কোনো রকম অগ্রগতি ছাড়াই আরেকটি বছর চলে গেলো। কিন্তু সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্যই ভেদ করতে পারলো না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। দেশজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দেওয়া এই ঘটনায় করা মামলা গত সাত বছর ধরে শুধুই একটি তদন্ত সংস্থা থেকে আরেকটি তদন্ত সংস্থায় ঘুরেছে। তবে ফলাফল শূন্য।
আমরা দেখছি, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সেই ঘটনার পর থেকে অনেক মন্ত্রী অসংখ্যবার আশ্বাস দিয়েছেন – কিন্তু তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। এমনকি ঘটনার সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনও বলেছিলেন; ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করবেন। শেষ পর্যন্ত একটি নয়, দুটি নয়; সাত বছর পেরিয়ে গেলো।
এমন পরিস্থিতিতে সাগর-রুনির পরিবার, স্বজন, সহকার্মীদের প্রশ্ন আগামী সাত বছর বা ৭০ বছর অথবা ৭’শ বছরেও এই হত্যার কিনারা খুঁজে পাবে তদন্ত কর্মকর্তারা? আদৌ কি জানা যাবে – এই জঘন্য ঘটনায় অংশ নিয়েছিল কারা? কারাই বা ছিল পরিকল্পনাকারী? আর কেনই বা তাদের শিকার হতে হয়েছিল সাগর-রুনিকে?
আমরা দেখছি, গত কয়েক বছর ধরে শুধুমাত্র সাগর-রুনির মৃত্যুর দিনে কিছু সাংবাদিক যেনতেন একটি কর্মসূচি পালন করেই দায়িত্ব শেষ করেন। সারা বছরে আর কোনো উদ্যোগ নেই। নেই কঠিন কোনো কর্মসূচি। অথচ তদন্ত সংস্থা বা সংশ্লিষ্টদের ওপর চাপ তৈরি করার যথেষ্ঠ সুযোগ সাংবাদিক সমাজের ছিল। কিন্তু সাংবাদিক নেতাদের দলীয় লেজুড়বৃত্তি আর পদলেহনের কারণে তা ব্যর্থ হয়েছে।
সোমবার এই হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পূর্তিতে সাংবাদিক নেতারা গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সাথে দেখা করতে। মন্ত্রী বলেছেন, ‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে সরকার আন্তরিক। আমরা প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর রাখছি। আশা রাখি দ্রুতই এর একটা সমাধানে পৌঁছতে পারবো। খুনিরা ধরা পরবে।’
তবে দীর্ঘ সময়েও এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও বিব্রতবোধ করেন। এটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু শুধু বিব্রতবোধ না করে তদন্ত কর্মকর্তাদেরকে শক্তভাবে নির্দেশ দিন, খুনিদের ধরতে।
আমরা জানি, এরই মধ্যে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে গত সাত বছরে ৬৩ বার সময় নিয়েছে নিজেদের এলিট ফোর্স দাবি করা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। কিন্তু প্রতিবারই তারা ব্যর্থ হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতেও যে তারা সফল হবে, সেই সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
তার মানে কি দাঁড়াচ্ছে এই হত্যার কোনো বিচার হবে না? নিহতদের পরিবার, স্বজন বা সহকর্মীদের অনেকে কিন্তু তাই মনে করছেন। সাগর সওয়ারের মা সালেহা খানম তো বলেই দিয়েছেন, ‘রাষ্ট্র যদি না চায় তাহলে তো কারও বের করার ক্ষমতা নেই। সরকারের যদি সদিচ্ছা না থাকে তাহলে আর কী।’ (সূত্র দৈনিক প্রথম আলোক)
তাহলে রাষ্ট্রৈই কি চাচ্ছে না, এই রহস্য উদঘাটন হোক? আমরা মনে করি, অনেক দেরি হয়ে গেছে, আর নয়। যতটা সম্ভবম দ্রুততার সাথে নৃশংস এই হত্যার তদন্ত শেষ করে দোষীদের বিচার করতে হবে।