দেখতে দেখতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার এক দশক পূর্ণ হচ্ছে। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ওই সাংবাদিক দম্পতি নিজ ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। যেহেতু হত্যাকাণ্ডের দিনটি বছর ঘুরে এসেছে, তাই আবারও আলোচনায় চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটি।
এক দশকেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রতিবেদন দাখিলে বারবার সময় নেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। তবে ধার্য তারিখে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা। পরে বিচারক ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নতুন তারিখ নির্ধারণ করে দেন। এ নিয়ে ৮৫ বার পেছাল আলোচিত মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন।
বারবার এভাবে সময়ক্ষেপণের বিষয়টি সাগর-রুনি পরিবারসহ সবার জন্য খুবই কষ্টকর! সব মামলার তদন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হয় না, তবে র্যাব আন্তরিকতা ও গুরুত্বসহ সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে বলে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে এত দীর্ঘবছরের অপেক্ষায় মামলার আলামত নষ্ট হওয়া, সাক্ষী বিষয়ক জটিলতাসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যা খুবই নেতিবাচক।
সাগর-রুনি দম্পতির একমাত্র ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর বয়সে মা-বাবাকে হারিয়েছিল। সে তার নানীকে ‘মা’ ডাকতো বাবা-মায়ের অভাব পূরণে। কিছুদিন আগে সেই নানীও মৃত্যুবরণ করেছেন। সাগর-রুনির খুনী কারা এটা শেষ পর্যন্ত দেখে যেতে পারলেন না মেঘের নানী। দেখা হলো না সদ্য কৈশোরে পা রাখা নাতির ঘুরে দাঁড়ানো ভবিষ্যৎ। আর হত্যা মামলার বিচার তো বহু দূরের পথ।
দেশে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা একটি বড় সমস্যা। সময়ক্ষেপণের ফলে ভূক্তভোগীদের পরিবার যেমন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়, তেমনি সময়ের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় অপরাধীরা। মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে দ্রুত সময়ে অভিযোগ গঠন, বিচারিক কার্যক্রম ও মামলার রায় প্রদানের উপায় বের করতে হবে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার হোক, এটা আমাদের প্রত্যাশা। আর দেশে শুধু আইনের শাসন নয়, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সুশাসন প্রতিষ্ঠা সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।