফকাটার।
বুধবার মিরপুরের একাডেমি ভবনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে লম্বা আড্ডা দিতে দিতে এসব কথা জানান মাশরাফী। পরে আনুষ্ঠানিকভাবেও পেস বোলিং এবং ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে কথা বলেন।
আড্ডার সময় বলছিলেন স্পট বোলিং নিয়ে। একজন পেসারের সাফল্যের জন্য এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
মাশরাফী: ওয়াকার ইউনুসের একটা সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম তিনি ইমরান খানের কাছে গিয়েছিলেন সুইং শিখতে। ওয়াকার প্রথম অবস্থায় অনেক জোরে বল করত। তখন ইমরান তাকে অনেক রাগারাগি করে বলেছিলেন, এইটা তোমার কাজ না। তোমাকে আমি টিমে নিয়েছি জোরে বল করার পাশাপাশি তোমার যে জায়গা, সেখানে বল করতে। একটা পর্যায়ে দেখবা সুইং শিখতে তোমার ইমরানের কাছে আসতে হবে না। আপনা আপনি শিখে গেছ। একটা পর্যায়ে ওয়াকারই পুরো বিশ্ব শাসন করেছে। এটাই বিষয়। আপনি যখন বোলার হিসেবে আসবেন প্রথমেই আপনাকে স্পট ঠিক করতে হবে। বাকি ব্যাপারগুলো আপনা আপনি ঠিক হয়ে যাবে।
আপনার সাফল্যের রহস্য কী?
মাশরাফী: আমার ক্ষেত্রেও এটাই হয়েছে। আমি যখন ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট খেলা শুরু করি তখন আমি সবসময় জায়গায় বল করতে চাইতাম, পেস ওরকম ছিল না। এটাই এখনও আমার সঙ্গী। আমার শক্তি বলতে যদি কিছু বলেন একটাই-আমি একটা জায়গায় বল করতে চাই। একটা জায়গার বাইরে আমি কিছু করতে চাই না। যদি ভেরিয়েশন কিছু করি সেটাও ওই জায়গার ভেতরে। এরপর ভাল খারাপ অন্য জিনিস। কিন্তু একজন বোলারের জন্য জায়গাটা মেইনটেইন করা গুরুত্বপূর্ণ।
কাটার শিখতে শুরু করেছেন কবে থেকে?
মাশরাফী: কাটার আমি ২০০৫ থেকে শিখেছি এবং তখন থেকেই ওটা আমার শক্তি। মোস্তাফিজ কাটার করার পর ওরটা বেশি আলোচনায় এসেছে। কারণ ওর কাটার সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইমপ্রোভাইস করা শিখেছি যখন আমি দেখেছি আমার জায়গা ঠিক আছে। যখন ইনজুরি আসছে তখন আবার ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হয়েছে। টিকে থাকতে নতুন কিছু শিখতে হয়েছে।
কালকের ম্যাচের ৬ উইকেট, কোথায় রাখবেন?
মাশরাফী: এইগুলো আমাকে টাচ করে না। আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলে ভিন্ন কথা ছিল।
চার বলে চার উইকেট। এমন কীর্তি আপনিসহ মাত্র আটজনের আছে…
মাশরাফী: এটা শোনার পরে অবশ্যই ভাল লেগেছে। যে কোন ম্যাচই খেলেন আপনি যদি ৫ উইকেট পান, তিন উইকেট পান ওই অনুভূতি অবশ্যই আছে। কিন্তু আলাদা করে বলার মত কিছু না। তবে একটা ভয় বারবারই লাগছিলো ম্যাচ হেরে যাচ্ছিলাম। আর পরপর দুই ম্যাচ হারলে পিছিয়ে যেতাম। যে কোয়ালিটির টিম আবাহনী, হারলে খারাপ হত। তো ওই অনুভূতিটা বেশি ভাল ছিল যে হারের জায়গা থেকেও ম্যাচটা জিততে পেরেছি।
আপনার অমন বোলিং তরুণ পেসারদের প্রতি বার্তা কিনা?
মাশরাফী: দেখেন আমি কাউকে বার্তা দিতে চাই না। যতই সিনিয়র হই, আমি খেলোয়াড়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং ভাল খেলার ব্যাপার আছে। অধিনায়কত্বের বাইরেও এই জায়গাগুলো ঠিক রাখি। বার্তা দেওয়ার কিছু নেই। আপনি যদি আমার কাছ থেকে কিছু শিখতে চান সেটা আপনার ব্যাপার। আমি কোচ না এরপরও যদি কেউ আমার কাছ থেকে কোন সহযোগিতা চায় আমি প্রস্তুত আছি।
লিগে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি সেরা পাঁচের মধ্যে চারজনই পেসার..
মাশরাফী: এবারের উইকেট স্পোর্টিং হওয়াতে পেসাররা সুবিধা পাচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাটসম্যানরাও রান পাচ্ছে। যে পেসাররা এফোর্ট দিবে উইকেট বের করে আনতে পারবে। আবার এদিক-ওদিক বল করলে মারও খাবে।
৮ ম্যাচে ২৫ উইকেট আপনার। লিগ শেষে নামের পাশে কত উইকেট দেখতে চান?
মাশরাফী: আমি কোনদিন কোন লক্ষ্য সেট করিনি। পারফরম্যান্স হিসেব করি শুধুই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। অন্যান্য জায়গায় শুধুই মেনটেইন করি।
দেশের শীর্ষ ক্লাব আবাহনীতে খেলছেন। আলাদা কোন অনুভূতি কাজ করে কী না?
মাশরাফী: আগে আবাহনীতে খেলে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। আবাহনীতে অনেক আগেই খেলেছি, বিমানে খেলেছি। এমনকি ইন্দিরা রোড ক্লাবেও খেলেছি। আমিই একমাত্র খেলোয়াড় ঢাকা লিগের বেশিরভাগ টিমে খেলেছি। বড় টিমে খেলার মজা আলাদা। ওই রকম প্রত্যাশা থাকে যে আপনাকে পারফর্ম করতে হবে। ম্যানেজমেন্ট থেকে একটা চাপ থাকে, এবং ম্যাচ হেরে গেলে তারা এটা নিয়ে ভাবে। এই চাপটা থাকা জরুরি এবং সেটা বড় ক্লাবেই থাকে। এটা থাকলে খেলোয়াড়দের উন্নতিতে কাজে আসে।