চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সাততলা বস্তিতেই কেন বারবার আগুন?

মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে আবারও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো রাজধানীর মহাখালী এলাকার সুপরিচিত বস্তি সাততলা বস্তিতে। সোমবার গভীর রাতে লাগা আগুন কয়েক ঘণ্টার অবিরাম চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ১৮টি ইউনিট। তবে ক্ষতি যা হওয়ার ওই সময়ের মধ্যেই হয়ে যায়। নিশ্চিত করে বলা না হলেও শতাধিক ঘরসহ অনেক কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন বহু মানুষ।

আমরা জানি, গত বছরের নভেম্বরে শেষ দফা আগুন লাগার আগেও ২০১২, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে কয়েকবার পুড়েছে সাততলা বস্তি। অদ্ভুতভাবে প্রতিবারই আগুন লেগেছে ঠিক গভীর রাতে। পরে দেখা গেছে তা যেন একই নাটকের অভিন্ন মঞ্চায়ন। আরেকটি ক্ষেত্রেও চমৎকার মিল পাওয়া গেছে, তা হলো তাৎক্ষণিক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং যথারীতি সেই কমিটির প্রতিবেদন কোনোদিনও আলোর মুখ দেখতে না দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা। আর জড়িত বা দোষী ব্যক্তিদের তো খুঁজেই পাওয়া যায় না, সেসব তদন্ত প্রতিবেদনে!

অথচ এই অগ্নিকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ধারাবাহিক প্রতিবেদনগুলোতে উঠে আসে ‘প্রকৃত সত্য’। সেখান থেকে জানা যায়, মূলত বস্তির নিয়ন্ত্রণ নিতেই বেশির ভাগক্ষেত্রে বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। যদিও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার এই পদ্ধতি নতুন নয়, বহু পুরানো। নতুন হিসাব-নিকাশ মেলাতে কোনো একটি পক্ষ যখনই চায়, তখনই সেই নির্দিষ্ট বস্তিতে অদৃশ্য জাদু-মন্ত্রে আগুন লেগে যায়। এমন সত্য আমরা অনেকেই জানি, অথচ কখনও কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখি না।

আমরা বলছি না- এই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিংবা দুর্ঘটনাবশত লেগেছে। সেটা তদন্তের পরই জানা যাবে। সমস্যাটা হলো, সেই তদন্ত প্রতিবেদন থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষ কিছু জানতে পারে না। আর জানতে পারে না বলেই নানা ধরনের সন্দেহ, অনুমান আর ভ্রান্ত ধারণা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এটা ঠিক, রাজধানীর প্রতিটি বস্তিতেই অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে। আর তা কারোর কাছেই অজানা নয়। সেসব অনিরাপদ সংযোগ থেকেও কখনও কখনও আগুন লেগেও থাকে। যাই ঘটুক না কেন শেষ পর্যন্ত সত্যটা প্রকাশ্যে আসে না।

তাহলে কি এই নির্মম নিয়তিকে মেনে নিয়েছে সাততলা বস্তিবাসী? বস্তির নিয়ন্ত্রকরা যখন ইচ্ছা, তাদের কপাল পোড়াবে; আর তারা কয়েকদিন চোখের পানি ফেলে আবার নতুন করে গড়বে তাদের স্বপ্ন! অন্যদিকে ঘটনার আড়ালেই থেকে যাবে আসল ঘটনা?

আমরা মনে করি, একই বস্তিতে বারবার আগুন লাগা স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। এর পেছনে যে কারণই থাকুক না কেন; তা তদন্ত করে প্রকাশ্যে আনা প্রয়োজন। তাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হবে।