বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাবেক সভাপতি সৈয়দ আখতারুজ্জামান সিদ্দিকী লাবলু, যিনি সারাজীবন ব্যয় করেছেন সাংবাদিকদের কল্যাণে। তার অকালে চলে যাওয়া যেন কিছুতেই মানতে পারছেন না সহকর্মীরা।
সকলের মানসপটে লাবলুকে নিয়ে শত-সহস্ত্র স্মৃতির ভিড়। তার সঙ্গে ফেলে আসা অতীত হাতড়ে বেড়াচ্ছেন তার সঙ্গীরা।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় সাংবাদিক লাবলুর স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তার রেখে যাওয়া কর্মের বর্ণনা দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন অনেকেই।
তারা বলেছেন, লাবলুর চলে যাওয়া সাংবাদিকতার জগতে অপূরণীয় ক্ষতি। একইভাবে তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে নানা উদ্যোগের কথাও উঠে আসে স্মরণ সভার আলোচনায়।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি ইলিয়াস হোসেন বলেন, কোনদিন কোথাও লাবলু ভাইয়ের বিষয়ে একটা নেতিবাচক কথা শুনিনি। সহজ-সরলভাবে সবার সঙ্গে কিভাবে মেশা যায়, তিনি তা শিখিয়ে গেছেন।
সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, কোন বিপদগ্রস্থ সাংবাদিক লাবলুর কাছে গিয়েছে, কিন্তু সহায়তা পায়নি, এমন ঘটনা নেই। লাবলুর সাংগঠনিক দক্ষতা ও কর্মকাণ্ড সবাইকে বিমোহিত করতো। লাবলুর চলে যাওয়া সাংবাদিক সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি।
ক্র্যাবের সাবেক নেতা খায়রুজ্জামান কামাল বলেন, ক্র্যাবের সঙ্গে লাবলুর জীবন জড়িত। যতোদিন ক্র্যাব থাকবে ততোদিন লাবলুর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
সাংবাদিক মধুসুধন মন্ডল বলেন, যেদিন লাবলু মারা গেছেন, সেই দিনটিকে নির্ধারণ করার দাবি করছি। যেন ওই দিন আমরা সকল বন্ধুদের চলে যাওয়া স্মরণ করতে পারি। দ্বিতীয়ত লাবলুর স্মরণে একটা স্মরণ সংখ্যা প্রকাশ করা যেতে পারে। তৃতীয়ত, ক্র্যাবের কল্যাণ তহবিল গঠন করা যেতে পারে, যেন ভবিষ্যতে কারো বিপদে আমরা তার পাশে থাকতে পারি।
লাবলুর সহধর্মিণী এরিনা সুলতানা শিল্পী বলেন, লাবলুর অসুস্থতার সময় সবাই যেভাবে সহায়তা করেছেন এতে সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সে সবসময় সংগঠন পাগল ছিলো। সে দুই হাতে মানুষকে দিতো, কখনো কখনো আমিও জানতাম না। এটা ছিল তার স্বভাব।
তার এই সংগঠনের সকল কাজে আমিও অংশগ্রহণ করেছি। এতে সংগঠনটি আমার আপন হয়ে গেছে। বাকিটা জীবন আমি আপনাদের সঙ্গে থাকতে চাই, আপনাদের মধ্যেই তার স্মৃতি খুঁজতে চাই।
লাবলুর ছোটভাই আবাদুজ্জামান শিমুল বলেন, আমার সারাজীবন সকল দাবি লাবলু ভাইয়ের কাছে ছিলো। যখন যা চাইতাম তিনি পূরণ করতেন। শুধু আমার না, আমার পরিবারেরও সকল দাবি এই ভাইয়ের কাছে ছিলো। ভাইয়ের অসুস্থতার সময় সকলে পাশে থাকার জন্য আমার পরিবার আপনাদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।
ক্র্যাবের সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, লাবলুর স্মৃতি ধরে রাখতে ক্র্যাবের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় তার সবই করা হবে। যে সকল প্রস্তাবগুলো এসেছে তার সবগুলো অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে।
ক্র্যাবের নবনির্মিত ভবনের হলরুমের নাম ‘সৈয়দ আখতারুজ্জামান সিদ্দিকী লাবলু স্মৃতি হল’ করা এবং প্রতিবছর লাবলুর নামে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার চালুর দাবি জানান ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার। বিষয়গুলো নিয়ে পরবর্তী বৈঠকে আলোচনার কথাও জানান তিনি।
দীপু সারোয়ারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন, ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুকুর আলী শুভ, ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি সালেহ আকন ও সাধারন সম্পাদক সরওয়ার আলম।
গত সোমবার রাত দশটার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সৈয়দ আখতারুজ্জামান সিদ্দিকী লাবলু। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। আখতারুজ্জামান লাবলু দীর্ঘদিন ধরে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন।
আখতারুজ্জামান লাবলু ২০০৪ সালে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে ভোরের কাগজে যোগ দেন। এরপর প্রধান অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব নেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ পদেই ছিলেন তিনি।
লাবলু ৮০’র দশকের শেষ দিকে কৃষাণ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতায় শুরু করেন। এরপর দৈনিক সমাচার ও অনলাইন পোর্টাল বিএনএস (বাংলাদেশ নিউজ সার্ভিস)-এ কাজ করেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। এরপর একই পদে ২০১০, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৬ সালে মোট ৬ বার সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন।